Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

টার্নওভার এর জন্য হাহাকার

Facebook
Twitter
LinkedIn

Please turn over from TURNOVER

 

লিখেছেনঃ ফুলকাম বাদশা

 

উন্মুক্ত দর প্রদানের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বচ্ছ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে সরকারী অর্থের সবোর্ত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির উদ্দেশ্য। সরকারী ক্রয় কার্যক্রমে ঠিকাদার বাছাই করার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই যুগে এরকম পদ্ধতির বাস্তবায়ন সারা বিশ্বেই সফলভাবে এগিয়ে চলছে। এতে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হয় আরেকদিকে প্রতিযোগিতামূলক দরদামের বিনিময়ে উপযুক্ত একটি কর্ম সম্পাদন করা যায়। ইংরেজীতে এটাকে ভ্যালূ ফর মানি বলা হয়। সরকারের অর্থ ব্যয়ের অনেকগুলি উদ্দেশ্য থাকে। অর্থ খরচের মাধ্যমে একটি প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা; কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা; অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও অবাধ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি তৈরি করা, ইত্যাদি। যা গুড গভর্নেন্স বা সুশাসনের উল্লেখযোগ্য নিয়ামক।

সরকারী অর্থ খরচের স্বচ্ছতা একটি সরকারের দর্পণ। কথায় আছে অর্থই অনর্থের মূল। এই অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতার অভাব হলে অনর্থের সূত্রপাত হতে পারে। এটা চিরন্তন সত্য। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মূল সৌন্দর্য্যই হলো অবাধ প্রতিযোগীতা। কিন্তু বর্তমানে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধি তে কিছু নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে যার ফলে অবাধ প্রতিযোগীতা বাধা গ্রস্থ হচ্ছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তন্মধ্যে একটি হলো একজন প্রতিযোগী সরকারী নির্দ্ধারিত দরের চেয়ে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন ১০% পর্যন্ত দর প্রদান করতে পারবে। এর বাইরে কেউ দর দাখিল করলে তা কোনরকম বিবেচনায় আসবে না। এর মাধ্যমে অবাধ প্রতিযোগীতার ধারণাটাকেই পাল্টে দেয়া হলো। এটাকে এখন আর উন্মৃক্ত দরপত্র না বলে ১০% উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি বলা যেতে পারে। কারন, এখানে সবাইকে ১০% সীমার মধ্যেই থাকতে হবে। পূর্বে এটা ছিল ১০০% উন্মুক্ত। তখন একজন ১০০% স্বাধীনতা উপভোগ করে তার দর দাখিল করতে পারতো। এখন আর সেদিন নাই। তখন সময়টা আসলে কেমন ছিলো তা একটা উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

সংবাদপত্রে একটি দরপত্র প্রকাশিত হলো। কাজটি ছিলো একটি পুকুর খনন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতিযোগিদের মধ্যে যিনি কাজটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সর্বসনিন্ম দর দাখিল করবেন তিনিই বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কাজটি সম্পাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হবেন। অনেকেই দর দাখিল করেছেন, কেউ ১০% নিম্নে, কেউ ১৫% নিম্নে আবার কেউ তার ব্যবসার সকল মার্জিন বিবেচনা করে শুধুমাত্র ব্যবসার চাকা সচল রাখার স্বার্থে সকল লাভ জলাঞ্জলি দিয়ে আরো নিম্নদর তথা ২০% নিন্মে দর দাখিল করলেন। এক ব্যক্তি উন্মুক্ত চিন্তা ভাবনার অধিকারী ছিলেন, তিনি উন্মুক্ত দরপত্র চিন্তা করে মন খুলে চিন্তা করলেন। তিনি গতানুগতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে ১০০% নিন্মদর দাখিল করে সবার চোখ ছানাবড়া করা দিলেন। এটা অনেকটা একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি অফারের মতোই অবস্থা। সস্তার তিন অবস্থা বিবেচনায় সরকার চিন্তা করলো নিশ্চয়ই এখানে কোন ফাঁকফোকর আছে, নইলে (১০০% কমে) ফ্রি ফ্রি একজন মানুষ একটা কাজ কেন করে দিবে? তার কাছে এরকম অস্বাবাবিক দর দাখিলের হেতু জানার জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া হলো। তিনি এর ব্যাখ্যায় বললেন, তিনি সম্প্রতি একটি পুকুর ভরাটের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু তিনি সেই পুকুর ভরাটের মাটি সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তিনি এই পুকুর তাই ফ্রি খনন করলেও আসলে তার অনেক টাকা লাভই হবে। এমন অভাবনীয় ব্যাখ্যায় কর্তৃপক্ষের আর কোন সন্দেহ রইলো না। সস্তার তিন অবস্থা সবসময় সত্য নয়।

এখনও আমাদের অনেকের ধারণা সস্তায় কোনকিছু কিনলে ঠকতে হয। তাই অনেকেই একটা পণ্য কিনে অন্যকে বুঝানোর জন্য বড় গলায় সেই পণ্যের দামটা আগে বলে থাকেন। আসলে বিষয়টা হচ্ছে যদি কেউ কোন পণ্যের গুণগতমান না বুঝতে পারে তখনই সে এর দামের মাধ্যমে এর গুণের ব্যাপারটা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে যখন অবাধ প্রতিযোগীতা চলছিল আর সরকারের অর্থের সাশ্রয় হওয়া শুরু হলো তখনই অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিল। এত কমদামে এত ভাল জিনিস কখনই পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ভালো কাজ পেতে হলে ভালো দাম দিয়েই পেতে হবে এই ধারণার ভিত্তিতে হঠাৎ এই উন্মুক্ত দরপত্রের গলায় ১০% এর মালা ঝুলিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু কেন তবে তা “১০%” এটি বোধগম্য নয়। এর মানে কি তাহলে আগে বেশী কমে (<১০%) কাজ করে কাজের মান খারাপ হযেছে? আর এখন কি ১০% এর সীমার কারণে কাজ ভাল হওয়া শুরু হবে? সরকারী ভাষায় কোন কাজের বিপরীতে তখনই বিল পরিশোধ করা হয় যখন সংশ্লিষ্ট কাজ মানে, পরিমাণে এবং সময়মত ডেলিভারী পাওয়া যায়। তাহলে আমরা কি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে অতীতে যত কাজ ১০% এর অধিক সাশ্রয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে তা নিন্মমানের হওয়া সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করা হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কেন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না ? অপরদিকে বিভিন্ন দাতা সংস্থারা (ADB, World Bank, IFAD, Kfw, IDB, USAid) এখনও এই দেশে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০% এর সীমা প্রয়োগ না করে নিম্নমানের কাজে আমাদের অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আর আমরা তার প্রতিবাদ না করে তা সাদরে গ্রহণই বা কেন করছি? এক দেশে দুই নীতি কিভাবে চলে, কেন চলে ?

নীতির প্রশ্নে আরো কিছু বিষয় সামনে চলে আসে। এই ১০% সীমিত দরপত্র এর মধ্যেও কিছু দ্বৈত নীতি চালু আছে। আমার বলছি কেউ ১০% এর সীমানা অতিক্রম করলে তাকে প্রতিযোগীতা থেকে বাদ দেয়া হবে। আবার ১০% এর সীমানাটা কত তা বলে দিচ্ছি না। অফিসিয়াল প্রাক্কলিত দর ঘোষনা না দিলে কারোর পক্ষে এই সীমানা জানা সম্ভব নয়। উন্মুক্ত দরপত্রের এরকম লুকোচুরি (hide and seek) খেলা এই প্রতিযোগীতার সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। অধিকন্তু প্রতিযোগীদের মধ্যে অফিসিয়াল দর বের করার এক অবাধ ও অবৈধ প্রতিযোগীতার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিযোগীতায় তারা ভালভাবেই সফল হয়েছে বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিযোগীদের দর একই হয়ে যাচ্ছে। আর যখন এই দর একই হয়ে যাচ্ছে তখন আরেক অসম প্রতিযোগীতার অবতারনা হচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে যদি কারো দর অন্যের দরের সাথে মিলে যায় তবে অতীত কর্মদক্ষতার উংকর্ষতার বিচারে (Performance Matrix) যিনি এগিয়ে থাকবেন তিনিই কাজটি পবেন। এক্ষেত্রে একটি নিণার্য়ক ছকের দেয়া হয়েছে। অনেকগুলি নিণার্য়কের মধ্যে একটি হলো যদি কেউ অতীতে কোন কাজ নির্দ্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তবে তিনি নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ ডেলিভারী প্রদানকারী থেকে অপেক্ষাকৃত কম পয়েন্ট অর্জন করে প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়বেন। এরকম অনেকগুলি বিষয়ের উপর দরদাতার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ণায়ক তৈরি করা হয়। এইসব নির্ণায়কে চাহিদার ভিত্তিতে ঠিকাদারদের দাখিলকৃত তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে হলে সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার ক্রয়কারীর নিকট পত্র প্রেরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র যাচাইয়ের জন্যেই বছর পেরিয়ে যাবে। এই দূরুহ ও দুবোর্ধ্য কাজটি কেউই করতে পারবেন না। তাই অন্ধবিশ্বাসের উপরই দরদাতাদের দাবী অনুযায়ী পয়েন্ট ভাগাভাগি করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে এই পয়েন্ট ভাগাভাগিতেও বেশিরভাগ দরদাতা একই লেভেলে এসে উপনীত হয়। এ থেকে সমাধান পাবার জন্য এক নতুন নিণার্য়কের সূত্রপাত ব্যবহার করতে হচ্ছে। এর নাম টার্ণওভার। যার টার্ণওভার যত বেশী হবে তিনিই কাজটি পাবার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।

প্রথমত, যখন দরদাতাদের দর এক হয়ে গেল তখন আমরা বললাম এটা কাকতালীয় হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ যখন অনেকগুলো দরদাতার অতীত কর্মদক্ষতার বিচারে (Performance Matrix) পয়েন্ট সমান হয়ে গেল, তখন আমরা বললাম এটাও কাকতালীয় হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আমরা নিরুপায় হয়ে একজন ব্যবসায়ীর অতীত কাজের বিপরীতে গৃহীত পেমেন্টর উপর ভরসা করলাম। বর্তমান ব্যবস্থায় একটি প্রাক্ক্বলনের সাথে অনেকগুলো মানুষের হাতের ছোয়া লাগে বলে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে অফিসিয়াল দর কখনোই গোপন রেখে দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব নয়। গোপন থাকলেও একটি অবৈধ প্রতিযোগীতার মাধ্যমে সে গোপনীয়তা ভেদ করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা ওপেন হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত যখন একাধিক দরদাতার প্রদানকৃত তথ্যের ভিত্তিতে একই পয়েন্ট অর্জন করে একই লেভেলে চলে আসে তখনও এই প্রতিযোগীতাকে অবৈধ ঘোষণা করা যায় না। শেষ পর্যন্ত টার্ণওভারে যে যত পেমেন্ট বেশী পাবেন তিনি ততই এগিয়ে থাকবেন। বিষয়টা এমন যে, তেলওয়ালা মাথায়ই সবাই তেল দিবে হবে। এটা এখন ওপেন যে বাংলাদেশে কোন না কোন এক প্রতিষ্ঠানের টার্ণওভার সবচেয়ে বেশী হবে এবং তার লাইসেন্স সকল দরপত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী (যদি তিনি চান)। তবে, এক্ষেত্রে একটা পথের কাঁটা আছে, তা হলো টেন্ডার ক্যাপাসিটি। এটাও আবার একজন দরদাতার তথ্য প্রদানের মর্জির উপর নির্ভর করে। তার ঘোষণার বিপরীতে যাচাই করতে গেলে হাজার হাজার ক্রয়কারীর কার্য়ালয়ে যোগাযোগ করে নিশ্চত হতে হবে। এটা তখনই সম্ভব যখন শুধুমাত্র অনলাইনে একই সিষ্টেমে একই প্লাটফর্মে সকল তথ্য আপডেট অবস্থায় থাকবে। সেটা নিশ্চিত করা এখনও বহুদুর। এই অসুবিধার সুযোগ নিয়ে অনেকেই বহু সরকারী ক্রয় চুক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। যখন তাদের কর্মক্ষমতার বাইরে অনেক কাজ নিজেদের হস্তগত করছেন তখন তারা (ধারনা করা যায়) এ সকল কাজ অবৈধভাবে বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ অর্থেরও মালিক হয়ে যাচ্ছেন। ফলে ঘুরেফিরে আরও কম দরে বিক্রির মাধ্যমে সেই অদক্ষ লোকদের হাতেই কাজ চলে যাচ্ছে। ঘটনা যদি এভাবেই ঘটতে থাকে তবে কি নতুন কোন উদ্দোক্তা এই দেশে সৃষ্টি হবে ? বহু নিরীহ উদ্দোক্তা এই সিষ্টেমে বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন করবে কিন্তু তিনি বৈধভাবে কোন কাজ পাবেন না। আবার যাদের ব্যবসা বড় তাদের ব্যবসায় আরও প্রসার ঘটবে। এভাবেই যদি চলে তবে অবাধ প্রতিযোগীতার অবশিষ্টাংশ-ও (১০%) কি টিকে থাকবে ? বেষ্ট ভ্যেলু ফর মানির কি হবে ? অর্থের সঠিক ব্যবহার কি নিশ্চত হবে ? প্রতিযোগীতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? বড়ই বিচিত্র !!!!!

সবাই মিলে আসুন একসাথে সারিবদ্ধ হয়ে তেল মাথায় তেল দিই। কিন্তু, একি ! নিচের খেটে খাওয়া লোকগুলো কি তা মানতে চাচ্ছে না ?

ঠিকাদারদের ১০% আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top