সফল উদ্যোগের সফলতা ধরে রাখাই সময়ের দাবী
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর আধীন স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে গত ১৪/০২/১৬ ইং, ২৫/০৫/১৬ ইং, ১৭/০৭/১৬ ইং তারিখে জারীকৃত পত্রের মাধ্যমে উক্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপজেলা পরিষদে কে ই-জিপি তে অন্তর্ভূক্ত করে ১০০% দরপত্র আহবান করার জন্য এবং তার অগ্রগতি জানানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে কিছু মতামত তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি।
বর্তমান সরকার গত ২০১১ ইং তারিখে উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং সরকারী অর্থ ব্যয়ে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-টেণ্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম টি সরকারী দপ্তরগুলো তে ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে এবং এর মাধ্যমে দিন দিন দরপত্র আহবানের পরিমানও উল্লখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ২০,০০০ এর অধিক ঠিকাদার ই-জিপি এর মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহন করছেন।
প্রথমেই, ই-জিপি তে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সরকারি দপ্তরসমূহে এর সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলাদা নজর দেয়া প্রয়োজন। ই-জিপি একেবারেই নতুন একটি বিষয় যার সাথে change management approach অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ। এখন, সরকারের অন্যান্য দপ্তরের কার্যক্রম এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে হিসেবে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত দপ্তরসমূহের কার্যক্রমের মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দপ্তর সমূহ তাদের দাপ্তরিক কাজের জন্য তাদের কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও মনিটরিং হয়। এক্ষেত্রে, উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রিত ও মনিটরিং বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে হয়ে থাকে।
এ অবস্থায়, উপজেলা পরিষদে কিভাবে ই-জিপি বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছাড়াই অগ্রগতি জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন উপজেলা পরিষদের অফিসার বৃন্দ বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ তাদের করণীয় বুঝতে পারছেন না। এখন অনেক ক্ষেত্রে-ই উপজেলা চেয়ারম্যান বা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। সমস্যা হল, কেউ বিষয়টির ভিতরে প্রবেশ করছে না।
এ কথা অনস্বীকার্য যে উপজেলা পরিষদে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র উপজেলা প্রকৌশল অফিসে ই-জিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর এজন্য-ই সবাই এ কাজে উপজেলা প্রকৌশলীদের একটি leadership ভূমিকা আশা করছে।
এখন, ই-জিপি তে পুরোপুরি ঝাপিয়ে পড়ার আগে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন তা দেখা যেতে পারে। যারা ই-টেন্ডারে ইতোমধ্যেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাদের জন্য বুঝতে সহজ হবে আশা করি –
১। উপজেলা পরিষদের জন্য Organization Admin কে হবে ?
২। উপজেলা পরিষদের আওতায় মোট ১৭টি দপ্তর আছে। একটি দপ্তরে ৪ জন করে user থাকলে মোট ৭০/৭৫ টি ই-মেইল আইডি প্রয়োজন হবে। এগুলা কোথায় পাওয়া যাবে ? ICT ডভিশন বা বিসিসি থেকে দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে তা সবার পেতে সময় লাগবে,
৩। এই ই-মেইল গুলার পাসওয়ার্ড কে ব্যবস্থাপনা করবে ?
৪। প্রতিটি উপজেলা পরিষদের প্রায় ৭০/৭৫ জন ব্যবহারকারী হিসেবে প্রায় ৩৬,০০০ এর অধিক ব্যবহারকারীর ই-জিপি তে প্রশিক্ষণ কিভাবে সম্পন্ন হবে ? শুধু প্রশিক্ষণ দিয়ে ছেড়ে দিলেই হবে না। সবাইকে সবসময় ফলো আপ করতে হবে,
৫। Organization Admin এর আওতায় যে পরিমান কাজ জমা হবে, এগুলা শুধু একটি নির্দেশনা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বললে এক সময় তা অকার্যকর হয়ে পড়বে,
৬। জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনা কেমন হবে ?
৭। সর্বপরি, এ কাজটি সূষ্ঠুভাবে ও নির্ভিঘ্নে করার জন্য একটি প্রফেশনার এবং নিবেদিত প্রাণ কর্মীবাহিনী প্রয়োজন যাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। বুঝতে হবে, এখানে reluctant হবার কোন সুযোগ নেই।
উপজেলা পরিষদের জন্য ই-জিপি বাস্তবায়ন এখনো virgin অবস্থায় আছে। এখন-ই এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ৪৯১ টি উপজেলা পরিষদের জন্য একটি মাত্র সতন্ত্র e-GP Management Unit গঠন করা যেতে পারে। এ কাজে এলজিইডি কে Piloting করার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এলজিইডি কিছু কিছু পৌরসভার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই কাজটি এখন-ই খুব ভালভাবেই করছে। এছাড়া, এলজিইডি তাদের নিজেদের ৭৬৪ টি অফিস ই-জিপি তে সূষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করছে। ই-জিপি বাস্তবায়নে তাদেরর ভূমিকা নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে অগ্রগন্য। এলজিইডির উপজেলা পরিষদে সবচেয়ে বড় সেট আপ আছে এবং এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে কাজ করার সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা বিদ্যমান। পরিষদের প্রয়োজন অনুযায়ী সবচেয়ে দ্রূত ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা সবসময় প্রমানিত।
উপরোক্ত বিষয়গুলো সমাধান না করে তড়িঘড়ি করে ই-জিপির মত একটিই সূদূর প্রসারী বিষয়কে সাময়িক ভাবে শুরু করলে তা শুধু Progress Report এর সোন্দর্য্য বর্ধনের জন্য খুবই একটি ভাল উদ্যোগ হয়ে থাকবে।
এখন, এভাবে ই-জিপি বাস্তবায়নের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সফল হবে কি না তার উত্তর ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকল।