ডলারে চুক্তিঃ সরকারের জন্য খেসারত না লাভ

সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ক্রয় চুক্তি করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তিতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম হিসাব করা হয় মার্কিন ডলারে। গত এক বছরে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ টাকা। এতে এক বছরে পিডিবির বাড়তি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তারপরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি হচ্ছে ডলারে।
সরকার যদি চুক্তির সময় বিল টাকায় হিসাব করার শর্ত রাখত, তাহলে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো না।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট, যদিও বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। ফলে সব সময়ই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একাংশকে বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। বছরে এর পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। এই ভাড়াও ডলারেই হিসাব হয়। ডলারের দাম বাড়লে খরচ বাড়ে।
পিডিবি ও বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট একটি অংশ বলছে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই ডলারে বিদ্যুৎ বিলের চুক্তি করা হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক রীতি। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রায় ৭০ শতাংশ খরচ হয় আমদানিতে। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদেশি ঋণ থাকে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলের হিসাব ডলারে রাখা হয়। এটি না হলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।
আরও দেখুনঃ ডলারের দাম সমন্বয়ের জন্য-ও এখন প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে
পিডিবির দুই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলে দুটি অংশ থাকে। একটি স্থায়ী খরচ, যা কেন্দ্রভাড়া। আরেকটি অংশ জ্বালানি ও পরিচালন খরচ। কেন্দ্রভাড়ার অংশটি শুধু ডলারে না রেখে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বিদেশি ঋণ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে করা খরচ পরিশোধে বিল ডলারে ধরা যেতে পারে। আর জমি কেনাসহ স্থানীয় পর্যায়ে অন্যান্য খরচের অংশটুকু টাকায় বিল করা যায়। পিডিবির সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এভাবেই বিদ্যুৎ বিল হিসাব করা হয়। তবে বেসরকারি খাতের ৯০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পুরোটাই ডলারে হিসাব করা হচ্ছে। আর সৌরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে সবই ডলারে চুক্তি করা হচ্ছে।
তবে পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে যুক্ত হয়েছে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া। এতে বাড়ছে ঘাটতির বোঝা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ডলারের দাম বাড়ছে। তাই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ডলারের পরিবর্তে টাকায় চুক্তি করার কথা ভাবছে তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিগবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎ বিলে আমদানি ও দেশীয় খরচ হিসেবে দুটি অংশ থাকে। দেশীয় খরচের অংশটুকু টাকায় বিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। সামনে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির সময় এটি করা হতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি মার্কিন ডলারেই হয়। কারণ হলো, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিময় হারের ওঠানামার ঝুঁকি নিতে চায় না। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশি মুদ্রায় হতে পারে।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সরকারি দরপত্রে এনজিওদের অংশগ্রহণঃ যুক্তি-তর্ক-বিতর্ক
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি সরকারি ক্রয় আইন সংশোধন করেছে যাতে এনজিও (NGO) বিষয়ক কিছু পরিবর্ধন করা হয়েছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ,

NGOs in Public Tenders: Prospects and Pitfalls ?
Recently, the Bangladesh Government has revised the public procurement law to let NGOs to compete on tenders. In the evolving

কারিগরী প্রস্তাব মূল্যায়নে স্কোরিং বা গ্রেডিং সিস্টেমের গুরুত্ব
বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পেশাগত সেবা (Consultancy Service) ক্রয়ের জন্য সফল পরামর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরামর্শকের কারিগরী প্রস্তাবের গুণগত মানই প্রধান বিবেচ্য বিষয়

MAPS এবং বাংলাদেশ
MAPS বা Methodology for Assessing Procurement Systems হলো একটি হাতিয়ার (Tools) যা বিশ্বব্যাপী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমকে মূল্যায়ন করার জন্য ব্যবহৃত