Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

দর সমতার ক্ষেত্রে নতুন Criteria ব্যবহারে জটিলতা

Facebook
Twitter
LinkedIn

দর সমতার ক্ষেত্রে নতুন মানদন্ড (Criteria) ব্যবহারে জটিলতা
ও একটি বিকল্প প্রস্তাবনা

 

মো: সাইফুর রহমান জোয়ার্দ্দার 

 

সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আমরা সকলেই অবগত আছি যে মাননীয় সংসদ কতৃক গৃহীত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত আইনের (PPA-06) অধিকতর সংশোধনী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে গত ০১/০৮/২০১৬ ইং তারিখে গেজেট হিসাবে প্রকাশিত হয়। গেজেটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার অনেক পূর্ব থেকেই অর্থাৎ গত মে’২০১৬ এ যেদিন উক্ত সংশোধনীর খসড়া মাননীয় সংসদে বিল আকারে উখ্খাপিত হয়েছিল সেদিন থেকেই আনীত সংশোধনী সকলের আলোচনায় ছিল। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা ইতোপূর্বে একাধিকবার সংশোধন হলেও এবারে বিষয়টি বেশী আলোচনায় থাকার কারন আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন; যেখানে নতুন দুইটি উপ-ধারা (৩) ও (৪) সংযোজিত হয়, এবং বলা হয়েছে-

“(৩) উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীন অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন দরপত্রদাতা কর্তৃক দরপত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় (Official Cost Estimate) ১০% (শতকরা দশ ভাগ) এর অধিক কম বা অধিক বেশি দর উদ্ধৃত করা হইলে উক্ত দরপত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

(৪) উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত দরপত্র মূল্য সমতার ক্ষেত্রে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ও কৃতকার্য দরদাতা নির্বাচন করিতে হইবে, কিন্তু লটারির মাধ্যমে কৃতকার্য দরদাতা নির্বাচন করা যাইবে না।”

আমাদের জানা আছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সীমিত দরপত্র পদ্ধতির অধীন অনধিক ২ (দুই) কোটি (সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী যা তিন কোটি) টাকার অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলন উল্লেখ করতে হবে। তবে কোন দরদাতা কর্তৃক দাপ্তরিক প্রাক্কলনের ৫% (পাঁচ শতাংশ) এর অধিক কম বা অধিক বেশি দর দরপত্রে উদ্ধৃত করা হলে উক্ত দরপত্র বাতিল বলে গন্য হবে। এছাড়া সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরের সমতা হলে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে লটারির প্রয়োগ হবে।

অর্থাৎ আমাদের সকলের কাছে আইনের মাধ্যমে দরপত্রদাতা কর্তৃক দরপত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় (Official Cost Estimate) একটি নির্দিষ্ট অংকের অধিক কম বা অধিক বেশি দরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার বিষয়টি নতুন নয়; এবং এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করার ফলে দরদাতাদের দরের ক্ষেত্রে কি ধরনের ফলাফল আসতে পারে তাও আমাদের অজানা নয়। এবারে বিষয়টি বেশী আলোচনায় থাকার কারন সংশোধনীতে আনীত ২য় শর্তটি, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে দরপত্র মূল্য সমতার ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে কৃতকার্য দরদাতা নির্বাচন করা যাবে না এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ও কৃতকার্য দরদাতা নির্বাচন করতে হবে।

উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় দরপত্র মূল্য সমতার ক্ষেত্রে ইতোপূর্বেও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত বিধিতে নির্দেশনা ছিল (বিধি ৯৮(৩১), ৯৮(৩২) ও ৯৮(৩৩)) যা নিম্নরুপ:

“৯৮(৩১) ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরের সমতার ক্ষেত্রে, যে দরপত্রদাতার ক্রয়কারীর অধীন অতীত কার্যসম্পাদনের মান উৎকৃষ্টতর, তাহাকে নির্বাচন করিতে হইবে এবং সেইক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহের মেয়াদ, সরবরাহকৃত পণ্য বা সম্পাদিত কার্যের গুণগত মান, অভিযোগ সংক্রান্ত ইতিহাস ও কার্যসম্পাদনের নির্ণায়কসমূহ বিবেচ্য হইবে।

৯৮(৩২) উদ্ধৃত মূল্যের সমতার ক্ষেত্রে যদি কোন দরপত্রদাতারই ক্রয়কারীর অধীন কার্যসম্পাদনের কোন অতীত অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহা হইলে নিুবর্ণিত বিষয়সমূহ বিবেচনাক্রমে এবং বিধি ১০০ অনুসারে উত্তর-যোগ্যতা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় দৃঢ়তররূপে সমর্থিত হওয়া সাপেক্ষে দরপত্রদাতা নির্বাচন করা যাইবে।

(ক) কার্য সম্পাদনের চুক্তির ক্ষেত্রে, দরপত্রদাতা কর্তৃক দরপত্রে উল্লিখিত অন্য কোন ক্রয়কারীর অধীন উৎকর্ষে উচ্চতর অতীত কার্যসম্পাদনের অভিজ্ঞতা, বা প্রস্তাবিত কার্যসম্পাদনে অধিকতর দক্ষ কর্মপরিকল্পনা বা কার্য সম্পাদন পদ্ধতি প্রদান করা হইয়া থাকিলে; এবং

(খ) পণ্য সরবরাহ চুক্তির ক্ষেত্রে, ব্যবহারকারীগণের বিবেচনায় পণ্যের গুণগত মান অধিকতর সুবিধাজনক বিবেচিত হইলে।

(৩৩) উপ-বিধি (৩১) এর অধীন কৃতকার্য দরপত্রদাতা লটারীর মাধ্যমে নির্বাচন করা যাইবে না।“

বিধিতে উপরোল্লিখিত নির্ণায়কসমূহ অনেক আগে থেকে বিদ্যমান থাকলেও এবং উপরোক্ত নির্ণায়কসমূহ প্রয়োগে জটিলতার বিষয়টি সকলে উপলব্দ্ধি করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে এতদিন কোন আলোচনা না হওয়ার প্রধান কারণ উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় আহবানকৃত দরপত্রে “মূল্য সমতা”র ঘটনা অত্যন্ত বিরল। আমার জানামতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (RHD) বেশ কিছু দিন থেকেই উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় আহবানকৃত দরপত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০% এর অধিক কম বা অধিক বেশি দরের মধ্যে দরদাতার দর উদ্ধৃত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে এবং এর ফলাফলস্বরুপ দরের সমতার ক্ষেত্রে তারা লটারির প্রয়োগ ঘটিয়েছে (আমার জানায় কোন ভুল থাকলে দয়া করে সংশোধন করে দিবেন)। অর্থাৎ দরের সমতার ক্ষেত্রে RHD কতৃক বিদ্যমান বিধি ৯৮(৩১), ৯৮(৩২) ও ৯৮(৩৩) এর প্রয়োগ না করার প্রধান কারণ, এটির প্রয়োগে জটিলতা।

এ প্রেক্ষাপটে সকলে বিশেষ করে যারা দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত (আমি যদি আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলি এলজিইডি’র জেলা অফিসের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীবৃন্দ; প্রতি অর্থবছরে যারা নুন্যতম ১৫০ থেকে ৩০০ টি দরপত্রের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকেন) তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় আহবানকৃত দরপত্রে আনীত সংশোধনীর কারনে দরপত্রে মূল্যে সমতার ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে এবং লটারির প্রয়োগ ব্যতীত বিদ্যমান বিধির কোন সহজীকরন ছাড়া দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আরো জটিল হবে।

আমাদের ক্রয় সংক্রান্ত আইন, বিধি, আদর্শ দরপত্র দলিল থেকে শুরু করে বর্তমানে ব্যবহৃত e-GP সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে অনেক সাধারন বিষয় রয়েছে, যা বাস্তবায়নকালীন সাধারন একজন ক্রয়কারীকে বা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যকে বা দরপত্রদাতাকে অধিকাংশ সময় অন্যের বা কোন কোন ক্ষেত্রে একজন Procurement Specialist-এরও পরামর্শ নিতে হয়; যা একেবারেই কাম্য নয়। মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় দরদাতাদের দাখিলকৃত দরের সমতার ক্ষেত্রে বিধিমালা ও আদর্শ দরপত্র দলিলে যুক্ত নতুন মানদন্ড (Criteria) অনুসরন আমাদের ক্রয় প্রক্রিয়াকে আরো জটিলতর করেছে বলে আমার উপলব্দ্ধি। বিশেষ করে নতুন মানদন্ডে (Criteria) অনেক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যা দরপত্রদাতা কর্তৃক চ্যালেন্জ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (যেমন: Court Cases)। এছাড়া কিছু মানদন্ড (Criteria) কিভাবে নির্ধারন করা যাবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা বিদ্যমান (যেমন: Time Extension, LD, DLP)। Total Turnover Value অন্যতম মানদন্ড বিবেচিত হওয়ায় দরপত্রদাতারা Turnover সংক্রান্ত তার সকল কাগজপত্র দরপত্রের সাথে উপস্হাপন করবেন, যা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে প্রয়োজনে Verification করতে হবে।

মাননীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত আইনের প্রতি দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে সকলেরই শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। সাধারনত আইনের সংশোধন, পরিমার্জন করা হয় বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে। এছাড়া আমি যেটুক জেনেছি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তাদের দরপত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০% এর অধিক কম বা অধিক বেশি দরের মধ্যে দরদাতার দর উদ্ধৃত করার বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ দরপত্রদাতা/ঠিকাদার যেনতেনভাবে দরপত্রে অংশগ্রহন করে একটি কাজের চুক্তি স্বাক্ষরে উৎসাহী থাকে। তাদের Psychology এক্ষেত্রে ভিন্ন। একটি কাজের চুক্তি স্বাক্ষরকে তারা তাদের সামাজিক মর্যাদা হিসাবে গন্য করে। পরবর্তীতে কাজ বাস্তবায়নে তারা খুব বেশী তৎপর থাকে না, বিশেষ করে যদি তাদের দরপত্রে দাখিলকৃত দর অত্যাধিক নিম্নদর হয়। অর্থাৎ আমাদের ক্রয় প্রক্রিয়ার সাথে পেশাদার ঠিকাদারের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক অপেশাদার ঠিকাদার জড়িত রয়েছে। হয়তোবা এ বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় সংসদ কর্তৃক আইনের উক্ত সংশোধনী করা হয়েছে। অপেশাদার ঠিকাদারকে বিভিন্নভাবে ক্রয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা যায়, সে ধরনের একটি উপ-ধারাও আলোচিত আইনের সংশোধনীতে সংযোজিত হয়েছে। যেখানে চুক্তির মৌলিক শর্ত (Fundamental Breach) ভঙ্গের ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে Debar করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

তাই আইনের আনীত সংশোধনী নয়, উক্ত সংশোধনী প্রয়োগের ক্ষেত্রে জারীকৃত বিধির সংশোধন ও দরপত্র দলিলে সংযোজিত Performance Criteria এর বিষয়েই আমি সমালোচনা করব। ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার Past Performance বিবেচনায় নিয়ে তাকে মূল্যায়ন একটি অত্যন্ত সু-উদ্যোগ, তবে এটি প্রয়োগ করা সম্ভব তখনই যখন একটি Authentic Bidders’ Database থাকবে এবং যে Database টি হবে অত্যন্ত Comprehensive. এখানে ক্রয় প্রক্রিয়ায় ইতোপূর্বে অংশগ্রহনকারী সকল পেশাদার (বা অপেশাদার) Bidder দের অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি তার দ্বারা বাস্তবায়িত চুক্তিসমূহের ক্ষেত্রে তার Performance সংক্রান্ত সকল বিষয়াদি পাওয়া যাবে। এধরনের একটি Database এর উপস্থিতি ব্যতীত Bidders’ Past Performance এর ভিত্তিতে ঠিকাদার নির্বাচন করা দুঃসাধ্য এবং সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে আপনি অধিকাংশ সময় সঠিক ফলাফলটি (অর্থাৎ Best Past Performer Bidder নির্বাচন) দিতে পারবেন না। এতে সম্পূর্ণ মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি আরো বেশী জটিল এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়বে।

কাজেই আমার বক্তব্য একটি Comprehensive Bidders’ Database ব্যতীত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় Bidders Past Performance এর প্রয়োগ মোটেই সমীচিন নয়। এতে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের কাজে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং তারা সমালোচনার সম্মুখীন হবেন। দরপত্রদাতাদের দিক থেকে অভিযোগ দায়েরের সংখ্যাও আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

এ প্রেক্ষাপটে আইনের সংশোধনীর প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরের সমতা হলে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি একটি বিকল্প প্রস্তাবনা এখানে উল্লেখ করলাম (এ প্রস্তাবনাটি আমার বন্ধু/সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে গত ২৬/১১/২০১৬ ইং তারিখে আমার Facebook Page-এ ইংরেজীতে Post করেছিলাম)। প্রস্তাবনাটির মূল উদ্দেশ্য হলো সংশোধিত আইনের কোন ব্যত্যয় না ঘটিয়ে বিধি ও দরপত্র দলিলে যে ধরনের সংশোধনী আনলে আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত হবে অপরদিকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এছাড়া আমার প্রস্তাবিত প্রক্রিয়াটিতে যেহেতু “দরদাতাদের দাখিলকৃত Itemwise Unit Rate” সমতার ক্ষেত্রে নির্নায়ক হিসাবে কাজ করবে, সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোন অভিযোগ করারও তার সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি Itemwise Unit Rate দাখিলে দরদাতারা যথেষ্ট মনোযোগ দিবেন।

বিদ্যমান কোন প্রক্রিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে এর মূল Stakeholderরা যদি স্বস্তিবোধ না করেন তবে সে প্রক্রিয়ায় Business Process Re-engineering (BPR) এর কথা ভাবতে হয়। আমার প্রস্তাবটি এ ধরনের একটি BPR, যা মূল্যায়িত দরের সমতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। ধাপে-ধাপে প্রক্রিয়াটি এভাবে অনুসরন করা যেতে পারে-

১ম ধাপঃ আনীত সংশোধনীটি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীন কার্যক্রয় সংক্রান্ত দরপত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমরা দেখি সাধারনত একটি কাজের প্যাকেজে একাধিক আইটেম থাকে, খুব কম সংখ্যক আইটেম থাকলেও এ সংখ্যাটি ১০ এর অধিক। প্রথমে আমরা মোট সংখ্যক আইটেম হতে ১০% আইটেম বেছে নিতে পারি (একটি প্যাকেজে মোট আইটেম সংখ্যা ৮০ হলে এক্ষেত্রে ৮ টি আইটেম, যদি আইটেম সংখ্যা ১০ এর কম হয় তবে ন্যূনতম ১ টি আইটেম নির্বাচন করতে হবে)। এই ১০% আইটেম হবে সেইসব আইটেমসমূহ, পৃথকভাবে যাদের Itemwise Cost অন্যান্য আইটেমের তুলনায় বেশী। অর্থাৎ এই ১০% আইটেম দরপত্র মূল্যায়নকালীন নির্বাচনের কোন সুযোগ নাই, প্রাক্কলিত মূল্য প্রস্ততকালীন তা নির্ধারিত হয়ে যাবে।

২য় ধাপঃ যে ১০% আইটেম নির্বাচন করা হয়েছে এই ধাপে নির্ণয় করতে হবে এই ১০% আইটেমের সমষ্টিগত মূল্য হিসাবে দরদাতাগন (দাখিলকৃত সর্বমোট দরের সমতা হয়েছে এরকম দরদাতাগন) পৃথকভাবে ঐ ১০% আইটেমের সমষ্টিগত মূল্য হিসাবে কত মূল্য দাখিল করেছেন। দরদাতাগনের ঐ ১০% আইটেমের সমষ্টিগত মূল্যের ক্রমানুযায়ী একটি পৃথক Ranking Table তৈরী করতে হবে। উক্ত Ranking Table অনুযায়ী সবচেয়ে কম সমষ্টিগত মূল্য দাখিলকারী দরদাতা সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে বিবেচিত হবেন। উল্লেখ্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এভাবে সম্পন্ন করা হবে জানা থাকলে দরদাতারা সর্বমোট দাখিলকৃত দর প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০% কম রাখলেও Itemwise Cost প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতামূলক দর দাখিলে বাধ্য হবেন।

৩য় ধাপঃ যদি ২য় ধাপের পরেও সমতা পাওয়া যায় (আমি আশা করি সমতা হবে না), তখন আমরা আবারও ১০% আইটেম বেছে নিব যেখানে আইটেমসমূহের Criteria হবে “ফ্রন্ট আইটেম”। অর্থাৎ যে আইটেমসমূহের কাজ, কাজ বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে করতে হয়; সে ধরনের ১০% আইটেম আমরা নির্বাচন করব (যেমন ব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রে Piling Work Items)। একটি দরপত্রের ক্ষেত্রে কোন আইটেমসমূহ “ফ্রন্ট আইটেম” বিবেচিত হবে ক্রয়কারী দরপত্র আহবানকালীন তা ঘোষনা দিয়ে রাখবেন। ফ্রন্ট আইটেম ব্যবহার করে পূর্বের ন্যায় ২য় ধাপ অনুসরন করে Ranking Table অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচন করা যাবে। Ranking Table এ ফ্রন্ট আইটেমকে নির্নায়ক হিসাবে বিবেচনার সিদ্ধান্ত আশা করি দরদাতাদের দর দাখিলে “ফ্রন্ট লোডিং” করার প্রবনতাতে অবশ্যই লাগাম পরাবে।

৪র্থ ধাপঃ যদি ৩য় ধাপের পরেও সমতা পাওয়া যায় (আমি অতি নিরাশাবাদী হলে এখনও ধারনা করব যে সমতা হবে), আমাদের সর্বশেষ Criteria হবে যে “৩য় ধাপ পর্যন্ত সমতা হওয়া দরপত্রদাতাদের মধ্যে যিনি সবার পূর্বে দরপত্র দাখিল করেছেন তিনি বিজয়ী বলে বিবেচিত হবেন”।

উপরোক্ত ধাপ/পদক্ষেপসমূহের সবচেয়ে বড় উপযোগীতা হলো উক্ত ধাপ/পদক্ষেপসমূহ ই-জিপি পদ্ধতির মাধ্যমে কোন ধরনের Manual Input ছাড়াই দ্রুত প্রয়োগ করা সম্ভব। এবং ই-জিপি সফটওয়্যারে পোগ্রামিং করা থাকলে মাত্র একটি বাটনে ক্লিক করে দরদাতাদের সমতার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল প্রদান করা সম্ভব।

আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা Technology ব্যবহার করি বা যে কোন বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন নিয়ে আসি যাতে আমাদের আগামী দিনের পথচলা সহজ হয় বা বিদ্যমান পরিশ্রম লাঘব হয়। তাই আমার সহকর্মী যারা দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত তাদের কথা মাথায় রেখে আমার প্রস্তাবনাটি এখানে উল্লেখ করলাম, যা বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। আমি জানি আমার প্রস্তাবনার বাইরে আরো ভালো প্রস্তাবনা অনেকের চিন্তায় রয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর মানসম্পন্ন করার জন্য আরো বিভিন্ন মানদন্ড (Criteria) যুক্ত করে এটিকে আরো সমৃদ্ধ করা যেতেই পারে। কিন্ত যারা Practically এটি প্রয়োগ করবেন তারা শেষ পর্যন্ত এটি সঠিকভাবে প্রয়োগে সফল হবেন কিনা বা প্রয়োগের পূর্বেই তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকাশিত উদ্বেগ বা আশংকাকে আমলে নিয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্হা গ্রহন; সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত নয় কি ?

1 thought on “দর সমতার ক্ষেত্রে নতুন Criteria ব্যবহারে জটিলতা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সূ-চর্চা

এলজিইডি’র WeCARE প্রকল্পে কার্য চুক্তি ব্যবস্থাপনায় কাজের অগ্রগতি তদারকিতে MS Project ব্যবহার হচ্ছে

মোঃ সাইফুর রহমান জোয়ার্দ্দার, MCIPS নির্বাহী প্রকৌশলী, উইকেয়ার প্রকল্প, এলজিইডি কার্য চুক্তি ব্যবস্থাপনায় (Works Contract Management) কাজের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণের

Read More »
সমসাময়িক

বাংলাদেশে সরকারী সেক্টরে ‘কনসাল্টেন্সি সার্ভিস (ফার্ম)’ নিয়ে বহুবিধ সমস্যা এবং কতিপয় সম্ভাব্য প্রতিকার

মোঃ সাইফুর রহমান জোয়ার্দ্দার, MCIPS নির্বাহী প্রকৌশলী, উইকেয়ার প্রকল্প, এলজিইডি   আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবা কার্যক্রমের শুরু কখন থেকে,

Read More »
সূ-চর্চা

পর্তুগালে ই-প্রকিউরমেন্ট

পর্তুগালে ই-প্রকিউরমেন্ট e-Procurement in Portugal   Md Saifur Rahman Joarder তারিখঃ ৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ভূমিকাঃ পর্তুগালের e-Procurement System সম্পর্কে জানার

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top