টেন্ডারে ঠিকাদারদের রেট সমান হওয়া এখন আর কাকতালীয় নয়

আজকে হঠাৎ এই ওপেনিং শীট টা নজরে পড়লো। এরকম যে হচ্ছে তা আগেই জানতাম। তারপরও আবার নতুন করে উপলব্ধি হল। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সম আচরণ আর অবাধ প্রতিযোগিতা নামক অদৃশ্য খুঁটিগুলো যে ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে তা কি আর মেরামত করা সম্ভব হবে !!! কে করবে ???
২০১৬ সালে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এ ৩১ নং ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আভ্যন্তরিন সরকারি কেনাকাটায় কার্যের ক্ষেত্রে কোনো দরদাতা দরপত্রের দাপ্তরিক প্রাক্কলনের ১০ ভাগ কম বা বেশি মূল্য দরপত্রে উল্লেখ করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
তখনই অনেকে মতামত দিয়েছিলেন যে এর ফলে দাপ্তরিক প্রাক্কলন গোপন রাখা সম্ভব হবে না এবং প্রায় সব দরপত্রদাতাই ১০ ভাগ কম মূল্যে দরপত্র দাখিল করার চেষ্টা করবে। যদিও ২০১৬ সালে একবার এবং ২০১৮ সালে আরেক দফা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করে দর সমান হলে করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে সমস্যা অনেকগুলো।
প্রথমতঃ দাপ্তরিক প্রাক্কলন গোপন রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে ধারনা করা এখন আর অমূলক নয়।
দ্বিতীয়তঃ দর সমান হলে বিধিতে সংযোজিত নির্ণায়ক অনুসারে Evaluation & Rating Matrix ব্যবহার করে score এর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে যা মূল্যায়ন কমিটির জন্য খুব সহজ কাজ নয়। পারতপক্ষে এক বিশাল ডাটাবেজ ছাড়া এই কাজ কখনই পুরোপুরি সঠিক হবে না।
তৃতীয়তঃ ঠিকাদারকেও এক্ষেত্রে প্রত্যেকবার অনেক অনেক ডকুমেন্ট দরপত্রের সাথে জমা দিতে হচ্ছে।
চতূর্থতঃ যদিও দর সমান হলে Evaluation & Rating Matrix ব্যবহার করতে হবে কিন্তু পারতপক্ষে score সমান হলে বা শুণ্য হলে সেক্ষেতে দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহবানের করতে হবে।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, ক্রয়কারিকে অনেকগুলো ঝুঁকি মাথায় রেখে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ে দরপত্র আহবান করতে হচ্ছে। ফলে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য পদ্ধতির উপর ক্রয়কারি তথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা কমে যাওয়ার আশংকা করাই যায়।
পিপিআর-০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনীতে সমদরের ক্ষেত্রে বিবেচ্য নির্ণায়ক সমূহ সংশোধনের মাধ্যমে আসলে অফিসিয়ালি একপ্রকার স্বীকার করেই নেয়া হয়েছে যে ই-জিপিতে দরপত্র আহবানের পরেও এবং দাপ্তরিক প্রাক্কলন গোপন থাকার পরেও একাধিক ঠিকাদারে দাখিলকৃত দর সমান হয়ে যাচ্ছে … এবং বিষয়টা কাকতালীয় নয় … প্রায়শঃ-ই হচ্ছে।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সরকারি দরপত্রে এনজিওদের অংশগ্রহণঃ যুক্তি-তর্ক-বিতর্ক
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি সরকারি ক্রয় আইন সংশোধন করেছে যাতে এনজিও (NGO) বিষয়ক কিছু পরিবর্ধন করা হয়েছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ,

NGOs in Public Tenders: Prospects and Pitfalls ?
Recently, the Bangladesh Government has revised the public procurement law to let NGOs to compete on tenders. In the evolving

কারিগরী প্রস্তাব মূল্যায়নে স্কোরিং বা গ্রেডিং সিস্টেমের গুরুত্ব
বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পেশাগত সেবা (Consultancy Service) ক্রয়ের জন্য সফল পরামর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরামর্শকের কারিগরী প্রস্তাবের গুণগত মানই প্রধান বিবেচ্য বিষয়

MAPS এবং বাংলাদেশ
MAPS বা Methodology for Assessing Procurement Systems হলো একটি হাতিয়ার (Tools) যা বিশ্বব্যাপী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমকে মূল্যায়ন করার জন্য ব্যবহৃত
1 thought on “টেন্ডারে ঠিকাদারদের রেট সমান হওয়া এখন আর কাকতালীয় নয়”
app thekeo estimated cost neya jay