শুধুমাত্র ডলারের দাম বৃদ্ধির কারনে কি কি প্রভাব পরে
বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বাড়ছে। বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। এর মধ্যেই গত ০৮ মে ২০২৪ ইং তারিখে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ডলারের আনুষ্ঠানিক দর এখন থেকে ১১০ টাকা।
এখন প্রশ্ন, ডলারের দাম বাড়লে কী হয় ? সহজ উত্তর – মার্কিন ডলার কিনতে বিভিন্ন দেশকে তাদের মুদ্রার বিপরীতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
মার্কিন ডলার প্রধানতম বৈশ্বিক মুদ্রা। আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের অংশ ৬৪ শতাংশের বেশি। অপরিশোধিত তেলসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ ডলারে অনুমোদিত হয়।
কাজেই, ডলারের দাম বাড়লে বা টাকার অবমূল্যায়ন হলে সেক্ষেত্রে তা সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। অনেক ক্ষত্রে সুবিধা হবে, অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধা।
১। ডলারের দাম বৃদ্ধি মানেই নিজস্ব মুদ্রার দাম কমে যাওয়া। এটি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে বেশি খরচে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। তেলের দাম বাড়লে প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। এটি একটি দেশকে মূল্যস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয়।
২। ডলারের দাম বেশি হলে দেশের আমদানি খরচ বাড়ে। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির সক্ষমতা কমে যায়। আমদানিনির্ভর বিদেশি পণ্য হয়ে যায় ব্যয়বহুল।
৩। ডলারের দাম বৃদ্ধি বা টাকার দরপতন বিদেশি প্রশিক্ষন ও ভ্রমণকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। হোটেল বুকিং, ফ্লাইটের টিকিট, ইত্যাদি ডলারে পরিশোধ করতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।
৪। ডলারের দাম বৃদ্ধির সাথে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের ব্যাপক প্রভাব আছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সরবরাহ চেইন, দরপত্রে প্রতিযোগিতা, চুক্তি ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বিদ্যমান। তবে এক্ষেত্রে সরকারি দরপত্রে অভ্যন্তরিক ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রয়ের উপর প্রভাব কিছুটা ভিন্নতর।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ডলারের দামের প্রভাব
৫। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে পৃথিবীব্যাপী সরবরাহ চেইনের ওপর এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। যেহেতু বিদেশী ঋণের সিংহভাগই ডলারে, সেহেতু ডলারের মানের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে দেশের আর্থিক কাঠামোর ওপর বেশ চাপ পড়বে।
৬। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বড় সুবিধা দেবে রপ্তানিকারকদের। যদি ব্যবসার অন্যান্য খরচ না বাড়ে, তাহলে প্রতি ডলারে ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি আয় হবে রপ্তানিকারকদের। এতে তাদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। একবারে ডলারের বড় মূল্যবৃদ্ধির সুফল অবশ্য দ্রুতই পাবেন রপ্তানিকারকেরা। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি লাভবান হবে। আবার, তবে ডলারের দাম একলাফে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির ফলে পরিবহন, বিদ্যুৎ, ইত্যাদি বৃদ্ধির ফলে রপ্তানিকারকেরা এর সুফল পাবেন না।
৭। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রপ্তানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি বৈধ পথে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিরও বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রেমিটেন্স বেশি আসবে মর্মে আশা করা যায়।
৮। ডলারের দামে বড় বৃদ্ধি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে। দেশি বিনিয়োগকারীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তবে, মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এখন কম অর্থ পাবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আয় কমবে।
উপসংহারঃ
বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর জন্য রফতানি আয় ও রফতানি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি কিছু সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে সরকার গ্রহণ করেছে যেমন সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করা। আমাদের দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অনিয়ম দূর করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব হবে, যা ডলারের চাহিদা কমিয়ে ডলারের মূল্যহ্রাস করতে ভূমিকা পালন করবে।
এই লেখকের অন্যান্য লেখা
সরকারি ক্রয়ে Conflicts of Interest কি ?
দ্বন্দ্ব বা Conflicts দৈনন্দিন জীবনে দেখা যায় এবং এটি একটি স্বাভাবিক, প্রায়শই স্বার্থপর এবং কখনও কখনও উৎপাদনশীল ঘটনা (productive phenomenon)।
Conflicts of Interest বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব কি ?
দ্বন্দ্ব বা Conflicts দৈনন্দিন জীবনে দেখা যায় এবং এটি একটি স্বাভাবিক, প্রায়শই স্বার্থপর এবং কখনও কখনও উৎপাদনশীল ঘটনা (productive phenomenon)।
প্রকিউরমেন্ট অডিট কি, কেন, কে করবে ?
সরকারি ক্রয় নিরীক্ষা (Procurement Audit) সরকারি নিরীক্ষা (Government Audit) এর একটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ। এই প্রকিউরমেন্ট অডিট ছাড়াও আরও অনেক ধরনের
এলসি এবং ব্যাংকের গ্যারান্টি মধ্যে পার্থক্য কি ?
টেন্ডারে “ব্যাংক গ্যারান্টি (Bank Guarantee)” এবং “লেটার অব ক্রেডিট (letter of credit) বা এলসি (LC)” শব্দ দুটি প্রায়ই দেখা যায়। বেশিরভাগ