ই-জিপি’র টেন্ডারে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ কতটুকু সত্য ?

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রী হল নির্মাণে ইজিপির মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্র ক্রয়কারী ঠিকাদারেরা বলছেন, তথ্য ফাঁস হওয়ার পর নামে বেনামে বিভিন্ন নেতাদের পরিচয় দিয়ে তাঁদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
দুটি আবাসিক ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য গত ১৪ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। আজ সোমবার ২২ মার্চ ২০২১ তারিখ বেলা দুইটায় ওই দুটি ইজিপি দরপত্র খোলার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, কয়েক দিন ধরে একটি চক্র দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইজিপি দরপত্রে আবেদনকারী ঠিকাদারদের তালিকা বের করেছে চক্রটি। নাম প্রকাশ করার না শর্তে আরেক ঠিকাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র কেনা হয়েছে। কিন্তু কেনার পর সেই নাম কীভাবে ফাঁস হলো, এটা বোধগম্য হচ্ছে না। ইজিপিতেও যদি তথ্য ফাঁস হয়, তাহলে এটা আতঙ্কের বিষয়।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাঁকে দুজন প্রভাবশালী নেতা ফোন করে দরপত্রে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন, বিষয়টি সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। ইজিপির সবকিছু আইএমইডির নিয়ন্ত্রণে। এ ব্যাপারে সেখানে দুবার কথা বলেছি।’
আইএমইডির অধীনে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট (সিপিটিইউ) ইজিপির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে সিপিটিইউর মহাপরিচালক সোহেলুর রহমান চৌধুরীর দাবি, সিপিটিইউ থেকে ইজিপির তথ্য ফাঁস হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টি আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা আমাদের কারিগরি কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠিয়েছি। এভাবে ফাঁস করা আদৌ সম্ভব কি না, তারা বিষয়টি দেখছে।’
ই-জিপি সিস্টেমে তথ্য ফাঁসের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও বিভিন্ন অভিযোগ এসেছিল। কিশোরগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের টেন্ডারে আইডি হ্যাক করে টেন্ডার সিকিউরিটি রিলিজের অভিযোগের কোন সুরাহা হয় নাই। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডারে টেন্ডার জমার পর মূল্যায়ন চলাকালীন সময়ে টেন্ডার ডাটা শীট পরিবর্তিত হওয়ার অভিযোগের কোন তদন্তই হয় নাই। আর, আজকে যে অভিযোগ উঠেছে তা তো অনেক পুরোনা। ই-জিপিতে তথ্য ফাঁস সম্ভব না বলে এতোদিন কর্তৃপক্ষ দায় সাড়া ভাবে তা এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ আছে।
‘প্রকিউরমেন্টবিডি.কম‘ এর সুপারিশ হচ্ছে এই খতিয়ে দেখার কাজটা সিপিটিইউ নিজেরা করলে হবে না। তখন জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাবে। নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এরমধ্যে ভাল খবর হলো সিপিটিইউ এবং প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে গত ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে ‘ইনডিপেনডেন্ট থার্ড পার্টি আইটি অডিট ফর বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম’ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ই-জিপি সিস্টেমের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু বিষয় যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে কিনা- তা থার্ড পার্টি আইটি অডিটের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে- (১) ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনের ডাটার ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে কিনা, (২) সকল মৌলিক উপাদান; ডিভাইস ও কমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্কে ট্রানজেকশন, অ্যাপলিকেশন্স, ডাটা সেন্টারের কার্যক্রম মূল্যায়ন করে ই-জিপি সিস্টেমের মান ও অখন্ডতা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ কিনা তা দেখা, (৩) সংশ্লিষ্ট জনবল, প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি সাইবার হামলা প্রতিরোধে সক্ষম কিনা তা খতিয়ে দেখা।
ইনডিপেনডেন্ট থার্ড পার্টি ই-জিপি অডিটের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো সামনে আসবে বলে আশা করা যায়। ই-জিপি’র টেন্ডারে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ কতটুকু সত্য তখন যদি এর সঠিক উত্তর পাওয়া যায়।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

Moral hazard এর সাথে প্রকিউরমেন্টের কি সম্পর্ক ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে দেখুনঃ Moral Hazard কি ? সরকারি ক্রয়

Moral hazard কি ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard বা নৈতিক ঝুঁকি হল অর্থনীতি ও ফাইন্যান্সের একটা ধারণা যেটা এমন

দরপত্র দলিলের মূল্য কত হবে ? কিভাবে নির্ধারণ করবেন ?
ক্রয়কারী কর্তৃক দরপত্রদাতার নিকট সরবরাহের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিল হচ্ছে দরপত্র দলিল বা টেন্ডার ডকুমেন্ট (Tender document) বা টেন্ডার সিডিউল। বিজ্ঞাপন

Agency theory and its relevance in procurement
Agency theory, also known as principal-agent theory, is a theory that explains the relationship between a principal and an agent.