Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া কি শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষন করছে ?

Facebook
Twitter
LinkedIn

একটি মে দিবসের ভাবনা !!!!
কর্মক্ষেত্রে সামান্য ভুলের জন্যও ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। যার দরুন ঘটতে পারে প্রাণহানি, বরণ করতে হতে পারে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুকির মাত্রা যে কতটা ভয়ঙ্কর তা উঠে এসেছে বিভিন্ন সমীক্ষায়।

শ্রমিক সংগঠন ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয়। এ বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। ২০০৬ সালে তৈরি শ্রম আইনে নিহত শ্রমিকের পরিবারের জন্য এক লাখ ও আহত শ্রমিকের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এক দশকেও তা বাড়েনি।

আইএলও কনভেনশনের ১২১ ধারা অনুযায়ী একজন শ্রমিক নিহত হলে বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তাঁর বাকি কর্মজীবনের আয়ের হিসাব সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। মে দিবসের মূল দাবি আট ঘণ্টার কাজের বিষয়টি বাংলাদেশে খুব একটা মানা হয় না।

পরিবহন খাতের পরই নির্মাণ খাতে মৃত্যু ঝুকি সবচেয়ে বেশি। নির্মাণ খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাজ হয় সরকারি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ টেন্ডার আহবান করে পরবর্তীতে চুক্তির মাধ্যমে। এখানে দরপত্র আহবানকারী দপ্তর এবং ঠিকাদারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নির্মাণ শ্রমিকরা সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে।

ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর তথ্য মতে বর্তমানে দেশে নির্মান শ্রমিক প্রায় ৩৭ লক্ষের বেশি। দেশের ও আন্তর্জাতিক আইন-কানুন অনুযায়ী এইসব ঝুকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত নির্মান শ্রমিকদের যথাযত নিরাপত্তা দেয়ার প্রাথমিক দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তা যথাযত ভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব সরকার তথা সরকারি কাজে দরপত্র আহবানকারী দপ্তরের।

ছবি-২

এখন, দেখা যাক এ বিষয়ে সরকার কিভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৬ অনুযায়ি “কোন ক্রয়কারী ক্রয় সংক্রান্ত দলিলে শ্রমিকদের মজুরীর মান ও তত্সশ্লিষ্ট সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং শিশু শ্রম নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত কোন বিধানের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ কোন শর্ত অন্তর্ভূক্ত করিতে পারিবে না৷”

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর ধারা ৪(৩)(ট) অনুযায়ি ক্রয়কারীকে দরপত্র বা প্রস্তাব দলিলে “নূন্যতম বীমা কাভারেজ” এর শর্ত উল্লেখ করতে হবে।

দরপত্র দলিল
কার্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত দরপতে দলিল হচ্ছে PW3 টেন্ডার ডকুমেন্ট। এই দরপত্র দলিলের GCC Clause ২৮ (Welfare of Labourers) অনুযায়ি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের personnel এর ক্ষেত্রে relevant labour Laws applicable হবে।

দরপত্র দলিলের GCC Clause ৩৩ (Contractor’s Risks) অনুযায়ি নির্মান কাজ সংশ্লিষ্ট দূর্ঘটনা বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায় হিসেবে গন্য হবে। সুতরাং এর দায়ভার ও ক্ষতিপূরণ তাকেই বহন করতে হবে।

দরপত্র দলিলের GCC Clause ৩৬ (Insurance) অনুযায়ি কাজ শুরুর দিন থেকে Defects Liability Period পর্যন্ত Contractor’s Risks (personal injury or death) এর ক্ষেত্রে ক্রয়কারি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে যৌথভাবে ইনস্যূরেন্স খুলতে হবে। এই ক্ষেত্রে দুই ধরনের ইনস্যুরেন্স এর বিষয়ে উল্লেখ আছেঃ

(i) for the Contractor’s employees is as per the law and common practice in Bangladesh.
(ii) and for third parties is as per the law and common practice in Bangladesh.

কিন্তু সর্বনিম্ন ইনস্যুরেন্স এর পরিমানের কোন উল্লেখ করা হয় নাই। ফলে ক্রয়কারিদের মধ্যে একপ্রকার বিভ্রান্তি রয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের চাপে তা বাদ দেয়া হয় বা কোনরকমে একটা ডিজিট রাখা হয়।

অন্যদিকে, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ক্রয়ে PW2a বা PW2b দরপত্র দলিল ব্যবহৃত হয়। এখানে আবার শ্রমিকদের দূর্ঘটনা জনিত ক্ষতিপূরনের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয় নাই। তার মানে, ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনরূপ দূর্ঘটনার কারনে কোন শ্রমিক আহত বা নিহত হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কি ক্ষতিপূরণের প্রদানে বাধ্য করা যাবে না ?

 

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬

শ্রমিক নিয়োগ,মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে সকল আইনের সংশোধন ও সংহতকরণকল্পে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ প্রণীত হয়েছে।

শ্রম আইন অনুযায়ি কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিয়োগকারীর। শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ছাড়া নিয়োগকারী কাউকে নির্মানকাজে নিয়োগ করতে পারে না।

এর ধারা ৩ক(৩) অনুযায়ি ঠিকাদার সংস্থা দ্বারা সরবরাহকৃত শ্রমিকগণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের শ্রমিক হিসাবে গণ্য হবেন এবং তারা শ্রম আইনের আওতাভুক্ত থাকবেন।

চুক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ
ধারা ১৬১(১) অনুযায়ি মালিকের সাথে ঠিকাদার চুক্তির মাধ্যমে কোন কাজে নিযুক্ত হলে সে কাজে নিযুক্ত শ্রমিকও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হবে।

আবার ধারা ৯৯(৩) অনুযায়ি যে ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল বা মূল মালিক মনে করেন যে সংশ্লিষ্ট কোন শ্রমিকের নিহত কিংবা আহত হওয়ার ঘটনাটি বিশেষভাবে এবং বাস্তবিক অর্থে ঠিকাদারের পক্ষ হতে কোন আচরণবিধি লংঘনের ফলে সংঘটিত হয়েছে, তবে তিনি, শ্রম আদালতে ক্ষতিপূরণের পূর্ণ অর্থ জমা দেওয়ার পর (যে ক্ষেত্রে কোন শ্রমিক নিহত হয়), কিংবা সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের পর (যে ক্ষেত্রে কোন শ্রমিক আহত হয়), উক্ত অর্থের কত অংশ ঠিকাদার কর্তৃক প্রিন্সিপাল বা মূল মালিককে প্রদান করা উচিত, তা নির্ধারণের জন্য প্রধান পরিদর্শকের নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং প্রধান পরিদর্শক আবেদন প্রাপ্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে বিধি মোতাবেক তা নিস্পত্তি করবেন।

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা-২০১৩

কর্মস্থলে শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও সূরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই নীতিমালা জারী হয়।

এর ধারা ৪(ক)(১২) তে বলা আছে দূর্ঘটনার পর শ্রমিকের চিকিৎসা সেবা ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষমতা অনুযায়ি তাকে কর্মস্থলে পূনর্বাসন করা এবং ধারা ২২ অনুযায়ি নির্মান প্রতিষ্ঠানকে এই নীতিমালা পালনে বাধ্য করা সরকারের দায়িত্ব।

পর্যবেক্ষন

এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারে ক্রয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো খুব একটা স্পষ্ট করে বলা হয় নাই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তা মালিকপক্ষ অর্থাৎ ক্রয়কারি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই বেশি রক্ষা করছে। শুধুমাত্র ইনস্যুরেন্স এর মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে তা কোনরকম তদারকি ছাড়াই একপ্রকারে পালন করা হচ্ছে। সঠিকভাবে গবেষণা করা হলে এর সঠিক চিত্র উঠে আসবে আশা করা যায়।

 

ছবি-৩

 

তাৎক্ষনিক ভাবনায় কিছু সুপারিশ

১। সরকারি ক্রয় আইন, বিধি এবং সংশ্লিষ্ট দরপত্র দলিলে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার ও সূনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা।
২। বাংলাদেশ শ্রম আইনে উল্লেখিত ক্ষতিপূরণের পরিমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আরও বৃদ্ধি করা।
৩। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাগুলো শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ যথাযত ভাবে প্রদান করছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য আলাদা মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা।
৪। শ্রমিকদের ইন্সুরেন্স এর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিকে আরও সহজলভ্য করা।
৫। নির্মাণ কাজের দূর্ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
৬। সামগ্রিক ভাবে একটি দূর্ঘটনা ঘটার পূর্বেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি ক্রয়কারি দপ্তরকে আরও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খুব জোরালো ভাবে নজরদারি করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সংবাদপত্রের পাতা থেকে

সরকারি কেনাকাটায় ১০% মার্জিন বাতিলের উদ্যোগ

কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিযোগীতা বাড়ানো, নতুন দরদাতাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা ছাড়াও বিশ্বব্য‍াংকের চলমান বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির শর্ত

Read More »
সূ-চর্চা

গেম থিওরির আদর্শ মডেল ও বিভিন্ন ধরণের গেমঃ প্রকিউরমেন্টের সাথে যার আছে নিবিড় সম্পর্ক

গেম থিওরিকে বাংলায় বলা যায় ক্রীড়াতত্ত্ব। গেম থিওরি কোথায় ব্যবহৃত হয় ? আসলে প্রশ্ন হবে কোথায় ব্যবহার হয় না। গেম

Read More »
ক্রয়কারি ফোরাম

পাবলিক প্রকিউরমেন্টে গেম থিউরি’র ভূমিকা ও প্রয়োগ

গেম থিওরি (Game Theory) কে বাংলায় বলা যায় ক্রীড়াতত্ত্ব। গেম থিওরি নিয়ে সহজ বাংলায় বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন। এই গেম

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top