এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক, যার মালিকানায় রয়েছে ৬৭টি সদস্য দেশ। এডিবি’র উন্নয়শীল সদস্য দেশগুলোকে সাহায্য করার মূল হাতিয়ার হলো নীতিবিষয়ক আলোচনা, খণ, ইকুইটি বিনিয়োগ, গ্যারান্টি, অনুদান ও কারিগরি সহায়তা।
বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদস্যপদ গ্রহণ করে এবং ১৯৮২ সালে ঢাকায় এডিবি’র প্রথম মাঠ-পর্যায়ের কার্যালয় স্থাপিত হয় । ১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে জ্বালানি ও পরিবহনে সহায়তা প্রদানের দিকে বৌঁকার আগে বাংলাদেশকে এডিবি খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সহায়তা
করেছে। পরবর্তীতে শিক্ষা, অর্থবাজার এবং নগরে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে সহায়তা সম্প্রসারিত হয়েছে।
এডিবি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর প্রায় সবগুলোতেই সহায়তা দেয়। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত সময়কালে এডিবি সহায়তার ৩৭ ভাগেরও বেশি ব্যবহার করা হয়েছে কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে। এরপর নজর দেয়া হয় অবকাঠামো খাতে। ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এডিবি সহায়তার ৫৫% বরাদ্দ করা হয় জুলানি ও পরিবহন খাতে। ২০০৫ সাল থেকে GAT, পরিবহন, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও পৌরসভা অবকাঠামো ও সেবা খাতে সহায়তা আরো বাড়ানো হয়।
এডিবির বাংলাদেশ পোর্টফোলিও
২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ছয়টি খাতের ৫৬টি প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
এসব খাতের মধ্যে– কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ ও গ্রামীণ উন্নয়নের আটটি প্রকল্প রয়েছে; মানব ও সামাজিক উন্নয়নের রয়েছে ১০টি প্রকল্প; জ্বালানির ৯ প্রকল্প, পরিববনে ১১ প্রকল্প, পানি ও নগর উন্নয়নে ১১ প্রকল্প এবং অর্থায়ন, সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের প্রকল্প আছে সাতটি।
জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থায়নই হচ্ছে মোট পোর্টফলিও’র ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ।
এছাড়া, ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারিগরি সহায়তার চলমান ৩৭ প্রকল্পের আর্থিকমূল্য হলো ৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।
গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবির অর্থায়নের পোর্টফলিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৫ সালে তা ৬৫০ কোটি ডলার হলেও– ২০২৩ সালে উন্নীত হয় ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারে। এক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৯ শতাংশ।
২০২৩ সালে মোট পোর্টফোলিও ছিল ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে এডিবি ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি ঋণ ছাড়ের কথা জানায়, এছাড়া বাতিল করা হয় ৩ কোটি ডলারের ঋণ।
বর্তমানে এডিবি’র সহায়তার ক্ষেত্রগুলো হলো: (১) জ্বালানি, পরিবহন এবং নগর উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা হ্রাস, (২) বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বেসরকারী খাতের অংশ্রগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, (৩) কর্মীদের উৎপাদন ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, (৪) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষির বাইরে বিভিন্ন লাভজনক পল্লী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, (৫) ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক পরিবহন ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা প্রদান, (৬) পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এবং (৭) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এবং সুশাসন উন্নয়ন। প্রতিটি ক্ষেত্রে এডিবি’র মূল প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের সম্ভাব্য ভূমিকার সযত্ন বিবেচনার ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হবে।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পুঁজিবাজারের দক্ষতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার মতো কঠিন বাধার সম্মুখীন। উন্নয়ন প্রকল্পে বড় বাধা হলো বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়া, যা কিনা পরামর্শ সেবা ক্রয়ে দীর্ঘসৃত্রিতা ও নির্মাণকাজে ঠিকাদারদের কর্মসম্পাদন ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। প্রকল্প শুরুতে দেরি, অনুমোদন প্রক্রিয়া, ক্রয় ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মতো সমস্যার মূল ক্ষেত্রগুলোতে অবস্থার উন্নতির জন্য এডিবি কাজ করছে। সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের মান বৃদ্ধির জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করে ও সামগ্রিক কাজের পরিবীক্ষণ করে।