টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্নের আগে টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয় ফাঁস হওয়ায় সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীসহ ছয়জন দায়ী। প্রকল্প পরিচালককে হেনস্তার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পটির যতগুলো টেন্ডার হয়েছে তার কোনোটির কাজ না পাওয়া এবং টেন্ডারের জামানত তাৎক্ষণিক ফেরত না পাওয়া। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক কাজ পাওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিলে বলে উল্লেখ করা হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০ ঠিকাদারকে ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও দেখুনঃ প্রকল্প পরিচালককে নিরাপত্তা দেয়াও রাষ্ট্রের দায়িত্ব
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ২২০ কোটি টাকার ৩৭ লটের দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্বাচিত ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই ফাঁস হয়ে যায় – ৩টি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে ৩৪টি লটের কাজ। ৩৭টি লটের কাজ পেতে প্রায় এক হাজার ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটি সিটি করপোরেশনের ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষর গ্রহণ করেছেন। তাতে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমিটিকে জানিয়েছেন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই ঠিকাদাররা এই গোপনীয় তথ্য জানার কোনো সুযোগ নেই – যদি প্রকৌশল দপ্তর থেকে এই গোপনীয় তথ্য কেউ সরবরাহ না করে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপ সহকারী প্রকৌশলী, কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ।
ইতিমধ্যে দায়ী ১০ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের কালোতালিকাভুক্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
চসিকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধে পদক্ষেপ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
-
- প্রত্যক কর্মকর্তার রুমে ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম সুইচ স্থাপন,
- সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে প্রবেশকারীদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা, সেবাগ্রহীতাদের প্রবেশে সময়সীমা নির্ধারণ, বিকেল চারটার পর সিটি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের অনুমতি ছাড়া দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, অফিস চলাকালে অফিসের সামনের রাস্তায় বহিরাগতদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে চেকপোস্ট বসানো,
- দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালে ঠিকাদারেরা ও তাঁদের লোকজনের অফিস এলাকায় অপ্রয়োজনীয় অনুপ্রবেশ সংরক্ষিত করা,
- দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালে নিরাপত্তাব্যবস্থা স্বাভাবিকের চেয়ে জোরদার করা
- প্রত্যেক ফ্লোরে দুইজন নিরাপত্তাকর্মী রাখা,
- ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধে প্রকল্প গ্রহণ, প্রাক্কলন ও টেন্ডার কার্যক্রমের প্রত্যেক ফাইল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মেয়রের অনুমোদন,
- টেন্ডারের তথ্য ফাঁস হওয়া রোধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যত্নবান হওয়া,
- প্রতিটি দরপত্র প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নাম–পদবি সংরক্ষিত রাখা,
- চসিকের নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা,
- সহকর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
প্রকল্প পরিচালককে হেনস্তার ঘটনার পরদিনই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজন ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর সোহাগ।