পরামর্শক সেবা দুই ভাবে পাওয়া যায়। ব্যক্তি পরামর্শক এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে।
যে সব কাজের জন্য ব্যক্তির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষজ্ঞদল বা অতিরিক্ত পেশাগত সহায়তার প্রয়োজন নাই, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিভিত্তিক পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। সরকারি ক্রয়ের
সাথে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়, ব্যক্তি পরামর্শক অতোটা আলোচনায় আসে না। আজকে একজন ব্যক্তি পরামর্শকের অভিজ্ঞতা শুনবো। কিছুটা রম্য রচনার আলোকে জটিল বিষয়কে সরলীকরন করে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন কমিউকেশন এক্সপার্ট Khan Md Rabiul Alam।
১. কনসালটেন্ট সাধারণত বাইম মাছের মতো হন। এদের ছাই-দড়ি দিয়ে ধরা যায় না। নিবেদিত, দক্ষ ও নৈতিকতা সম্পন্ন কনসালটেন্ট যে নেই তা বলছি না, তবে এ আলোচনা সংখ্যাধিক্যের ওপর। কনসালটেন্টদের মধ্যে দেখেছি পলায়নপর মনোভঙ্গি। ডেলিভারেবল জমা দিতে পারলেই বাঁচেন। ডেলিভারেবল জমা দেন, ফি নেন। কাগজ কলমে সব ঠিক থাকে কিন্তু বাস্তবে তা খুব বেশি কাজে লাগে না। এ পেশাটি পর্যবেক্ষণ করছি প্রায় দেড় যুগ। দেশীয় ও আন্তর্জান্তিক বেশকিছু কনসালটেন্টের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারি গন-ই এই ওয়েবসাইটের সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে ক্লিক করুন।
২. এ পেশার সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট এইডের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। রয়েছে রাজনৈতিক অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক সংস্থায় কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়। বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানটা দেখবে আর্ন্তজাতিক কনসালটেন্ট আর দেশেরটা দেখবে দেশীয়-জন। যারা সহায়তা বা ঋণ দেন এটি তাদের কৌশল। কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওপরের পজিশনগুলো উন্নত দেশ থেকে ধার করা। ধরুন, একটি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার, চিফ অব পার্টি বা প্রজেক্ট ম্যানেজার সাধারণত উন্নত দেশ থেকে ধার করা হয়। তাঁরা যে বেতন পান ঔ প্রকল্পের প্রায় সকল ন্যাশনাল স্টাফের সমান। উন্নত দেশের রিসোর্স মানেই যে কুয়াইট আইডেন্টিক্যাল এমন ভাবার কারণ নেই। দেশের ভেতর অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন লোক পাওয়া যায় তাদের কেউ দেখবে না, খুঁজবে না।
৩. কনসালটেন্টেরা সাধারণত পিছলা স্বভাবের হন। অনেকের পেশাগত উৎকর্ষ থাকে এবং একই সঙ্গে থাকে এড়িয়ে যাওয়ার বিশেষ ক্ষমতা। কনসালটেন্টদের মধ্যে দক্ষতা ও পেশাগত নৈতিকতার ফারাক লক্ষ্য করা যায়। কনসালটেন্টেরা হায়ারিং অথোরিটির মূলধারার কাজের সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারেন না। তারা শেকি থাকে। মাঝে মাঝে নিজেদের খুঁজে পান না।
৪. গাছে গ্রাফিটিং করা যায়। এক আমগাছের সঙ্গে অন্য আমগাছের ডাল গ্রাফিটিং করে দু-স্বাদের ফল পাওয়া যায়। কিন্তু কনসালটেন্টদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিটিং অনেক কঠিন ব্যাপার। প্রত্যাখান থাকে দুদিক থেকে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে – তার মধ্যে কর্মসংস্কৃতির পার্থক্য অন্যতম। কনসালটেন্টেরা কাজ করেন নির্দিষ্ট সময় ও ডেলিভারেবল ভিত্তিক আর প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতি, অগ্রাধিকার, কর্মকুশলতা দীর্ঘমেয়াদী ও স্বতন্ত্র।
৫. বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কনসালটেন্ট প্রিকন্ডিশন মন নিয়ে কাজ করতে আসেন। তাঁদের মস্তিষ্ক বিশেষভাবে বিন্যস্ত থাকে। তাঁদের জ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিশে না। নদীতে চুয়ে পড়া তেল যেমন পানির সঙ্গে মিশে না, ভাসতে থাকে। একইভাবে কনসালটেন্টদের উৎপাদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ভেতর ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় এসব বিশেষায়িত উৎপাদন ফাইল বন্দি হয় অথবা কেজি দরে বিক্রি হয়ে যায়। সরবরাকৃত উৎপাদনের ব্যবহার উপযোগিতা না থাকায় বা কাজে লাগাতে অর্থ বা লোকবল না থাকায় অধিকাংশ সময় ডেলিভারেবলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এ জন্য তাদের কখনও কখনও ফি পেতে সমস্যা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফি পেয়ে যান।
৬. প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে মূল্যাবোধগত ও বৃদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতি দেখা যায়। পরামর্শকদের অধিকাংশ উৎপাদন হয় আইডিয়ালিস্টিক। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যেসব স্ট্রাটিজি বানানো হয় তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের থাকে না। তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিজনেস স্ট্রাটিজি বানাতে দেখেছি এবং বানানো শেষে তা ক্যাবিনেটে বন্দি হতে দেখেছি। চাহিদাগুলো প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে তৈরি হয় না। আসে বাইরে থেকে। বাঙালির স্বভাব যা তার নয় তা সে নেবে না। নিলেও নিবে বিকৃত করে। সংস্কৃতি অধ্যায়নে দেখা যায়, বাঙালি কোনো কিছুই অবিকৃত ভাবে গ্রহণ করেনি, গ্রহণ করেছে নিজের মতো করে, বিকৃত করে। কনসালটেন্টেরা জেন্ডার, সুশাসন আইসিটি ও কমিউনিকেশন, মিডিয়া ও অ্যাডভোকেসি বিষয়ে যে পরিমাণ পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল তৈরি করেছেন তা দিয়ে একটি ভালো আর্কাইভ বানানো যাবে।
৭. কৃষক যে বাংলাদেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করলো তা কোনো স্ট্রাটিজির সাফল্য ? জনগণের শ্রম, মেধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাষ্ট্র যদি যথাযথভাবে ক্লিক করতে পারে তাহলে সাফল্য আসবেই। বাঙাল সহজাত সৃজনশীলতার আধার। তারা পরামর্শ পছন্দ করে না। নিজের মতো চলতেই তাদের স্বাচ্ছন্দ। হাসান আজিজুল হক স্যারের এক লেখায় পড়েছিলাম- যে মাহালি ঝাঁকা, ডালি বুনে সে জানে কয়টা ঝাঁকা বা ডালির জন্য কয়টা বাঁশ কাটতে হবে – এ জন্য তার আলাদা পরিকল্পনার দরকার পড়ে না।
৮. বাঙালি খুব কাঠামোবদ্ধ নয়, বাঙালি ক্যাজুয়াল মুডে অসামান্য কাজ করতে পছন্দ করে।
৯. সমাজে কনসালটেন্ট নামের যে উটকো শ্রেণি তৈরি হলো এর দায় কে নেবে। আমি নিজেও এ উটকো শ্রেণির একজন সদস্য এবং তা দুর্ভাগ্যবশত।