ফরিদপুর, ০৬ জুলাই
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের ফরিদপুর পুলিশ সুপার অফিসের বিভিন্ন খাতের মালামাল সরবরাহের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা। হাইওয়ে পুলিশ সুপার অফিসের টেন্ডার কার্যক্রমে অনিয়মে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঠিকাদাররা।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার অফিসে মালামাল সরবরাহের জন্য গত ১০ জুন পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সিডিউল বিক্রয়ের স্থান এবং তারিখ ও সময় : হাইওয়ে পুলিশ, মাদারীপুর রিজিয়ন, ফরিদপুর এর কার্যালয়, তারিখ : ০২-০৭-২০১৮ ইং, সময় ০৫.০০ ঘটিকা। দরপত্র দাখিলের স্থান, তারিখ ও শেষ সময় : হাইওয়ে পুলিশ, মাদারীপুর রিজিয়ন, ফরিদপুর এর কার্যালয়, তারিখ : ০৩-০৭-২০১৮ ইং, সময়ঃ ১২.০০ ঘটিকা। দরপত্র খোলার স্থান, তারিখ ও সময় : হাইওয়ে পুলিশ, মাদারীপুর রিজিয়ন, ফরিদপুর এর কার্যালয়, তারিখ :০৩-০৭-২০১৮ ইং, সময়ঃ ১৪.০০ ঘটিকা।
উল্লেখিত বিজ্ঞপ্তিতে সিডিউল ক্রয়ের জন্য মাত্র একদিন সময় দেওয়া হয়েছে। যা সরকারি নিয়ম বর্হিভূত। সরকারি নিয়মানুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীনে অভ্যন্তরীন ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ, কার্য সম্পাদন বা ভৌত সেবার জন্য বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশের তারিখ হতে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রয়ের ক্ষেত্রে নূন্যতম ১৪ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ সুপার অফিস মাত্র একদিনের সময় দিয়ে তড়িঘড়ি করে সিডিউল বিক্রি করে। ওই অফিসের পছন্দের ঠিাকাদারদের টেন্ডার পাইয়ে দিতেই এমন অনিয়ম করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে ঠিকাদাররা ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সিডিউল কিনতে গেলে বাধা প্রদান করেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। মাদারীপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশেই কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের বাধা দিয়েছে কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ করেন ঠিকাদাররা। অফিস চত্বর থেকেই সাংবাদিকদের মোবাইলের মাধ্যমে এ ঘটনা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঠিকাদাররা। খবর পেয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদেরও অফিসে ঢুকতে না দিয়ে তাদের সাথে অসদাচারন করেন। এঘটনায় বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে হাইওয়ে পুলিশ সুপার অফিসের কর্মকর্তাদের। সংবাদ প্রকাশের পর ঠিকাদারদের জন্য সিডিউল কেনা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই দিন প্রায় ৪৫ জন ঠিকাদার সিডিউল ক্রয় করেন বলে জানা যায়।
এবিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিক নিয়মেই হয়েছে। সিডিউল ক্রয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে একদিন সময় নির্ধারন করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী নূন্যতম ১৪ দিন সময় দিয়েই সিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। সিডিউল জমা দেওয়ার সময় ঠিকাদারদের বাধা ও দরপত্র খোলার সময় ঠিকাদারদের ওই স্থানে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারদের অফিসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়নি। দরপত্র খোলার সময় অনেক ঠিকাদারই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে গত ৩ জুলাই একটি দৈনিক পত্রিকার খবরে বলা হয় হাইওয়ে পুলিশের টেন্ডারে ৪০টি সিডিউল জমা পড়েছে। প্রকাশিত খবরে হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, স¤প্রতি হাইওয়ে পুলিশের টেন্ডার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কয়েকটি গনমাধ্যমে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সত্য নয়। ওই টেন্ডারে ছয় গ্রুপের কাজে ৪০টি সিডিউল জমা পড়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। যাদের কাগজপত্র সঠিক ছিলনা তারাই ভূল তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছেন।
পত্রিকায় হাইওয়ে পুলিশ সুপারের প্রকাশিত বক্তব্যে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ঠিকাদাররা। তারা বলেন, মূলত সিডিউল ক্রয়ের সময় অফিসের কর্মকর্তারা বাধা দিচ্ছিল। পরদিন টেন্ডারের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে হাইওয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সিডিউল উন্মুক্ত করা হয়। যে সাংবাদিকদের লেখনির কারনে সিডিউল ক্রয় উন্মুক্ত করা হলো সেই খবরকেই হাইওয়ে পুলিশ সুপার অসত্য বলে উল্লেখ করেছেন। হাইওয়ে পুলিশ সুপারের এধরনের বক্তব্য প্রমান করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ছিল।
হাইওয়ে পুলিশের টেন্ডার নিয়ে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর গণমাধ্যমকে দোষারোপ করে হাইওয়ে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেনের যে বক্তব্য একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হাসান রুবেল। সভাপতি বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। টেন্ডারে সিডিউল ক্রয়ের জন্য একদিন সময় দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। সরকারি নিয়মানুযায়ী দুই কোটি টাকা পর্যন্ত মালামাল সরবরাহের সিডিউল ক্রয়ে অন্ততপক্ষে ১৪দিন সময় নির্ধারন করে দিতে হয়। তিনি বলেন, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য কাম্য নয়। তিনি এব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।