Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

“ক্যাচ-২২ (Catch-22)” কি ?

Facebook
Twitter
LinkedIn

আপনি জীবনে কতগুলি ক্যাচ ধরেছেন বা আদৌ কিছু ধরেছেন কিনা বা ধরার পর সহজ ক্যাচটাও ফেলে দিয়ে ক্যাচ মিস করেছেন কিনা সেটা কোন বিষয় না, তবে “ক্যাচ-২২” যে কোন না কোন সময় আপনাকে ধরেছে বা হয়তো এখনও ধরে আছে তা নিশ্চিতই বলা যায়।

“ক্যাচ-২২ (Catch-22)” কি ?

একটি বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি বা পরস্পর বিরোধী (conflicting) অবস্থা বোঝাতে এই ক্যাচ-২২ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত একটি প্যারাডক্স বা দ্বিধা। ক্যাচ-২২ পরিস্থিতিতে পরলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়, কিন্তু পরস্পরবিরোধী নিয়ম বা সীমাবদ্ধতার কারণে আবার সিদ্ধান্ত না নিয়েও পারা যায় না।

এই ক্যাচ-২২ এর একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হচ্ছে …… …… একটি চাকরী পাওয়ার জন্য কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কিন্তু সেই কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আগে একটি চাকরি পেতে হবে … … … ক্যাচ-২২ পরিস্থিত। অর্থাৎ আপনার অভিজ্ঞতা না থাকার দরুণ যদি আপনি চাকরিই না পান, তাহলে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন কিভাবে ? পরস্পর বিরোধী অবস্থা। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই।

কাজেই, বিপরীতধর্মী নিয়মনীতি ও সীমাবদ্ধতার জন্যে কারও পক্ষে ক্যাচ-২২ এড়ানো সম্ভন নয় (Mutually dependent circumstances)। বাস্তবতা স্বীকার করতেই হবে।

“ক্যাচ-২২” শব্দটির উৎপত্তি

আমেরিকান ঔপন্যাসিক জোসেফ হেলার (Joseph Heller) এ শব্দটি প্রথম তার ১৯৬১-এর উপন্যাস “ক্যাচ-২২”-তে ব্যবহার করেন। “ক্যাচ-২২” মূলতঃ যুদ্ধ, ব্যুরোক্রেসি, মানবিক অবস্থার জটিলতা নিয়ে রচিত একটি বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী, নাটকীয় ও কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসের গল্প নিয়ে সিনেমাও আছে যা ১৯৭০ সালে নির্মিত হয়। বইটির শিরোনাম এমন একটি পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে যেখানে আপনি যা-ই পছন্দ করুন না কেন ফলাফল খারাপ হবে।

উপন্যাসটিতে লেখক দেখিয়েছেন “ক্যাচ-২২” পরিস্থিতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন নিয়মনীতি বা প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভব হয়, যেখানে ব্যক্তিবিশেষ ভুক্তভোগী কিন্তু বিষয়টির উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ নিয়মটির সাথে লড়াই করার মানেই হচ্ছে নিয়মটি মেনে নেয়া।

এই শব্দ-যুগলে ২২ সংখ্যাটির আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই। শ্রুতিমধুরতাই ছিলো সংখ্যাটি ব্যবহারের মূল কারণ। উপন্যাসের শিরোনামটি প্রথমে ছিলো ক্যাচ-১৮। কিন্তু প্রায় কাছাকাছি সময়ে মিলা-১৮ (Mila 18) নামে অন্য একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। তারপর ক্যাচ-১৮ বাদ দিয়ে ক্যাচ-১১ রাখার চিন্তা করা হয়। তখন আবার ওশিনস-১১ (Ocean’s 11) সিনেমার কারনে এই নামও বাদ দিতে হয়। এরপর Stalag 17 সিনেমার জন্য ১৭ কে-ও বাদ দেয়া হয়। ক্যাচ-১৪ নামে চিন্তা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৪ শব্দ টা ঠিক কানে বাজতেছিল না। অনেক কাঠখর পোড়ানোর পর লেখক ও তার প্রকাশক শেষ পর্যন্ত এই ২২ সংখ্যাটিতেই এসে ঠেকলেন (catchiest choice)। এই “ক্যাচ-২২” শব্দ ২টি কালক্রমে এতো জনপ্রিয় হয়েছে যে তা এখন ইংরেজি ভাষার ১টি আলাদা অর্থবোধক শব্দ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

“ক্যাচ-২২” উপন্যাসের “ক্যাচ-২২”

উপন্যাসে মূল চরিত্র হচ্ছে আমেরিকান বোম্বার্ড (Bombard: attack continuously with bombs, shells, missiles. etc.) ক্যাপ্টেন জন ইয়োসারিয়ান (John Yossarian), সে যুদ্ধে মরতে চায় না। কিন্তু তাকে একের পর এক প্রাণঘাতি মিশনে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধের নিয়ম বড়ই জটিল, আমলাতান্ত্রিক, অমানবিক। উপন্যাসে যুদ্ধের পটভূমিতে যোদ্ধাদের এমন এক নিয়ম বা পরিস্থিতির বর্ণনা করা হয়েছে যা আসলে তাদের বাঁচার ইচ্ছা ও অমানসিক চাপের বন্দি রাখার একটা ফাঁদ, যুদ্ধের সমাপ্তি বা মৃত্যু ছাড়া যেখান থেকে আর মুক্তি নেই।

একজন সৈনিক যদি প্রচন্ড যুদ্ধের মধ্যে স্বেচ্ছায় ক্রমাগত ভাবে একেরপর এক বিপজ্জনক সুইসাইড মিশন চালিয়ে যেতেই থাকে তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে যে সে বদ্ধ পাগল বা বিবেকহীন (insane) হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে তাকে যুদ্ধের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা যায়।

অন্যদিকে, সে নিজেই যদি এই ধরনের মিশন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করে তখন তাকে বিচক্ষণ (sanity) বলে মনে করা হতে পারে। অনুরোধ করার কাজই প্রমাণ করে যে সে পুরোপুরি পাগল হয়নি এবং তাই এখন যুদ্ধের ময়দান থেকে অব্যাহতি পাওয়ার অযোগ্য (paradoxical rule)। এভাবে যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যরা অনেক সময় পরস্পরবিরোধী নিয়মের চক্রে আটকা পড়ে।

বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র, ক্যাপ্টেন ইয়োসারিয়ান, নিজেও আটকা পড়ে। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার জন্য মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার আবেদন করতে চায়, কিন্তু এটি তার জন্য সম্ভব নয়। কারণ, যদি সে যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে চায়, তা হলে সে সুস্থ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

গল্পে একটি মর্মস্পর্শী লাইন হচ্ছেঃ
Be glad you're even alive.'
Be furious you're going to die.
উপন্যাসের শেষ লাইন টা হচ্ছে ক্যাচ-২২ এর বাস্তবতার নির্মম পরিহাসঃ
"Anything worth dying for is certainly worth living for"

আমাদের চারপাশেও আছে অসংখ্য “ক্যাচ-২২”

আমাদের জীবনে ক্যাচ-২২ হতে পারে সামাজিক প্রত্যাশা, কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা ইত্যাদি কারণে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি তার পরিবারকে সহযোগিতা করতে চায়, কিন্তু একই সঙ্গে তার নিজের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাগুলিও পূরণ করতে চায়, তবে সে এক ধরনের মানসিক দ্বিধার মধ্যে পড়তে পারে। এর ফলে, তার জন্য সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কোন ছেড়ে কোনটা করবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পরিবারের পুরুষদের ক্ষেত্রে সামাজিক চাপের কারণে ক্যাচ-২২ এর এই বিষয়টি আরও জটিল হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিটি তার চরিত্র থেকে বের হতে পারে না, কারণ তার সামনে যে সব সমস্যা ও সম্ভাবনা আছে, তার প্রায় কোনটাই বাস্তবে এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব।

পরিশেষ

“ক্যাচ-২২” কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়, বরং এটি যুদ্ধ, রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, আমলাতন্ত্র এবং মানবিক অভিজ্ঞতার একটি গভীর বিশ্লেষণ। এটি পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগায় এবং বাস্তব জীবনের ক্যাচ-২২ পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত করে।

উপন্যাসটি একটি ক্লাসিক সাহিত্য-কর্ম, যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। গল্পের ক্যাচ-২২ পরিস্থিতিগুলো আমাদের চিন্তাভাবনাকেও এলোমেলো করে দেয়।

আচ্ছা, দিল্লি কা লাড্ডু’র নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি। ‘জো খায়া ও পস্তায়া, জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া’ …… …… খাইলেও সমস্যা,  না খাইলেও তাই। কি করবেন ?

এই ক্যাচ-২২ এর সাথে কি দিল্লি কা লাড্ডু’র কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে। নাকি মিল নেই ? আপনার ভাবনা জানান। দেখি মিলে কি না!!!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সমসাময়িক

প্রকিউরমেন্ট এ “ক্যাচ-২২” এর কিছু উদাহরণ

সরকারি ক্রয় কার্যক্রম নিজেই হচ্ছে একটা কঠিন আমলাতন্ত্রের জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। এর কার্যক্রম প্রায়শই নেতিবাচক কারনে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সরকারি

Read More »
সমসাময়িক

আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন পদ্ধতি প্রয়োগে কিছু সমস্যা

পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৮৫ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ক্রয়ে কোটেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। এক্ষেত্রে ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধানের পূর্ব অনুমোদন লাগবে আগে।

Read More »
প্রকিউরমেন্ট বিডি news

ই-জিপি সাইট ধীর গতির

আজকের দিনের শুরু থেকেই ই-জিপি সাইট ধীর গতির। সার্ভারে কাজ করতে অনেক সময় বেশি লাগছে মর্মে ব্যবহারকারিদের কাছ থেকে অভিযোগ

Read More »
ঠিকাদারী ফোরাম

প্রকল্পের কাজ হবে কি হবে না, জানে না ঠিকাদাররা

ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনের আগে ও পরের সহিংসতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এতে

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top