শ্রীলংকার জাতীয় ক্রয় কমিশন (National Procurement Commission) এর তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ২০- ২৩ নভেম্বর ২০১৭ইং পর্যন্ত ঢাকায় চার দিনব্যাপী এক সরকারি সফরে এসে বাংলাদেশের সরকারী ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও ই-জিপি সিস্টেমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিল Dr. Palitha Ekanaiyake, সদস্য, NPC। দলটির অন্য দুই সদস্য হল M. Vamadevan, Member, NPC এবং W. A. de Alwis, Director, Procurement Investigation, NPC। প্রতিনিধি দলের সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার সংস্কার কার্যক্রম এবং ই-জিপি বাস্তবায়নে এর সফলতার উপর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা শ্রীলংকায় প্রয়োগ করা।
প্রতিনিধি দলটির নেতা Dr. Palitha Ekanaiyake বলেন যে, শ্রীলংকার সরকার তাদের সরকারি ক্রয়ের প্রয়োজনীয় আইন, বিধি প্রস্তুত করতে এবং তাদের দেশে ই-জিপি প্রবর্তনের জন্য দুই বছর আগে ক্রয় কমিশন গঠন করেছে। তারা এজেন্সি পর্যায়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্টের ব্যবহার এবং ই-জিপি বাস্তবায়নের অগ্রগন্য ভূমিকা জানার জন্য এলজিইডিতে ২২ নভেম্বর তারিখে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তারা বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাত করেছেন।
শ্রীলংকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এর বর্তমান চিত্র
সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শ্রীলংকার সরকার ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫৯৭ বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করেছে যা সরকারি মোট ব্যয়ের প্রায় ২৬ শতাংশ।
শ্রীলংকা সরকারের কাছে এই মূহুর্তে সরকারী ক্রয় ব্যবস্থার সংস্কার একটি সময়োপযোগি এজেন্ডা। দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গূরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে গৃহযুদ্ধের শেষ হবার সাথে সাথে, যা তিন দশক ধরে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই এখন একটি অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্যে জানুয়ারি ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই বর্তমান সরকার দেশের সরকারি খাতের উন্নয়নে বিশেষভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকল দলের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
এতোদিন Government Procurement Guidelines ২০০৬ এবং Procurement Manual ২০০৬ এর মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
২০১৪ সালে শ্রীলংকায় বিশ্বব্যাংকের Development Policy Loan (DPL) কৌশলপত্রে সরকারি অর্থ ব্যয় কার্যক্রমে পূনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে, বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ার সংস্কারের পাশাপাশি ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রবর্তন করা, ইত্যাদির সাথে সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
National Procurement Commission (NPC)
সংবিধানের ১৯ তম সংশোধনী অনুযায়ী ২০১৫ সালের শেষের দিকে সরকারি ক্রয় কমিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার লক্ষ্য বর্তমান সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা। কমিশনের প্রধান ম্যান্ডেট হল যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক এবং কার্যকর সরকারি ক্রয় আইন এবং সরকারী খাতের ক্রয় প্রক্রিয়ার পদ্ধতি প্রণয়ন করা।
লক্ষ্যনীয় হলো, বাংলাদেশে সফরে প্রতিনিধি দলটির ৩ জনই এই ক্রয় কমিশনের সক্রিয় সদস্য।
কিছু বিষয় যা চোখ এড়িয়ে যায় না
শ্রীলংকায় সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার সংস্কারে যে বিষয়গুলো একটু আলাদা করে চোখে পড়ে তা হলোঃ
১। সংবিধানের ১৯ তম সংশোধনী অনুযায়ী ২০১৫ সালে যে সরকারি ক্রয় কমিশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা সম্পুর্ন স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি সংস্থা,
২। সরকারি ক্রয়ে অনুমোদনের ক্ষমতা শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাদেরই আছে। কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে তা ন্যাস্ত করা হয় নি,
৩। ২০১৯ সালের মধ্যেই ই-জিপি চালুর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং এর সাথে সাথে প্রথম থেকেই ই-নিলাম, ই-ক্যাটালগ, ইত্যাদি আকর্ষনীয় feature সংযুক্ত রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই তিন সদস্যের ছোট্ট কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী টিমের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার হয়েছে যে তারা তাদের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য অনেক আম্ভরিক এবং এক সুদূর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রয়োজনীয় রেফারেন্সঃ
১। The Sunday times: Sri Lanka’s public procurement to be streamlined, made more transparent
২। Daily news: e-GP for transparent public procurement