Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

টেকসই সামাজিক ক্রয়: নারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সুযোগ ও সম্ভাবনা

Facebook
Twitter
LinkedIn

মো জাহিদ হোসেন খান,
নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট),
এলজিইডি

====================

 

বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়ব্যবস্থা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে একটি প্রধান হাতিয়ার। সরকারি ক্রয় নীতি ২০২৫–এ (PPR -2025) প্রথমবারের মতো “টেকসই সামাজিক ক্রয়” (Sustainable Social Procurement) ধারণা সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি ব্যয়ের একটি অংশকে কেবলমাত্র ১। অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, ২। নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং ৩। নূতন প্রতিষ্ঠান–এর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগ একদিকে যেমন সমাজে অন্তর্ভুক্তি ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিকাশে অবদান রাখবে।

 

টেকসই সামাজিক ক্রয়: সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য


প্রথমতঃ টেকসই সরকারি ক্রয় হলো এমন প্রক্রিয়া যেখানে ক্রয়ের চাহিদা, কারিগরি নির্দেশ ও মানদণ্ডে ১। পরিবেশ রক্ষা, ২। সামাজিক অগ্রগতি এবং ৩। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে একীভূত করা হয়।

অন্যদিকেঃ টেকসই সামাজিক ক্রয় বলতে বোঝায় সরকারি ক্রয়ের সেই প্রক্রিয়া, যেখানে শুধুমাত্র গুণগতমান ও মূল্যের হিসাব নয়, বরং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, দারিদ্র্য হ্রাস, লিঙ্গ সমতা এবং স্থানীয় উন্নয়ন-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

PPR 2025 অনুযায়ী —

সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে বার্ষিক পরিচালন বাজেটের ন্যূনতম ২৫% সংরক্ষিত থাকবে সামাজিক ক্রয় ক্যাটেগরির জন্য (বিশেষায়িত ক্রয়ের ক্ষেত্র ব্যতিরেকেঃ ৮০ (১) দ্রষ্টব্য)।

এ ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং নূতন প্রতিষ্ঠান।

পণ্য ও ভৌতসেবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ কার্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত চুক্তি এই শ্রেণির জন্য সীমিত রাখা হবে।

এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা ও স্থানীয় উন্নয়ন সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ক্রয়কারী সার্বিক ক্রয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিকরণ সাপেক্ষে সামাজিক ক্রয় ক্যাটেগরির মাধ্যমে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ করিতে পারিবে।

 

নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান: সংজ্ঞা ও গুরুত্ব


PPR 2025 অনুযায়ী নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বলতে বোঝানো হয়েছে—

যে সকল একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী একজন নারী।

এটি একটি ঐতিহাসিক স্বীকৃতি, যা সরাসরি নারী উদ্যোক্তাদের সরকারি ক্রয়ের সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকার দেয়।

 

গুরুত্ব:


  • নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি।
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবার পর্যায়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা।
  • জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান সুস্পষ্টকরণ।
  • এসডিজি-৫ (Gender Equality) অর্জনে সহায়ক ভূমিকা।

 

সুবিধা:


সামাজিক অন্তর্ভুক্তি: প্রান্তিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ব্যবসায় সুযোগ পায়।

অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য: ক্ষুদ্র, নারী ও নতুন উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে বাজার বৈচিত্র্যময় হয়।

নারীর ক্ষমতায়ন: সরকারি ব্যয়ে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।

স্থানীয় উন্নয়ন: গ্রামীণ ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

 

সীমাবদ্ধতা:


সক্ষমতার ঘাটতি: নারী-মালিকানাধীন বা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কম।

অর্থায়নের সমস্যা: মূলধনের সীমাবদ্ধতা বা চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রতিযোগিতার সীমাবদ্ধতা: কেবল নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য সীমিত প্রতিযোগিতা মাঝে মাঝে গুণগতমান ও মূল্য সুবিধা কমাতে পারে।

 

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ:


সচেতনতা বৃদ্ধি: অনেক নারী উদ্যোক্তা জানেন না যে এ ধরনের সুযোগ সংরক্ষিত আছে।

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: ই-জিপি ব্যবহার, টেন্ডার প্রস্তুতকরণ ও চুক্তি বাস্তবায়নে দক্ষতা প্রয়োজন।

প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা: তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেন্টরশিপ ও বিজনেস ইনকিউবেশন জরুরি।

মনিটরিং ও জবাবদিহিতা: সংরক্ষিত কোটার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

সুযোগের অপব্যবহার: অনেক নাগরিক তার পরিবারের নারীদের নামে ব্যবসার করার সুযোগ নিতে পারেন। এতে করে বহু সংখ্যক ট্রেড লাইসেন্স করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যেতে পারে। ফলে আইনের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হতে পারে।

 

উপসংহার:


টেকসই সামাজিক ক্রয় ও নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যদিও দেশের অধিকাংশ পুরুষ ব্যবসায়ীগণ এখনো ব্যবসায়ীক সাফল্য উপভোগ করতে পারেননি। পাশাপাশি অনেক নাগরিক আইনের মূল উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে পরিবারের নারীদের নামে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারেন বলে আশংকা করা যায়। অধিকন্তু, সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও শক্তিশালী মনিটরিং ছাড়া এই উদ্যোগ পূর্ণ সাফল্য নাও পেতে পারে।

সর্বোপরি এই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে টেকসই সামাজিক ক্রয় বাংলাদেশকে একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সমসাময়িক

কারিগরী প্রস্তাব মূল্যায়নে স্কোরিং বা গ্রেডিং সিস্টেমের তুলনামূলক আলোচনা

প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেনঃ মোঃ জাহিদ হোসেন খান, নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকিউরমেন্ট শাখা, এলজিইডি Mr Abu Bakkar, Procurement Consultant, HELP জোবায়দা হোসেন,

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-25

সর্বশেষ

Scroll to Top