গেম থিওরি (Game Theory) কে বাংলায় বলা যায় ক্রীড়াতত্ত্ব।
গেম থিওরি হল কৌশলগত মিথস্ক্রিয়ার এক গাণিতিক মডেল। এটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিজ্ঞান।
গেম থিওরি আমাদের শেখায় কিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়। গেম থিওরির মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে এমন কৌশল খুঁজে বের করা যা সম্ভাব্য সেরা ফলাফল নিশ্চিত করে।
গেম থিওরির ৩টি মূল উপাদান (basic elements) হলো:
- Players (অংশগ্রহণকারী পক্ষ): The set of participants in the game
- Actions (কৌশল): The moves each player can make
- Payoffs (পরিশোধ): The scores each player earns at the end of the game
গেম থিওরি এমন দুটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা দুজন খেলোয়াড় বা প্রতিযোগী নিয়ে আলোচনা করে, যারা সমমানের দুটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মুনাফা বা জয় লাভ করতে চায়। যে কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিপরীত চিন্তার প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি একটা সূক্ষ্ম লুপে আটকে পড়ে একে অপরের মাঝে নেগোশিয়েশন করতে বাধ্য হয়; উভয়কেই পরস্পরের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হতে হয়। এই মনস্তাত্ত্বিক আচরণ বিশ্লেষণের মডেলই হচ্ছে গেম থিওরি।
এই যে চারপাশে এতো এতো গেম (খেলা) চলছে তার সব কিছুই গেম থিউরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কি মনে হয় ?
গেম থিওরির ইতিহাস
গেম থিওরির ইতিহাস Probability এর ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
The history of game theory is closely
related to that of probability.
The theory of probability তত্ত্বটি মূলত গড়েই উঠেছিল জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে জুয়া খেলায় ব্যবহৃত ডাইস (dice – গুটি) এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
১৯৫০ সালে RAND (Research And Development) যা যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সেখানে কাজ করার সময় মেরিল ফ্লাড এবং মেলভিন ড্রেশার সর্বপ্রথম এই তত্ত্বের মূলনীতিটি প্রস্তাব দেন। গেম থিওরির তত্ত্বে তারা দেখিয়েছেন কিভাবে যুক্তিসম্মত চিন্তাকারী ব্যক্তিও নিজের লাভের মায়াজাল ত্যাগ করে থাকে।
পরবর্তিতে গণিতবিদ জন ন্যাশ এবং ভন নিউম্যান এই গেম থিওরিত তত্ত্বকে আরও উন্নত করেন।
‘আলবার্ট টাকার’ বিষয়টিকে দুইজন কারাবন্দী ব্যক্তির দৃশ্যকল্পে তুলে ধরেছেন এবং নাম দিয়েছেন ‘দ্য প্রিজনার’স ডিলেমা’ বা ‘কারাবন্দীদের উভয়সঙ্কট’। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এভাবে গেম তত্ত্বটি ১৯৫০-এর দশকে ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় এবং ১৯৭০-এর দশকে বিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রমাণ সহকারে প্রয়োগ করা হয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৫ জন গেম থিওরিস্ট অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, যার মধ্যে সম্প্রতি পল মিলগ্রম এবং রবার্ট বি উইলসন রয়েছে।
এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুনঃ শেষ পর্যন্ত “নিলামে উঠল” অর্থনীতিতে ২০২০ সালের নোবেল পুরষ্কার
গেম থিওরির মডেল
গেম থিওরিকে সহজে বুঝতে হলে এর জনপ্রিয় ২টি মডেল অবশ্যই বুঝতে হবে। চিন্তার জগতে একটা নাড়াচাড়া হবে।
এর সাথে সাথে এই ২টি মডেলের আলোকে বিভিন্ন ধরনের গেম সম্পর্কেও ধারণা থাকলে পুরো বিষয়টার কৌশলগুলো ধরতে সহজ হবে।
গেম থিওরি’র জনপ্রিয় মডেল এবং বিভিন্ন ধরণের গেম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
গেম থিওরি কোথায় ব্যবহৃত হয় ?
মূলত গণিত ও অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এই তত্ত্বটি প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠান, বাজার কাঠামী এবং ভোক্তাদের আচরণ সহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক আচরণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে অর্থনীতি ছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক আচরণ বোঝা সহ সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যা, ব্যবসা, রাজনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও গেম থিওরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিযোগিতামূলক বাজার, যুদ্ধ কৌশল, নিলাম বা দরপত্র, এমনকি খেলাধুলায়ও এর প্রয়োগ দেখা যায়।
আরও দেখুনঃ পাবলিক প্রকিউরমেন্টে গেম থিউরি এর ভূমিকা ও প্রয়োগ।
পরিশেষ
গেম থিওরি আমাদের শেখায় যে ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা কখনো কখনো সামগ্রিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। এটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অংশগ্রহণকারীদের কৌশলগত চিন্তা উন্নত করতে সাহায্য করে।
এটি মূলত আমাদের যুক্তিসংগত চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা জীবনে অনেকসময় নিজেদের অজান্তেই এরকম গেইমের ধাঁধাঁয় জড়িয়ে যাই। সেই খেলায় জিততে হলে আমাদের অবশ্যই গেম থিওরি প্রয়োগ করতে হবে। আসলেই কি তাই ?
আরও দেখুনঃ গেইম থিউরির আলোকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক।
আরও দেখুনঃ তিস্তার পানি বন্টন সমস্যা সমাধানে গেম থিউরি’র প্রয়োগ