Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাংলাদেশে সরকারী সেক্টরে ‘কনসাল্টেন্সি সার্ভিস (ফার্ম)’ নিয়ে বহুবিধ সমস্যা এবং কতিপয় সম্ভাব্য প্রতিকার

Facebook
Twitter
LinkedIn

মোঃ সাইফুর রহমান জোয়ার্দ্দার, MCIPS
নির্বাহী প্রকৌশলী, উইকেয়ার প্রকল্প, এলজিইডি

 

আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবা কার্যক্রমের শুরু কখন থেকে, তা বলা মুশকিল। তবে ধরে নেওয়া যায় পেশা হিসাবে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবা প্রদান একটা অতি প্রাচীন পেশা। যেহেতু মনুষ্য সমাজে সকল মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির স্তর একই লেভেলের হয় না, যে কারণে বিবিধ বিষয়ে বুদ্ধি বা পরামর্শ গ্রহণের জন্য কম জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে অপেক্ষাকৃত বেশি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের শরনাপন্ন হতেই হয়। আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই বলা যায় পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবা কার্যক্রমের জন্ম। এছাড়াও একজন জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়াও সম্ভব নয়, তাই কোনো বিশেষ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য তাকেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী কারো সহায়তা নিতে হয়। সুতরাং, পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবার আওতা অত্যন্ত ব্যাপক এবং পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবা বিস্তৃত হয়নি এমন কোনো সেক্টর খুঁজে পাওয়া এক কথায় অসম্ভব।

বর্তমানে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবার পুরোটাই বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত বিষয়াদির সাথে জড়িত একটি সেবা, যেখানে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তি ব্যতিরেকে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া সম্ভব না। পরামর্শক সেবা গ্রহনকারী (ক্লায়েন্ট) যখন তার নিজস্ব রিসোর্স (জনবল) ব্যবহার করে তার কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক বা পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনায় অপারগ হন, তখনই তিনি সে বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কাউকে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্ট হিসাবে নিয়োগের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। আমাদের দেশে সরকারী সেক্টরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বুদ্ধিবৃত্তিক বা পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক বা কনসাল্টেন্ট নিয়োগ করে থাকে। এক্ষেত্রে পরামর্শক হিসাবে কখনও কনসাল্টিং ফার্ম আবার কখনও-বা ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ সরকারী সেক্টরে বিভিন্ন কাজে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্ট নিয়োগের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্ত সামগ্রিকভাবে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবার মান ক্রমান্বয়ে নিম্নগামী হওয়ায় এ খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি দপ্তরসমূহ নিয়োগকৃত পরামর্শক হতে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। ফলে অনেক সময় এ খাতে সরকারি অর্থের যথেচ্ছ অপব্যবহার ও অপচয় হচ্ছে এবং বিষয়টি সকলে উপলব্ধি করতে পারলেও এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ (ক্লায়েন্ট বা কনসাল্টেন্ট) উদ্ভূত সমস্যা বা এর প্রতিকার নিয়ে কোনো আলোচনা না করায় সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে, অর্থের মানদন্ডে ও কর্মকান্ডের ব্যাপকতা বিবেচনায়, এই নিবন্ধে শুধুমাত্র কনসাল্টিং ফার্মসমূহ কর্তৃক প্রদেয় সেবার ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যা এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তি পরামর্শকদের মান ও নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিবিধ সমস্যা রয়েছে, যা পরবর্তীতে অন্য কোনো নিবন্ধে আলোচনার আশা রাখি।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ (পিপিআর’২০০৮)-এ উল্লেখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা” অর্থ বুদ্ধিবৃত্তিক অথবা পেশাগত বিষয়ে চুক্তিতে বর্ণিত মতে পরামর্শক কর্তৃক পরামর্শ প্রদান, বা কোন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও অন্যান্য তথ্য প্রযুক্তিজাত অথবা সমজাতীয় সফটওয়্যার প্রস্তুতকরণ, বা ডিজাইন প্রণয়ন, বা কাজের তত্ত্বাবধান বা ব্যবহারিক জ্ঞান হস্তান্তর বিষয়ক সেবা, এবং সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্টকত কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা।

সংজ্ঞায় উল্লেখিত ‘চুক্তি’ অনুযায়ী, “বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা” গ্রহনের ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তির ধরন প্রধানত দুই প্রকার; যথা:

ক) সময়-ভিত্তিক (Time-Based)
খ) থোক চুক্তি (Lum-Sum)

আবার “বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা”র আউটপুট বিবেচনায় দুই ধরনের সেবা দেখা যায়,

১ম ক্ষেত্রে, ক্লায়েন্ট চুক্তি বাস্তবায়নকালীন সময়ে বা চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর হতে পরামর্শক কর্তৃক প্রদেয় সেবাসমূহের কাঙ্খিত আউটপুট পেয়ে থাকে, অর্থাৎ যেখানে কাঙ্খিত আউটপুট অন্য কোনো বাস্তবায়িতব্য কার্যক্রম/প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল থাকে না বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয় না; যেমন একটি সফ্টওয়্যার/ওয়েবসাইট প্রস্তুত করা, চলমান প্রকল্পের আওতায় কোনো কম্পোনেন্টের সম্ভাব্যতা যাচাই/টেকনিক্যাল স্ট্যাডিজ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, প্রকল্প পরিচালন, মনিটরিং, নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করা ইত্যাদি।

২য় ক্ষেত্রে, ক্লায়েন্ট অন্য কোন বাস্তবায়িতব্য কার্যক্রম/প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের প্রেক্ষাপটে পরামর্শক কর্তৃক প্রদেয় সেবাসমূহের কাঙ্খিত আউটপুট পেয়ে থাকে; যেমন পরামর্শক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কোনো সুপারিশ ভিত্তিক রিপোর্ট/গাইডলাইনস বা নতুন কোনো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই/টেকনিক্যাল স্ট্যাডিজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে পলিসি মেকারদের সিদ্ধান্ত/অনুমোদনের পরেই তা বাস্তবায়নযোগ্য হয়, আবার চলমান প্রকল্পের আওতায় কোনো কম্পোনেন্টের ড্রইং/ডিজাইন প্রস্তুত করার পর তদানুযায়ী নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের পরই কাঙ্খিত আউটপুট পাওয়া যায়।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবায় চুক্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের দায়:

১) পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) নির্বাচন ও নিয়োগ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

২) চুক্তি পরিচালনার সময় (চুক্তি সমাপ্তির সময়), বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এর নিয়ন্ত্রণ ক্লায়েন্টের হাতে থাকে না।

৩) চুক্তি ব্যবস্থাপনার সময় ক্লায়েন্ট যথেষ্ট পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। কনসাল্টিং ফার্ম (বিশেষভাবে বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) এই পর্যায়ে সাধারণত যথেষ্ট পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে থাকেন।

৪) ঠিকাদার বা সরবরাহকারী’র ক্ষেত্রে যেভাবে চুক্তি মনিটরিং করা হয়, পরামর্শকের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় যে, ‘পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিজ উদ্যোগে পালন করবেন, এখানে ক্লায়েন্টের ভূমিকা সীমিত’ – এটি একটি মস্ত বড় ভুল ধারনা।

৫) চুক্তি পরিচালনার সময়, পরামর্শকের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের পক্ষে দক্ষ জনবলের অভাব।

৬) কিভাবে ‘পরামর্শক সেবার চুক্তি ব্যবস্থাপনা’ বাস্তবায়িত হবে, পরামর্শক নিয়োগের পূর্বে সে বিষয়ে ক্লায়েন্টের পক্ষ হতে সঠিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করা ও পরিকল্পনার অভাব।

৭) পরামর্শকের কাজের তত্ত্বাবধান এবং পরামর্শক কর্তৃক প্রদেয় সেবাসমূহের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন (Interim Evaluation) অনুপস্থিত।

৮) প্রকল্পের সময় সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে, প্রায় ক্ষেত্রে অদক্ষতা/দায়িত্বে অবহেলার কারণে পরামর্শক পরিবর্তন করে প্রকল্প সময়ের মধ্য একজন নতুন পরামর্শক নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। যা, ক্লায়েন্টের জন্য একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু পরামর্শক এটিকে তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক অবস্হান হিসাবে গ্রহণ করে থাকেন।

৯) থোক চুক্তি (Lum-Sum) ধরনের পরামর্শক সেবার আওতায়, যেখানে পরামর্শকের পেমেন্টের শর্তাবলী ‘রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল’ ভিত্তিক হয়ে থাকে, সেখানে অনেক সময় পেমেন্টের অংশ (Percentage of Payment) রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল-এর গুরুত্ব বা এর প্রস্ততিতে পরামর্শকের প্রচেষ্টা অনুসারে ক্লায়েন্ট কর্তৃক সঠিক অনুপাতে নির্ধারন করা হয় না।

১০) চুক্তি কার্যকর করার শর্তসমূহ যথাযথভাবে চুক্তি ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয় না।

১১) চুক্তি ডকুমেন্টে ক্লায়েন্ট কর্তৃক পরামর্শককে প্রদেয় অগ্রিম অর্থ দীর্ঘ কিস্তিতে সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়।

১২) ‘রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল’ ভিত্তিক থোক চুক্তি (Lum-Sum) ধরনের পরামর্শক সেবায়, ক্লায়েন্ট কর্তৃক রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল পর্যালোচনা করা/অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ কালক্ষেপন, যার ফলে পরামর্শককে অর্থ প্রদানে বিলম্ব হয় – যা ধীর আর্থিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ।

১৩) সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ পরামর্শক (আন্তর্জাতিক) ‘চুক্তি ব্যবস্থাপনা’য় ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। অপরদিকে অধিকাংশ ক্লায়েন্ট ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাবলীল নন।

১৪) পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবার ‘বিরোধ নিষ্পত্তি’ (সালিশ) খুবই জটিল প্রক্রিয়া। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে পরামর্শকের দায় থাকলেও অধিকাংশ ক্লায়েন্ট তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

 

পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত, প্রস্তাব আহবান, মূল্যায়ন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ক্লায়েন্টের দুর্বলতার কিছু নমুনা:

১) কর্মপরিধি (Terms of Reference/TOR) প্রস্তত করার সময় প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা, পরামর্শকের যোগ্যতা/ইনপুট/আউটপুট/দায়িত্ব সঠিকভাবে সনাক্ত করতে সামগ্রীকভাবে ক্লায়েন্টদের দুর্বলতা রয়েছে।

২) কনসাল্টেন্সি সেবার ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য আনুমানিক খরচ নির্ধারনে ক্লায়েন্টদের দুর্বলতা রয়েছে।

৩) সামগ্রীকভাবে ক্লায়েন্টদের ইন্টারন্যাশনাল ফার্ম/পরামর্শক নিয়োগের ব্যাপারে দুর্বলতা রয়েছে।

৪) অনেক ক্লায়েন্ট ভ্রান্ত বিবেচনায় TOR-এ মূল বিশেষজ্ঞ (Key Experts) পদগুলির সাথে অপ্রয়োজনীয়ভাবে তাদের জাতীয়তাকে (‘আন্তর্জাতিক’/‘জাতীয়’ ইত্যাদি (বন্ধনীর মধ্যে)) উল্লেখ করে থাকেন।

৫) কখনও কখনও ক্লায়েন্টরা চুক্তির ধরন নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শক সেবাটি (‘থোক’ বা ‘সময়’ ভিত্তিক কোনটি হবে) যথাযথভাবে নির্ধারন করতে ব্যর্থ হন।

৬) অনেক ক্ষেত্রে একাধিক পরামর্শক সেবার চুক্তি বাস্তবায়ন/পরিচালনার জন্য ডিপিপি-তে উপযুক্ত জনবলের ব্যবস্থা (যেমন: ক্লায়েন্ট’স স্টাফ/কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট/প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট) রাখা হয় না।

৭) কখনও কখনও ক্লায়েন্টের ব্যক্তিস্বার্থে কোনো নির্দিষ্ট ফার্ম/পরামর্শককে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনভিপ্রেত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন, যেমনঃ

– EOI পর্যায়ে সঠিকভাবে যোগ্য ফার্ম/পরামর্শককে বাছাই করা হয় না।
– কারিগরী প্রস্তাব মূল্যায়নের সময় নির্দিষ্ট ফার্ম/পরামর্শককে বেশী পয়েন্ট প্রদান করা; যেহেতু পরামর্শক সেবা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় গুণগত বিষয়ে পয়েন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে Subjective Judgement-এর সুযোগ রয়েছে (QCBS/QBS/CQS পদ্ধতি)।

৮) চুক্তি করার পূর্বে পরামর্শকের সাথে নিগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে সামগ্রীকভাবে ক্লায়েন্টের দুর্বলতা রয়েছে; যেমনঃ সময়-ভিত্তিক চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় দক্ষতা/অভিজ্ঞতার অভাবে ক্লায়েন্টরা মূল বিশেষজ্ঞদের (Key Experts) ইনপুট ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা না করে বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন, ফলশ্রুতিতে চুক্তি বাস্তবায়নকালীন সময়ে ক্লায়েন্টকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়-

– চুক্তি বাস্তবায়নকালে কারিগরী প্রস্তাবের সাথে আর্থিক প্রস্তাবের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়; এবং
– আন্তর্জাতিক মূল বিশেষজ্ঞদের হোম/ফিল্ড ইনপুট ইস্যুতে পরামর্শকের সাথে ক্লায়েন্টের বিরোধ সৃষ্টি হয়।

৯) কোনো নির্দিষ্ট ফার্ম/পরামর্শককে নির্বাচনের জন্য কারিগরী প্রস্তাবে অন্যদের তুলনায় অধিক পয়েন্ট প্রদানের ফলে অনেক সময় শীর্ষস্থানীয় (Top Ranked) পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য যোগ্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসমূহের পয়েন্টের অত্যধিক পার্থক্যের সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে ‘নেগোসিয়েশন পর্বে’ (QCBS পদ্ধতি) পরামর্শকের সাথে আলোচনায় ক্লায়েন্টের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। কখনও কখনও ক্লায়েন্টরা আলোচনার ব্যর্থতা এড়াতে পরামর্শকের সাথে আপস করতে বাধ্য হন।

১০) একইভাবে কখনও কখনও কর্তৃপক্ষ বা দাতা সংস্থা, শীর্ষস্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে এমনকি আপস করেও সফল নিগোসিয়েশনের জন্য ক্লায়েন্টের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, বিশেষ করে যখন শীর্ষস্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যদের কারিগরী পয়েন্টে অত্যধিক পার্থক্য থাকে।

 

পরামর্শক সেবায় বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যাসমূহের ক্ষেত্রে পরামর্শকদের অপেশাদারিত্বের কিছু নমুনা:

১) কনসাল্টিং ফার্ম চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিশেষজ্ঞ জনবল (Key & Non-Key Experts) নিযুক্ত করছেন না।

২) চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক অব্যবহিত পরে, কনসাল্টিং ফার্ম বিবিধ কারণ দেখিয়ে তাদের মূল বিশেষজ্ঞদের (Key Experts) প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদন করছেন।

৩) কনসাল্টিং ফার্ম (মূলতঃ বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) চুক্তি অনুযায়ী তাদের আন্তর্জাতিক মূল বিশেষজ্ঞদের (International Key Experts) ক্লায়েন্টের দেশে (‘Field’) নিযুক্ত করছেন না। এক্ষেত্রে যেসকল কারণ তারা সচরাচর উল্লেখ করে থাকেনঃ

– ভিসার সমস্যা;
– ক্লায়েন্টের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’র অবনতি;
– মহামারী পরিস্থিতি’র উদ্ভব (কোভিডকালীন সময়ে) ইত্যাদি।

৪) কনসাল্টিং ফার্ম তাদের মূল বিশেষজ্ঞদের (Key Experts) ‘মাঠ পর্যায়ে’র কাজে (Field Works/Supervision/Survey Works) সঠিকভাবে নিযুক্ত করছেন না।

৫) কখনও কখনও কনসাল্টিং ফার্ম মূল বিশেষজ্ঞদের (Key Experts) দায়িত্বাবলী Non-Key Experts বা ফার্মের অন্যান্য জুনিয়র কর্মীদের মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকেন, এতে সেবার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৬) ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কনসাল্টিং ফার্ম চুক্তিতে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তাব দাখিলকালীন মূল বিশেষজ্ঞদের (Key Experts) জীবনবৃত্তান্তে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বেশী উল্লেখ করেন, ফলে চুক্তি বাস্তবায়নের সময় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের নিকট হতে যোগ্যতা অনুযায়ী কাঙ্খিত ইনপুট পাওয়া যায় না। এছাড়া অনেক সময় কনসাল্টিং ফার্মসমূহ প্রস্তাবিত বিশেষজ্ঞদের (Key/Non-key Experts) যথাযথ সম্মতি ব্যতিরেকে তাদের জীবনবৃত্তান্ত কারিগরী প্রস্তাবের সাথে দাখিল করে থাকেন, ফলে চুক্তির প্রারম্ভেই প্রাপ্যতার অজুহাতে ঐসব পদে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।

৭) কর্মপরিধি (Terms of Reference/TOR) প্রস্তত করার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের যেমন দুর্বলতা রয়েছে, একইভাবে কর্মপরিধি অনুযায়ী কারিগরী ও আর্থিক প্রস্তাব তৈরীর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই কনসাল্টিং ফার্মের দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। কারিগরী ও আর্থিক প্রস্তাবের দুর্বলতাসমূহ কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগের পূর্বে (মূলতঃ নিগোসিয়েশনের পূর্বে) চিহ্নিত করা সম্ভবপর না হলে সেবা বাস্তবায়নকালীন অনেক ধরনের জটিল পরিস্হিতির উদ্ভব হয়, যা অনেক সময় চুক্তি সংশোধন করে সমাধান করাও সম্ভবপর হয় না। এ সকল ক্ষেত্রে প্রধানত দায় কনসাল্টিং ফার্মের অনভিজ্ঞতা।

৮) বিশেষায়িত যেসব সেবায় একাধিক বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের ইনপুটের প্রয়োজন রয়েছে এবং যেখানে পরামর্শক দল বা টীমের দায়বদ্ধতা রয়েছে সেসব ক্ষেত্রেই সাধারণতঃ ব্যক্তি পরামর্শকের পরিবর্তে কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্ত সেবার প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের যোগ্যতা/ইনপুট/আউটপুট/দায়িত্ব সঠিকভাবে নির্ধারনে অনেক ক্ষেত্রেই কনসাল্টিং ফার্মসমূহের দুর্বলতা রয়েছে।

৯) চুক্তি ডকুমেন্টে ‘চুক্তি কার্যকর’ করার শর্তসমূহ যথাযথভাবে উল্লেখ না থাকার প্রেক্ষিতে, থোক চুক্তি (Lum-Sum) ধরনের পরামর্শক সেবার ক্ষেত্রে কনসাল্টিং ফার্ম তাদের জন্য উপযুক্ত সময়ে চুক্তি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহন করেন।

১০) ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কনসাল্টিং ফার্ম (মূলতঃ বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) চুক্তি অনুযায়ী বীমা করার বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।

১১) ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কনসাল্টিং ফার্ম (মূলতঃ বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) ক্লায়েন্টের Property Rights বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছেন।

১২) থোক চুক্তি (Lum-Sum) ধরনের পরামর্শক সেবায়, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কনসাল্টিং ফার্ম (মূলতঃ বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট/ডেলিভারেবল প্রদানের জন্য দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে থাকেন এবং পরবর্তীতে ‘চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য স্বল্প সময় অবশিষ্ট’ বা ‘ক্লায়েন্ট কর্তৃক রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল পর্যালোচনা/অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপনে’র অজুহাত দেখিয়ে স্বল্প সময়ে অপেক্ষাকৃত কম ইনপুট প্রদান করে নিম্ন মানের রিপোর্ট/ডেলিভারেবল প্রদানপূর্বক তাড়াহুড়া করে চুক্তি সময়ের মধ্যে চুক্তির বাধ্যবাধকতা সমাপ্ত করেন।

১৩) যখন আন্তর্জাতিক মূল বিশেষজ্ঞ (International Key Experts) হিসাবে কোনো Highly Qualified Experts পরামর্শক বা কনসাল্টেন্সি সেবায় জড়িত হন, তখন তাঁর নিয়োগকারী কনসাল্টিং ফার্ম (মূলতঃ বিদেশী কনসাল্টিং ফার্ম) উক্ত বিশেষজ্ঞের সেবা ‘হোম’ (Expert’s Country) ইনপুটের মাধ্যমে গ্রহনের জন্য ক্লায়েন্টকে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এর ফলে ক্লায়েন্ট বিশেষজ্ঞ নিয়োগের অত্যধিক ব্যয় বহন করেও উক্ত বিশেষজ্ঞের কাঙ্খিত সেবা হতে বঞ্চিত হন।

১৪) ‘ডেলিভারেবল/রিপোর্ট প্রিপারেশন’-এর জন্য, যেখানে স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের মতামত/পরামর্শ গ্রহন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় – অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শকরা এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহনে অনীহা দেখান বা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বা নামমাত্র ইনপুট প্রদান করে দায়িত্ব শেষ করেন।

১৫) ‘থোক’ চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় পরামর্শকরা তাড়াহুড়া করে নিম্ন মানের রিপোর্ট/ডেলিভারেবল প্রদান করে এর প্রয়োজনীয় পরিবর্ধন/গ্রহনযোগ্যতা’র পূর্বেই ক্লায়েন্টের নিকট পেমেন্টের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন এবং পরবর্তী স্তরের রিপোর্ট/ডেলিভারেবল প্রস্ততের কার্যক্রম স্থগিত করে রাখেন।

১৬) কখনও কখনও পরামর্শকরা তাদের আন্তর্জাতিক মূল বিশেষজ্ঞদের প্রাপ্যতার অজুহাতে (বিভিন্ন দেশে অবস্হান করা) দাখিলকৃত ডেলিভারেবল/রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের স্বাক্ষরসহ উপস্হাপনে অনীহা দেখান।

১৭) ক্ষেত্রবিশেষে পরামর্শক কর্তৃক দাখিলকৃত ডেলিভারেবল/রিপোর্ট/প্রতিবেদনে আবশ্যিক ডেটা অনুপস্হিত থাকে এবং বাস্তবসম্মতভাবে বাস্তবায়নের উপযোগী সুপারিশ থাকে না।

১৮) অন্য বিষয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ই-মেইলের অংশবিশেষে কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা/আলোচনা ছাড়াই কিছু পরামর্শক ক্লায়েন্টের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা/বিষয় শেয়ার করেন – তাদের উদ্দেশ্য যে, ক্লায়েন্ট হয়তো বিষয়টি যথাযথভাবে লক্ষ্য করবেন না, তবে শেয়ার করা সমস্যা/বিষয়টি পরামর্শক ভবিষ্যতে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে পরামর্শকের স্বপক্ষে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

১৯) ক্ষেত্রবিশেষে কিছু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের চাহিদা অনুযায়ী সেবা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবল (Non-Key Experts/Support Staffs) বা লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানে চরম উদাসীনতা ও অসহযোগীতা প্রদর্শন করেন।

২০) ক্ষেত্রবিশেষে কিছু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ জনবল (Key & Non-Key Experts) বা অন্যান্য কর্মীদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান বা যথাসময়ে পারিশ্রমিক প্রদানে চরম শৈথিল্য প্রদান করেন।

২১) বিশেষায়িত সেবার আউটপুটের মান কাঙ্খিত পর্যায়ের না হলে বা এতে যে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তার দায় সামগ্রীকভাবে নিয়োজিত কনসাল্টিং ফার্মের। কিন্ত অনেক সময় এ ধরনের পরিস্হিতিতে নিয়োজিত কনসাল্টিং ফার্ম তাদের নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেন, যা ব্যক্তি পরামর্শকের পরিবর্তে কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগের মূল উদ্দেশ্যেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

২২) চুক্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেশীয় কনসাল্টিং ফার্ম যথেষ্ট পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন।

 

পরামর্শক সেবায় বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যাসমূহের কতিপয় সম্ভাব্য প্রতিকার:

১) যেকোনো প্রকল্পে পরামর্শক সেবার প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অভিজ্ঞ কর্মীদের তত্ত্বাবধানে এই কাজটি করতে হবে।

২) যেসব ক্ষেত্রে কনসাল্টেন্সি সেবার আউটপুট অন্য কোনো বাস্তবায়িতব্য কার্যক্রম/প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন বা এ সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভরশীল (যথাঃ সুপারিশ ভিত্তিক প্রতিবেদন), সে ধরনের পরামর্শক সেবা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন, সময় এবং যথাযথ মূল্যায়ন সম্পন্নপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রয়োজন।

৩) যোগ্য ও সঠিক পরামর্শক নির্বাচন যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্টকে অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থে কোনো নির্দিষ্ট ফার্ম/পরামর্শক নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪) ক্লায়েন্টদের অপ্রয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল ফার্ম/পরামর্শক নিয়োগের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

৫) যথাসম্ভব যোগ্য ‘জাতীয়’ ফার্ম/পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে সকলকে উৎসাহিত করা উচিত। যেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফার্ম/পরামর্শক অপরিহার্য সেখানে অন্ততঃ যোগ্য আন্তর্জাতিক/জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে JV কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

৬) কর্মপরিধি’র (Terms of Reference/TOR) শর্তাবলী এবং পরামর্শক সেবার আনুমানিক খরচ নির্ধারনের জন্য অভিজ্ঞ কর্মীদের সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে তা চুড়ান্ত করা উচিত।

৭) চুক্তির ধরন, যথাঃ ‘থোক’ বা ‘সময়’ ভিত্তিক – যথাযথভাবে নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৮) ‘থোক’ চুক্তির ক্ষেত্রে, পরামর্শক কর্তৃক রিপোর্ট বা ডেলিভারেবল প্রস্তত ও হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ‘থোক’ চুক্তি সম্পাদনের যথাযথ সময় নির্ধারনের জন্য ডেলিভারেবল প্রস্তত/জমা/পর্যালোচনা/স্টেকহোল্ডারের পরামর্শ বা বৈধতা/সংশোধিত প্রতিবেদন তৈরি/গ্রহণ/অনুমোদন/প্রদান ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় সময় সঠিকভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

৯) পরামর্শক সেবা চুক্তি বাস্তবায়ন/পরিচালনার জন্য ডিপিপি’তে উপযুক্ত জনবলের (যেমন: ক্লায়েন্ট’স স্টাফ/কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট/প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট) ব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক।

১০) পরামর্শক নির্বাচনের সময় পরামর্শক কর্তৃক ‘কারিগরী প্রস্তাব’ দাখিল এবং ‘নিগোসিয়েশন’ পর্যায়ের মধ্যে যথাসম্ভব সময়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করা উচিত।

১১) পরামর্শকের সাথে নিগোসিয়েশন (পরামর্শক নির্বাচন পর্যায়ে) চলাকালীন, সমস্ত বিষয়গুলিকে খুব কার্যকরভাবে আলোচনা করা উচিত, যাতে চুক্তির মধ্যে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে। কাজের পরিকল্পনা, মূল বিশেষজ্ঞদের ইনপুট এবং প্রাপ্যতার জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রদান করা আবশ্যক – কোন আপস নয়। কনসাল্টিং ফার্মের প্রস্তাবিত বিশেষজ্ঞদের (Key/Non-key Experts) যোগ্যতা যাচাই ও প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা নির্ধারনে (অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ হিসাবে দায়িত্ব পালনে যথাযথ সম্মতি আছে কিনা), নিগোসিয়েশনকালীন তাদের সরাসরি বা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ক্ষেত্রে অনলাইনে সাক্ষাৎকার গ্রহন করা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

১২) বিশেষায়িত সেবার আউটপুটের মান কাঙ্খিত পর্যায়ের না হলে বা এতে যে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত কনসাল্টিং ফার্মের নিতে হবে, এ বিষয়টি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রারম্ভেই ফার্মের প্রতিনিধির (Authorized Representative) সাথে আলোচনায় নিশ্চিত করতে হবে।

১৩) পরামর্শক সেবার সংখ্যা এবং সেবার জটিল প্রকৃতি (Complexity) বিবেচনায় পরামর্শক সেবা প্যাকেজগুলি ডিল করার জন্য অভিজ্ঞ স্টাফ বা প্রকিউরমেন্ট কনসালটেন্ট (পরামর্শক সেবা চুক্তি পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত ব্যক্তি পরামর্শক) বা প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক (ফার্ম) নিযুক্ত/নিয়োগ করা আবশ্যক।

১৪) পরামর্শক সেবার চুক্তি ডকুমেন্টে, চুক্তি কার্যকর হওয়ার শর্তগুলি যথাযথভাবে উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৫) পরামর্শকের কাজ তদারকি করা গুরুত্বপূর্ণ। পরামর্শকের কাজের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন (Interim Evaluation) করা প্রয়োজন। পরামর্শকের কাজের অগ্রগতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

১৬) পরামর্শকের উপস্হাপিত ডেলিভারেবল/রিপোর্টে প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে কিনা এবং সুপারিশগুলি বাস্তবসম্মতভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে কিনা, তা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

১৭) যেসব ক্ষেত্রে কনসাল্টেন্সি সেবার আউটপুট অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন বা এ সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভরশীল, সেসব ক্ষেত্রে পরামর্শক কর্তৃক প্রস্ততকৃত প্রতিবেদনের আউটপুট/সুপারিশ অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সংস্থা/মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নোটিশে নেওয়া উচিত।

১৮) পরামর্শক সেবার ‘বিরোধ নিষ্পত্তি’ (সালিসি) পরিচালনায় ক্লায়েন্টকে পরামর্শ/সহায়তা করার জন্য সংস্থা / CPTU-এর অধীনে বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল গঠন করা যেতে পারে।

 

পরিশেষ

সর্বোপরি, পরামর্শক সেবা’র ক্ষেত্রে যেহেতু ব্যক্তির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, পরামর্শক সেবা প্রদানকারী কনসাল্টিং ফার্মের নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ জনবলের (Key & Non-Key Experts) প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে Professional Liability Insurance-এর অধীনে আনা উচিত, যা বাংলাদেশের বীমা পলিসিতে অনুপস্হিত থাকায় কার্যকর করা সম্ভব হয় না। উন্নত অনেক দেশের মতো এ বিষয়টি বাংলাদেশের বীমা পলিসিতে অন্তর্ভূক্ত করে বিশেষজ্ঞ জনবলের ক্ষেত্রে তা কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহন করা গেলে সামগ্রীকভাবে তা পরামর্শক সেবা’র মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়।

 

কনসালটেন্সি বা এ সংক্রান্ত আরও Post:

2 thoughts on “বাংলাদেশে সরকারী সেক্টরে ‘কনসাল্টেন্সি সার্ভিস (ফার্ম)’ নিয়ে বহুবিধ সমস্যা এবং কতিপয় সম্ভাব্য প্রতিকার”

  1. ভাল লাগল পড়ে, তবে বেশি Theoretical। একটু রস, গল্প থাকলে আরও ভাল লাগত।

  2. মোঃ সাইফুর রহমান জোয়ার্দ্দার

    প্রবন্ধের কলেবর যাতে আরো বড় না হয়, এজন্য উদাহরনস্বরুপ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা (Humour বা রসসহ) ইচ্ছাসত্ত্বেও লেখনীতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পাঠকদের এ বিষয়ে আগ্রহ দেখা গেলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে অন্য লেখায় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

arrows, direction, way-6268063.jpg
সংবাদপত্রের পাতা থেকে

সরকারি ক্রয় আইন সংশোধনের সুপারিশ

দরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকায় ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছে মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে যথাসময়ে এসব কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। আবার

Read More »
new year, christmas, decoration-1911483.jpg
ঠিকাদারী ফোরাম

ই-জিপিতে অনলাইনে যে সব পেমেন্ট দেয়া যায়

দরপত্রদাতা বা ঠিকাদারগন ঘরে বসেই অনলাইনে ই-জিপি সিস্টেমে তাদের ই-জিপি একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন (Registration), রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন (Renewal), দরপত্র দলিল ক্রয়, ইত্যাদি

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

Scroll to Top