অভিযোগের নিষ্পত্তি না করেই লিনিয়ার মেশিন কিনছে বিএসএমএমইউ

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় লিনিয়ার এক্সিলারেটর (রেডিওথেরাপি মেশিন) কেনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরও তা নিষ্পত্তি না করেই বেশি দরদাতার কাছ থেকে মেশিনটি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। আগামী ১ অক্টোবর এর ক্রয়াদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সংশ্লিষ্ট ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি। অভিযোগ উঠেছে দরপত্রের সর্বনিম্ন দরদাতাকে পাশ কাটিয়ে এভাবে অপর দরদাতার কাছ থেকে উচ্চমূল্যে মেশিনটি কেনার মাধ্যমে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য বিষয়টি অবহিত থাকলেও এর প্রতিকারে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুই বছর আগে একটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর (রেডিওথেরাপি মেশিন) কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করে বিএসএমএমইউ। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় জটিলতা শুরু হয়। অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসময় বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। তদন্ত কমিটি অনিয়মের অস্তিত্ব পাওয়ায় আগের দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিল করে ফের দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করে। সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়।
সূত্র জানায়, নতুন করে দরপত্র আহ্বান করার পর সব শর্ত মেনে দেশের মাত্র দুটি কোম্পানি এতে অংশ নেয়। এরমধ্যে ভেরিয়ান মেডিক্যাল সিস্টেম নামের একটি কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে মেশিনের দাম প্রস্তাব করে ২১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। অপরদিকে অন্য কোম্পানিটি দাম প্রস্তাব করে ২৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা কমে টেন্ডারের শর্ত পূরণ করে উন্নত মানের মেশিন সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে অপর দরদাতার কাছ থেকে লিনিয়ার মেশিনটি কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ক্রয় কমিটির এই আচরণ বুঝতে পেরে পিপিআর রুল অনুসারে ক্রয় কমিটিকে ক্লিনিক্যাল ভিজিটের আমন্ত্রণ জানায় সর্বনিম্ন দরদাতা ভেরিয়ান মেডিক্যাল সিস্টেম । কিন্তু কমিটির কেউ তাতে সাড়া না দেওয়ায় গত ৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান এবং প্রধান উপ-উপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার রহমান এবং টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ বরাবর উল্লেখিত টেন্ডারে অনিয়ম ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এর বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এ অভিযোগের কপি সংশ্লিষ্ট দফতর প্রাপ্তি স্বীকারসহ গ্রহণ করেন। কিন্তু, অভিযোগ দায়েরের পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কম দাম প্রস্তাবকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে একই অভিযোগ গত ১৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর করা হয়।
ভেরিয়ান মেডিক্যাল সিস্টেম এবং বাংলাদেশ ডিসট্রিবিউটর অফিস ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) রুহা আলম বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবিত লাইনাক মেশিন টি ইউএসএ নির্মিত । তাছাড়া জাতীয় কান্সার হাসপাতাল, মিলিটারি হাসপাতাল ঢাকা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন প্রাইভেট এবং পাবলিক হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেরিয়ান মেডিক্যাল সিস্টেম এর লাইনাক মেশিন দ্বারা পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু বিসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপেক্ষা করে এবং কেন ৪,০৯,১৫,০০০/- (চার কোটি নয় লক্ষ পনের হাজার) টাকা বেশি দাম দিয়ে অপর দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইলেকটা এবি’ থেকে অন্য কোম্পানির মেশিন কিনতে আগ্রহী সে বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি এবং কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা বেশি দামে লিনিয়ার মেশিন কেনার ব্যাপারে সম্মতি আদায় করে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ক্রয় কমিটির এ সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় আগামী ১ অক্টোবর বেশি দামে মেশিন সরবরাহ করতে তাদের পছন্দের কোম্পানিকে ক্রয়াদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যান ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান জানান, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা এখন সম্ভব হচ্ছে না। যা হবে তা হলেই সবাই জানতে পারবে।
সামগ্রিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। আমাদের তদন্ত চলছে। যদি আগের টেন্ডারের বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার দিয়ে মেশিনটি কেনার কাজ সম্পাদন করা হবে। আর অভিযোগ না থাকলে আগের টেন্ডার অনুসারেই সব হবে।
নিউজটি পড়তে ক্লিক করুন।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

“মাসিক ভিত্তিতে গাড়ী ভাড়া” দরপত্রে কোন STD ব্যবহার করবেন ?
সরকারি অফিসগুলোতে অফিসের জন্য মাসিক ভিত্তিতে গাড়ি ভাড়া এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। দরপত্র আহবানের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই এই গাড়ি

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রয় সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ
২০২৪ সালে প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদাররা (trading partners) নতুন ক্রয় বাজার উন্মুক্ত করার চেয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ ক্রয় স্বার্থ রক্ষার দিকে বেশি

Supply Chain VS Procurement
Supply Chain Management (SCM) and Procurement are two closely related but distinct functions in business operations. While procurement focuses on

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: সরকারি ক্রয় এবং বিশ্ব বানিজ্য
শুল্ক আরোপ (Tariff Imposition) এবং সরকারি ক্রয় (Public Procurement) অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা একে অপরকে সরাসরি প্রভাবিত করে। শুল্ক