প্রথমবারের মতো ব্রাজিলে
1st time in Brazil
ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় ব্রাজিলকে। ফুটবল উত্তেজনা, সঙ্গে সাম্বা – ব্রাজিলের বড় আকর্ষণ। তবে এখানেই শেষ নয়, প্রকৃতির দিক দিয়েও ব্রাজিল অপরূপ এক দেশ। অনন্য সব রূপের সন্নিবেশে ব্রাজিল পর্যকদের কাছে সবসময় এক আকর্ষণীয় জায়গার নাম। বাংলাদেশের সাথে ৯ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। শুধু সাত সমুদ্র তের নদী নয়, দেশটিতে আসতে মহাসাগরও পাড়ি দিতে হয়।
গত ২০১৬ইং সনের নভেম্বরের শেষ দিকে আমাদের ব্রাজিল ভ্রমনের সুযোগ হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে কিছু ধারনা নেয়ার (ধুউউর ………… আসলে তো মনে মনে ইচ্ছে ছিলে ঘুরে বেড়ানোর ………… তা না হয় গোপন-ই থাকলো)। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। পুরো প্রোগ্রামের বেশির ভাগই প্রশিক্ষন ক্লাশ আর প্রেজেন্টেশনে ঠাসা।
তাহলে, প্রশিক্ষন, প্রেজেন্টেশন আর বক্তৃতায় কি শিখলাম …………… সেটাই না হয় আগে বর্ণনা করা হোক। পরের দিকে কি কি দেখার সৌভাগ্য হলো আর কি কি দেখা হলো না সেটার কিয়দংশ হলেও লিপি বদ্ধ থাকবে। এখন বিষয়ে আসা যাক।
ঘটনা-বিবরণঃ ব্রাজিলের সরকারি ক্রয় পরিক্রমা
ব্রাজিলের সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রায় পুরোটাই বিকেন্দ্রিকরণ করা আছে। এখানে ২৬ টি ফেডারেল স্টেট, ১টি ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট, ৫,৫৬৫ টি মিউনিসিপালিটিস নিয়ে প্রায় ৩৪ হাজারের উপর ক্রয়কারী অফিস আছে। ব্রাজিলের সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য বিবর্তন গুলো সময়ের পরিক্রমায় তুলে ধরার চেষ্টা করলামঃ
১৯৮৮ সাল: ক্রয় আইন ও বিধি প্রণয়নের জন্য ফেডারেল সংবিধান সংশোধন করা হয়,
১৯৯৩ সাল: General Bidding আইন প্রকাশ করা হয়,
১৯৯৪ সাল: SIASG (the Integrated System of Administration and General Services বা ফেডারেল প্রশাসনের এর একটি ম্যানেজমেন্ট টুল) চালু করা হয়,
২০০০ সাল: স্বয়ংক্রিত নিলাম পদ্ধতি বা Electronic Auction (Pregão Eletrônico) এর সূচনা হয়,
২০০১ সাল: Comprasnet (Purchasing Portal of the Federal Government) চালু করা হয়,
২০০৫ সাল: Reverse Auction (নিলাম) পদ্ধতিকে আবশ্যপালনীয় পদ্ধতি হিসেবে এবং Electronic Reverse Auction পদ্ধতি কে সবচেয়ে পছন্দনীয় পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে আইন প্রণয়ন করা হয়,
২০০৬ সাল: ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (small entrepreneurs) এর জন্য আলাদা ক্রয় আইন জারী করা হয়,
২০১১ সাল: কনফেডারেসন কাপ ২০১৩, ওয়ার্ড কাপ ২০১৪, অলিম্পিক গেমস ২০১৬, ইত্যাদি কার্যক্রমকে সামনে রেখে নতুন আইন (RDC) প্রণয়ন করা হয়,
২০১২ সাল: জাতীয় টেকসই ক্রয় গাইডলাইন (national sustainable procurement guideline) প্রণয়ন করা হয়
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ব্রাজিলে কার্যকর ভাবে ই-প্রকিউরমেন্ট চালু হয় ১৯৯৪ সালে। এই ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের SIASG এবং Comprasnet ২টিই আমার কাছে নতুন, তাই একটু আলাদা করে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়, ব্রাজিলের এই ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। অর্থাৎ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও একদম বিনামূল্যে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন এবং পরবর্তীতে তা বছর বছর রিনিউ করা যায়।
SIASG
SIASG সরকারের General Services System (SISG) এর প্রয়োগগত কার্যক্রম (operational activities) পরিচালনার জন্য এটি একটি computerized সিস্টেম। এটা সরকারী বিভিন্ন দপ্তর এবং সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
SIASG এর উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ক্রয় ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল করা, এর মধ্যে আবার অনেকগুলো মডিউল আছে যেমনঃ
– ঠিকাদারদের রেজিষ্ট্রেশন মডিউল (SICAF)
– Prices রেজিষ্ট্রেশন মডিউল (SIREP)
– Catalog of Materials (CATMAT)
– Catalog of Services (CATSERV)
– Electronic Disclosure Shopping মডিউল (SIDEC)
– Contract Management মডিউল (SICON)
– RDC মডিউল
Comprasnet
Comprasnet (www.comprasnet.gov.br) পুরোপুরি SIASG সিস্টেমের সাথে integrated। এটা অনলাইন নিলাম প্রক্রিয়া পরিচালনার একটি প্লাটফরম। এর মাধ্যমে ঠিকাদার বা সরবরাহকারীরা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্র দলিল সহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন-বিধি সংক্রান দলিলাদি দেখতে পারেন। সাধারন জনগন-ও এর মাধ্যমে অনলাইন নিলামের বিভিন্ন আপডেট দেখতে পারেন।
২০০৬ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে Comprasnet সরচেয়ে কার্যকারি সিস্টেম বলে বিবেচিত হয়েছিল।
Comprasnet সিস্টেমটাতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার হিট রেজিষ্ট্রেশন করা হয়ে থাকে। সিস্টেমকে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করার জন্য এতে ডিজিটাল সার্টিফিকেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
ComprasNet ব্রাজিলে সরকারি ক্রয়ের জন্য একটি বৃহৎ অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এর মাধ্যমে পরিচালিত Electronic Reverse Auction কার্যক্রমটি খুব-ই আকর্যণীয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তাই বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করার লোভ সামলাতে পারছি না।
প্রথমেই বলা হয়েছে ব্রাজিলের আইন অনুযায়ি নিলাম (Auction) পদ্ধতিকে আবশ্যপালনীয় পদ্ধতি এবং স্বয়ংক্রিয় নিলাম (Electronic Auction) পদ্ধতি কে সবচেয়ে পছন্দনীয় পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে করা হয়েছে।
একটি ComprasNet নিলাম
ComprasNet সিস্টেমে নিলাম প্রক্রিয়াটি মোট ৩টি ধাপে শেষ হয়।
১। Pre-bidding
প্রথমে ক্রয়কারীকে প্রতিটি লটের জন্য রিজার্ভেশন মূল্য (অফিসিয়াল মোট দর) নির্ধারণ করতে হবে। এরপর, ক্রয়কারীকে অন্তত আট কার্যদিবস পূর্বে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি এবং দরপত্র দলিল ComprasNet সিস্টেমে প্রকাশ করতে হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশের জন্য সীমা নির্ধারন করা আছে।
২। Bidding
Bidding প্রক্রিয়াটিতে মোট ৩টি পর্যায় –
– ১ম পর্যায়ঃ সময় মোট কমপক্ষে ৮ কর্মদিবস,
– ২য় পর্যায়ঃ ৩০ মিনিট,
– ৩য় পর্যায়ঃ সিষ্টেম কর্তৃক নির্ধারিত সময়
প্রতিটি লটের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার পূর্বেই আগ্রহী ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দিতে হয়। প্রথম অবস্থায় শুধু একটি দর দাখিল করতে হয়। যখন auction শুরু হয় তখন সর্বনিন্ম দর ঘোষণা করা হয় এবং দরপত্র জমাদানকারীরা নতুন দর দাখিল করতে পারে। একজন দরদাতা একাধিক দর দাখিল করতে পারবে এবং তা তার পূর্বের দর থেকে এবং অন্যান্য ঠিকাদারের সর্বশেষ দাখিলকৃত দর থেকেও কম হতে হবে। সিষ্টেমে সর্বশেষ দাখিলকৃত দর-ই শুধু দেখা যায় কিন্তু দর দাখিলকারীর নাম পরিচয় গোপন থাকে। তবে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে, যেমন অনিচ্ছাকৃত ভূল দর বা অত্যাধিক কম দর দাখিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম দর থেকেও বেশি দর দাখিল করা যায়। সফটওয়ারে একটা এলগরিদম তৈরী করা আছে যা নিজে থেকেই এরকম অস্বাভাবিক দর ধরতে পারে এবং এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দর সিষ্টেম থেকে বাতিল করে দেয়া যায়।
৩০ মিনিট ধরে এই অনলাইন নিলাম চলতে থাকে এবং পরে সিষ্টেমে একটি সতর্কবাণী দেয়া হয়।
Ending Rules in Online Auctions
নিলামের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নিলাম কিভাবে শেষ হবে। ComprasNet এর বেলায় নিলাম প্রক্রিয়াটি কখন শেষ হবে তা সিষ্টেম randomly নির্ধারণ করে থাকে। এখানে ক্রয়কারী বা দরপত্রদাতাদের কোন হাত থাকে না। ক্রয়কারী শুধু প্রতি বারে কি পরিমান দর কমানো যাবে তা এই ২য় ধাপ শুরুর পূর্বে নির্ধারণ করে দিতে পারেন। প্রথম ৩০ মিনিট শেষ হবার পর ComprasNet সিষ্টেম কর্তৃক নির্ধারিত অতিরিক্ত সময় অনুযায়ি নিলাম শেষ হয়। এভাবে ঠিকাদাররা আক্রমনাত্মক দর দিতে উৎসাহিত হয়।
৩। Post-Bidding
Bidding প্রক্রিয়া শেষ হবার পর ক্রয়কারী যাচাই করে দেখেন যে সর্বশেষ দাখিলকৃত দর রিজার্ভেশন মূল্য থেকে কম না বেশি। যদি কম হয় তবে দরদাতাকে দরপত্র দলিলে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে বলা হয়। কাগজপত্র যাচাই করে সঠিক পাওয়া গেলে চুক্তির জন্য নোটিশ দেয়া হয়। যদি সঠিক না পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে ডকুমেন্ট জমা দিতে বলা হয় এবং তা যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এভাবে যদি সর্বনিম্ন দর রিজার্ভেশন মূল্য থেকে বেশি হয়ে যায় তবে ক্রয়কারী প্রয়োজনে দরপত্র বাতিল করতে পারে অথবা দর নেগোশিয়েশন আহবান জানাতে পারে। দরদাতা নেগোশিয়েশনে রাজী না হলে দরপত্র বাতিল বা পরবর্তী সর্বনিম্ন দরদাতাকে সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নেগোশিয়েশনে আহবান করা হয়। যতক্ষন রিজার্ভেশন মূল্য থেকে কম মূল্য না পাওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকে। খুব কম ক্ষেত্রেই রিজার্ভেশন মূল্য থেকে বেশি মূল্যে চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং এরূপ ক্ষেত্রে ক্রয়কারীকে special audit এর মুখোমুখি হতে হয়।
ComprasNet সিস্টেমে নিলাম প্রক্রিয়াটি আমার জন্য ছিল একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা। ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষ এই নিলাম প্রক্রিয়াটি ComprasNet এর ট্রেইনিং সার্ভারে প্রায় ১ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যেই পুরো সেশন আমাদেরকে দেখিয়েছিল।
তাদের এই ট্রেইনিং সেশনের মাঝেই আরেকটি নতুন বিষয়ে জানার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আর তা হল ব্রাজিলিয়ান ক্রয় আইনে “Price Registration সিস্টেম”।
Price Registration system
ব্রাজিলিয়ান সরকার তাদের নিজেদের জন্য সরকারী ক্রয়-কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা, transactions খরচ কমানো, প্রসেস সহজীকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র নিশ্চিতের জন্য একটি ভিন্ন ধরনের সিস্টেম চালু করেছে – যা হল “Price Registration (PR)”। এটা আসলে এক ধরনের pooled বা shared procurement সিস্টেম যার ফলে শুধুমাত্র একটি চুক্তির মাধ্যমে একাধিক ক্রয়কারী সুবিধা পেয়ে থাকে।
Price Registration সিস্টেমর ক্ষেত্রে, একটি ক্রয়কারী দপ্তর specification ও অফিসিয়ার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে দরপত্র আহবানের প্রায় ৩০ দিন পূর্বেই তাদের SIASG অথবা Comprasnet সিস্টেমে নোটিশ প্রদান করে। এই নোটিশ সকল দপ্তর দেখতে পারে। এখন, কোন ক্রয়কারী যদি মনে করে যে একই রকম কার্য, পণ্য বা সেবা তার-ও প্রয়োজন, তখন তিনি সিস্টেমে দরপত্র আহবানকারী দপ্তর বরাবর request পাঠাতে পারেন। এভাবে যত সম্ভব ক্রয়কারী request পাঠাতে পারেন। দরপত্র আহবানকারী দপ্তর সকল চাহিদা একসাথে করে অনলাইনে দরপত্র আহবান ও দরপত্র ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে রেসপনসিভ দরদাতা নির্ধারন করেন। অতঃপর, চাহিদা প্রেরণকারী দপ্তরসমূহ তাদের প্রেরিত চাহিদা অনুযায়ী চুক্তি সম্পন্ন করে থাকে। সুতরাং, দরপত্র একটি হলেও চুক্তি অনেকগুলি, যার যার তার তার।
এখন, ব্রাজিলের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, Price Registration সিস্টেম ব্যবহারের ফলে তাদের দরপত্র ব্যবস্থাপনায় সময় কম লাগছে এবং অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক দর পাওয়া যাচ্ছে। সবাই খুশি।
ব্রাজিলের ই-প্রকিউরমেন্ট সেবা প্রদানকারী সংস্থা
ই-প্রকিউরমেন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে এর সাথে জড়িত সেবা প্রদানকারী সংস্থার গূরুত্ব অপরিসীম। এর কর্দক্ষতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, ভিসন, মিসন ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয় চলে আসে যা আসলে আলোচনা করে বোঝানো সম্ভব নয়। মূহূর্তের অসাবধানতার জন্য কিন্তু ৮০০ কোটি টাকাও নাই হয়ে যেতে পারে। আমাদের একটি ই-প্রকিউরমেন্ট সেবা প্রদানকারী সংস্থার সদর দপ্তর ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। অল্প সময়ে জানার সুযোগ-ও অনেক বড় সুযোগ।
SERPRO: Company
ফেডারেল ডাটা প্রসেসিং সার্ভিস (Serviço Federal de Processamento de Dados বা SERPRO) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানকারী সংস্থা। সরকারের রাজস্ব তহবিল ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। এই সংস্থা ব্রাজিলের ফেডারেল সরকারের জন্য কম্পিউটার সিস্টেম, বাজেট ম্যানেজমেন্ট, অন্যান্য স্টেট ও মিউনিসিপালিটি সমূহের মাঝে সমন্বয় সাধন, আমদানি-রপ্তানী কার্যক্রম মনিটরিং, ডিজিটাল আয়কর জমা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সেবা প্রদান করে থাকে।
SERPRO তে প্রায় ৮,৫২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত এবং এর শাখা ব্রাজিলের ৩৩০ টি শহরে বিস্তৃত। বছরে প্রায় এক বিলিয়নের বেশি অনলাইন লেনদেন পরিচালনা করে থাকে। এর সদর দপ্তর ব্রাসিলিয়া।
SERPRO এর প্রধান কাজই হচ্ছে সরকারের কম্পিউটার সিস্টেম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করা। এর দুইটি ডাটা সেন্টার যার একটি ব্রাসিলিয়া এবং অপরটি সাও-পাওলো তে যার মাধ্যমে ২৪/৭ ধরে সকল কার্যক্রম হয়ে থাকে। এটা ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে SERPRO এর সাথে Internet Security Systems (ISS) এর সমন্বয় সাধন করে হয়েছে যার ফলে এটা সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ প্রযুক্তি হিসেবে ব্রাজিলে কাজ করে যাচ্ছে।
সংক্ষিপ্তসারঃ
ক) ব্রাজিল সরকার SIASG (ম্যানেজমেন্ট টুল) সিস্টেমের পর Comprasnet (প্রকিউরমেন্ট প্লাটফর্ম) সিস্টেম প্রবর্তন করেছে। অর্থাৎ তারা আগে ডাটাবেজ টা শক্তিশালী করে তারপর ক্রয়কার্যক্রম এর মতো একটি অতি-সংবেদনশীল কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।
খ) বেসরকারি এন্টারপ্রেনারদের জন্য প্রকিউরমেন্ট প্লাটফর্ম বিনামূল্যে ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, এতে বেসরকারি খাত উৎসাহিত হবে, এটা একধরনের প্রণোদনা যা পারতপক্ষে অবাধ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের ব্যয় হ্রাস করবে। গবেষণাতেও তাই প্রমাণিত হয়েছে।
গ) Electronic Reverse Auction পদ্ধতিটি খুবই কার্যকর ও জনপ্রিয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। এতে মূল্যায়নে সময় কম লাগে এবং ব্যবস্থাপনার ঝামেলাও কম।
ঘ) Price Registration system পদ্ধতিটি-ও একটি চমৎকার ধারণা। এটা অভিন্ন ও স্বল্প মূল্যের কিন্তু প্রতিনিয়ত ক্রয় করতে হয় এরকম পণ্য, কার্য বা সেবার জন্য খুবই কার্যকর। এতে জীবন সহজ ও সরল হবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। যে সময় টা বেঁচে যাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, তা চুক্তি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা যায়।
ঙ) ই-প্রকিউরমেন্ট পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন SERPRO এর মডেলটাও অনুকরণীয় হতে পারে। SERPRO এর প্রধান কাজই হচ্ছে সরকারের কম্পিউটার সিস্টেম পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করা। শুধুমাত্র একটি সফটওয়ার বা প্লাটফর্মকে ঘিরে এই কম্পানী গড়ে ঊঠে নাই, বরং একে ঘিরেই অনেক প্লাটফর্ম পরিচালিত হচ্ছে। এতে সার্বিকভাবে একটি স্বমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। কোন অন্ধ জনের হাতি দেখার ব্যবস্থা করা হয় নাই।
পরিশেষঃ
পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশটিতে ট্রপিকাল রেনফরেস্ট অ্যামাজন এর নিশ্ছিদ্র অকৃত্রিম আদিমতা, এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও জলের ভাণ্ডার; মহা-নদী আমাজন এ প্রাণের ছড়াছড়ি যার কাছে সেরা দশ নদীর সম্মিলিত পানির পরিমাণও তুচ্ছ; আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃত তটরেখা; পান্টানাল ওয়েটল্যান্ডে (পৃথিবীর বৃহত্তম জলাভূমি) ভয়ংকর পিরানহা আর চিতাবাঘের উপস্থিতি, ফুটবল পাগল মানুষগুলোর ভরপুর প্রাণচাঞ্চল্য সবকিছুই পর্যটকদের নিবিড় ভাবে আকর্ষণ করে আর কাছে টানে। আমরাও এর থেকে ব্যতিক্রম নই। তবে আমাদের সবচেয়ে বেশি মোহিত করেছে এই দেশের মানুষগুলোর ই-প্রকিরমেন্টের মত একটি অতীব প্রয়োজনীয় সেবা কে নিজেদের মত করে গুছিয়ে নিয়ে তা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরার দৃষ্টান্ত স্থাপন।
প্রকৃতি বৈজ্ঞানি চার্লস ডারউইন ১৮৩১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘বিগল’ জাহাজে করে ইংল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে ছিলেন। ৪ এপ্রিল ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরো পৌঁছায় জাহাজ। স্থানীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শনে যান। সেখানে পাহাড়ের উপর উঠে এক অদ্ভুত ছত্রাকের দেখা পান। তখন তার মনে পড়ে, এ ধরনের ছত্রাক ইংল্যান্ডেও আছে। এতো দূরের দুটি প্রজাতিতে মিল দেখে তিনি ধাঁধার মধ্যে পড়েন। তার নতুন উপলব্ধি ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু এখান থেকেই। সূচনা হয়েছিল জীববৈচিত্রের এক নতুন ধারা।
কোথায় ব্রাজিল ……… আর কতদূরেই বা বাংলাদেশ ………………… মিল ও অমিল উভয়ই অনেক, মাঝের তফাৎ টাও দৃশ্যমান। চাইলে এসবের মধ্য থেকেও এগিয়ে যাবার প্রেরণা পাওয়া যাবে। যথাযত কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বুঝলে হয় !!!!
তারিখঃ ৮ জানুয়ারি ২০১৭