ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই (Bacillus Thuringiensi Israelensis – BTI) আমদানিতে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের কথা বলে ব্যাকটেরিয়াটি আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে।
দরপত্রের শর্তে বিটিআইয়ের উৎপাদক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, সিঙ্গাপুর, ভারত অথবা মালয়েশিয়ার নাম ছিল। অর্থাৎ এই দেশগুলোর কোনো একটি থেকেই ব্যাকটেরিয়াটি আমদানি করতে হবে।
অর্থাৎ বিটিআই ব্যাকটেরিয়াটি চীন থেকে আমদানির কোনো সুযোগ ছিল না।
ই-জিপিতে আহবানকৃত দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি থেকে দেখা যায়, গত ১১ এপ্রিল মশার লার্ভা নিধনের উদ্দেশ্যে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া কেনার বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাকা উত্তর সিটির রাজস্ব বিভাগ। গত ২১ মে ২০২৩ ইং তারিখে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর সাথে এই ব্যাকটেরিয়া সরবরাহের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনকে যে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া বুঝিয়ে দিয়েছে, ওই মোড়কের গায়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেডের নাম লেখা রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানির তথ্যে দেখা যায়, গত ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে করে বিটিআই ব্যাকটেরিয়া আমদানি করে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট লিমিটেড। যা চীনের ‘শানডং গানন অ্যাগ্রোকেমিক্যাল কোম্পানি’ থেকে আনা হয়েছে।
কিন্তু মার্শাল অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্রের ওই শর্ত ভঙ্গ করে বিটিআই ব্যাকটেরিয়াটি চীন থেকে আমদানি করেছে। চীনা কোম্পানির তথ্য গোপন করতেই প্রস্তুতকারক হিসেবে তারা সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের নাম ব্যবহার করেছে।
বিষয়টি নিয়ে মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের দাবি, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পণ্যটি আমদানি করানো হয়েছে। দরপত্রে তিনি যেসব প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়েছেন সেখানে তৃতীয় পক্ষ শানডংয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যালের চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ওই কোম্পানির (শানডং) মাধ্যমেই বিটিআই আমদানি করা হয়েছে।
এদিকে ঠিকাদার আমদানি করা বিটিআই ব্যাকটেরিয়াকে সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেডের প্রস্তুত করা বলে দাবি করলেও সেটি সত্য নয় বলে দাবি করেছে বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি। এ নিয়ে তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছে।
অন্যদিকে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট মি. লি শিয়াং নামের যে ব্যক্তিকে বেস্ট কেমিক্যালের রপ্তানি ব্যবস্থাপক (এক্সপোর্ট ম্যানেজার) এবং বিটিআই–বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিল, তিনি বেস্ট কেমিক্যালের কোনো কর্মী নন। বেস্ট কেমিক্যালের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত আরেকটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, তারা মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এমতাবস্থায়, মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই আমদানিতে জালিয়াতি এবং প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।