চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কনসালটিং ফার্মগুলোই মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকায়

চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক নিয়োগ আজকাল সরকারি দপ্তরে একটি জনপ্রিয় ধারণা ও চর্চা। অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এ পদ্ধতিতে আজকাল সেবা গ্রহণ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কনসালটিং ফার্মের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আড়ালে শোষণ-বঞ্চনা চলছে।
শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে ক্লিক করুন।
উল্লেখ করা বিষয়টি দেশে নিম্ন পর্যায়ের সেবাকর্মীদের প্রতি যেমন হচ্ছে, একই বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের পেশাদার বিশেষজ্ঞগণের সঙ্গেও হচ্ছে। বিষয়টি সরকার এবং দেশে নানা প্রকল্পের অর্থায়নকারী সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউনিসেফ, ইউকে এইড প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। তেমনিভাবে সরকারের ক্লায়েন্ট সংস্থা এলজিইডি, ডিপিএইচই, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গৃহায়ণ অধিদপ্তর প্রভৃতি দেখার বিষয়। এসব সংস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশেষায়িত পেশাগত সেবা গ্রহণ এবং প্রকল্পের নানা লজিস্টিক সেবার জন্য তথাকথিত একধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপদেষ্টা ফার্ম বা সেবা প্রদানকারী ফার্ম নিয়োগ করে থাকে। এই ফার্মগুলোও একইভাবে পেশাদার উপদেষ্টা থেকে শুরু করে ড্রাইভার, অফিস সহকারী—সবার জন্য মূল চুক্তিতে ধার্যকৃত বেতন দেয় না। তারা মূল অর্থায়নকারী সংস্থার চুক্তির বাইরে প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে পৃথক চুক্তি করে, যা খুবই গোপনীয় থাকে। এমনকি একই কাজের জন্য পাঁচজন থাকলে পাঁচজনের পাঁচ অঙ্কের বেতন হতে পারে। এভাবে এ দেশের কিছু কনসালটিং ফার্ম বিদেশি ফার্মের যোগসাজশে বাংলাদেশি পেশাজীবীদের প্রকল্পের নির্ধারিত বেতনের সিংহভাগ আত্মসাৎ করে থাকে। অথচ কম শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা নিয়েও অনেক বিদেশি উপদেষ্টা দেশিদের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বেতন গ্রহণ করেন।
বিদেশিদের অধিক বেতন গ্রহণ একটি ভিন্ন বিষয়, কিন্তু দেশি-বিদেশি কিছু উপদেষ্টা ফার্ম অত্যন্ত অস্বচ্ছ পন্থায় দেশি পেশাদার ও লজিস্টিক কর্মীদের ধার্যকৃত মূল বেতন না দিয়ে ঠকিয়ে চলেছে। কনসালটিং ফার্মগুলোর নিজস্ব কোনো বিশেষজ্ঞ থাকে না। প্রকল্পের দরপত্রের বিড করার সময় জানিয়ে না জানিয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে তা জমা দেয়। যখন বিড জিতে যায়, তখন মূল চুক্তি এড়িয়ে পৃথকভাবে নিয়োগগুলো দিয়ে থাকে, তখনই বেতন কম দেওয়ার অস্বচ্ছ কৌশলটি অবলম্বন করে। অর্থায়নকারী সংস্থা বা সরকারের বাস্তবায়নকারী সংস্থা এসব জেনেও না জানার ভান করে। অথবা এখান থেকে তারাও কিছু অন্যায্য সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে উপদেষ্টা সেবার গুণগত মান অটুট এবং বৃদ্ধি করতে হলে এ অস্বচ্ছতা ও অসাধুতা থেকে উপদেষ্টা সেবাকে মুক্ত করতে হবে।
দেশের কিছু বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি যদি তাদের জন্য নির্ধারিত উচ্চ বেতনটা পায়, তাতে তো কারও কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু একটা মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে কিছু নিরীহ পেশাজীবী বঞ্চিত হবেন, সেটি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এখানে একটি বড় ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি পাকাপোক্তভাবে আসন করে নিচ্ছে। সরকারকে ছোট করার কৌশল হিসেবে একসময় নানা উন্নয়ন সহযোগীরা বিষয়টি গ্রহণের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু এ ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং তার মাধ্যমে একপক্ষের মধ্যযুগীয় মুনাফাবৃত্তি এবং অপর পক্ষের পেটে লাথি দেওয়ার বিষয়টি নীরবে হজম করা যায় না।
Source: প্রথম আলো

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

টেকসই ক্রয় (Sustainable Procurement) এর কিছু বাস্তব উদাহরণ
টেকসই ক্রয় (Sustainable Procurement) হচ্ছে এমন একটি ক্রয় এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সামগ্রিক ভাবে ব্যয়ের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক

Bangladesh: Public Procurement Reform Stuck Even After the Ordinance Issued!
The Government of the People’s Republic of Bangladesh issued the “Public Procurement (Amendment) Ordinance, 2025” on May 4, 2025. Its

অধ্যাদেশ জারীর পরও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সংস্কার আটকে আছে কেন !
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গত ৪ঠা মে ২০২৫ ইং তারিখে “পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” জারী করা হয়েছে। এর মূল

একাধিক ঠিকাদারের দর সমান হলে Past Performance Matrix দিয়ে কিভাবে Ranking করবেন
পিপিআর-০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ি একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে দর সমান হলে কিভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারন হবে তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে