পণ্য ক্রয়ে কারিগরী বিনির্দেশ বা specification প্রস্তুতের ক্ষেত্রে পিপিআর-০৮ এর বিধি ২৯ এ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বর্ণনা করা আছে। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক সামগ্রী যেমন কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয়ে এই নির্দেশনা সঠিক ভাবে পালিত হচ্ছে না। এতে সরকারি ক্রয়ের প্রভাবে দেশের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মার্কেটে এক ধরনের মনোপলি সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই PPR-08 নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।
বর্তমান চিত্রঃ Desktop computer এর উদাহরন
ছবি-১: Desktop computer এর স্পেসিফিকেশন ১
ছবি-২: Desktop computer এর স্পেসিফিকেশন ২
উপরে Desktop computer ক্রয়ের দুটি উদাহরন (ছবি-১ ও ২) তুলে ধরা হলো। বর্তমানে কিছু দরপত্রের স্পেসিফিকেশন যাচাই করে এবং বিভিন্ন সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে দেখা যায় প্রসেসর, মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, চিপ সেট ইত্যাদির বর্ণনা দেয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট ব্রান্ডের নাম জুরে দেয়া হচ্ছে। সাথে অনেক সময় equivalent or higher উল্লেখ করা থাকলেও দরপত্র প্রতিযোগিতায় তা কোন কাজ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। দরপত্র দাতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় আসলে তারা মূল্যায়ন কালীন ঝুঁকি নিতে রাজী না। এখানে equivalent or higher এর ব্যাক্ষ্যা তারা পরিষ্কার নয়। ফলে তারা আসলে উল্লেখিত ব্যান্ডের দিকেই ঝুঁকে পরতে উৎসাহিত হয়।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, অতি স্বল্প সময় পর পরই এসব ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মডেলের ভার্সন পরিবর্তন হচ্ছে। এতে, ক্রয়কারী তার দরপত্র আহবানের সময় মার্কেটে সহজপ্রাপ্য মডেলের ভার্সন অনুযায়ি specification প্রস্তুত করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে, দেখা যাচ্ছে প্রয়োজন না থাকলেও ক্রয়কারী upper version এর পণ্য কিনতে হচ্ছে এবং অবশ্যই তা আগের চেয়ে বেশি দামে। তার মানে, এভাবে সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলো-ই প্রচ্ছন্নভাবে আসলে ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করছে।
আবার, অনেক ক্রয়কারী তাদের দরপত্রে ম্যানুফেকচারারস অথোরাইজেশন (Manufacturer’s authorization) সার্টিফিকেট দরপত্রের সাথে জমা দেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করছে। ফলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠাগুলো আসলে এককথায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তখন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলিই আসলে নির্ধারন করে দিচ্ছে কোন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করবে বা ওই নির্দিষ্ট দরপত্রের দাখিলকৃত দর কত হবে। এখন, একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একাধিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও কল কাঠি আসলে সেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকছে।
পিপিআর-০৮ এ কি আছেঃ
পিপিআর-০৮ বিধি ২৯(২) অনুযায়ি specification প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত করতে পারে এরূপ সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নকশা বা বর্ণনামূলক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যাবে না।
বিধি ২৯(৩) অনুযায়ি কোন পণ্যের ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট, নকশা বা ধরন, country of origin, ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা আছে কম্পিউটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে, “শুধুমাত্র আইএসও কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত কম্পিউটার গ্রহণযোগ্য হবে” মর্মে উল্লেখ করা যাবে, কিন্তু কোনক্রমেই কোন সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের কম্পিউটারের নাম উল্লেখকরা যাবে না।
বিধি ২৯(৪) অনুযায়ি দরপত্রদাতাগণের সুবিধার্তে বা ক্রয়কারীর পর্যাপ্ত কারিগরী দক্ষতা না থাকলে কোন সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের বিবরণ উল্লেখ করতে পারবে, তবে এ ক্ষেত্রে “বা একইরূপ বা সমতুল্য” শব্দগুচ্ছ যোগ করতে হবে।
বিধি ২৯(৬) তে বলা আছে পুন: পুন: ক্রয় করা হয় এরূপ সাধারণভাবে ব্যবহার্য পণ্য (যেমন-কাগজ, অফিস সরঞ্জামাদি বা দৈনন্দিন ব্যবহৃত অন্য কোন পণ্য) ক্রয়ের ক্ষেত্রে, ক্রয়কারী specification নির্দিষ্ট করে তা ক্রয়কারীর ওয়েব সাইটে, যদি থাকে, প্রকাশ করতে পারবে।
বর্তমান Computer এর প্রসেসর মার্কেটের চিত্রঃ
এই মূহুর্তে আসলে কম্পিউটার মার্কেটে Intel (Intel Corporation) এবং AMD (Advanced Micro Devices Inc.) ছাড়া আর কোন প্রসেসর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাই। সার্ভার, মোবাইল, ইত্যাদির প্রসেসরের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধু নির্দিষ্ট কিছু প্রসেসর প্রস্তুত করে থাকে। এখন, সরকারি ক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের ক্রয়ের সময় পণ্যের specification কে আরও generalized না করে তাহলে মার্কেটে নতুন নতুন কম্পানী আসবে না। আপাতত এই দুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন উপায়ান্তর দেখা যাচ্ছে না। তবে, আর যাই হোক, মনোপলির চেয়ে ডুয়োপলি কিছুটা হলেও ভাল।
স্পেসিফিকেশন কেমন হতে পারেঃ
একটি গুনগত স্পেসিফিকেশন প্রস্তুতির জন্য অভিজ্ঞতা, দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি, আন্তর্জাতিক আদর্শ মান, মার্কেটের বর্তমান পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ, ইত্যাদি অনেক বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। এখানে, উপরের ছবি-৩ ও ৪ এ যথাক্রমে মালয়েশিয়া বা ভারতে আহবানকৃত দুটি দরপত্রের উদাহরন টেনে আনা যায়। এ দুটি দরপত্রে specification এমন ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা আসলে অনেকটা প্রসেসরের কোন ব্রান্ডের সাথে কোন ব্রান্ডের তুলনা হবে তার একটা স্বব্যাক্ষায়িত মতামত। আরও ভাল হয় যদি ছবি-৫ এর মতো করে প্রসেসরের আর্কিটেকচারাল কাঠামো দিয়ে Generic specification উল্লেখ করা যায় … … কোন নির্দিষ্ট ব্রান্ডের নাম উল্লেখ না করেই। তবে, এগুলো নিয়ে আরো কারিগরি আলোচনা হতে পারে।
সর্বশেষ
দরপত্র আহবানে স্পেসিফিকেশন প্রস্তুতি খুবই গূরুত্বপূর্ন বিষয়। এখানে অবহেলার কারনে অনেক সরকারি টাকার অপচয় হতে পারে। পরিশেষে, নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা যেতে পারেঃ
১। সতর্কতার সাথে specification প্রস্তুত করতে হবে যেন তা অবাধ প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্থ না করে;
২। একই ডিপার্টমেন্ট বা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সচরাচর যে সকল পণ্য ক্রয় করা হয় তার একটা তালিকা সহ Standard specification কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষন ও প্রকাশ করে রাখা প্রয়োজন যেন তা সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোকে একটা আগাম বার্তা দিতে পারে;
৩। ওয়ারেন্টির সময় বাড়িয়ে দেয়া যেন সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর কাছে এসকল পণ্যের গূরূত্ব এবং খুচরা যন্ত্রাংশের সরবরাহ দীর্ঘকাল পর্যন্ত অটুট থাকে;
৪। Manufacturer’s authorization সার্টিফিকেট দরপত্র দাখিলের সময় বাধ্যতামূলক না করা, যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তবে তা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় চাওয়া যেতে পারে।