ই-জিপির প্রসার হলেও দূর্ণীতি বন্ধ হয় নি …

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারী ক্রয়ে অংশগ্রহনকারি দরদাতাদের টেন্ডারে কাজ পাওয়ার জন্য কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দেওয়া, ভ্রমণ বা ভোজ বিলাসের ব্যবস্থা করা, ইত্যাদির আড়ালে প্রকৃতপক্ষে আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হয়। “জরিপ করা দরদাতাদের প্রায় ৩১ শতাংশ স্বীকার করেছেন যে তারা ক্রয়কারি কর্মকর্তা বা অন্য ব্যক্তিকে টেন্ডার সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে দেয়ার জন্য ২৫,০০০ টাকারও বেশি (প্রতি ক্ষেত্রে) উপহার দিয়েছেন।” সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দরপত্রদাতাদের ৬২% প্রত্যেকে ২৫,০০০ টাকার উপরে উপহার দিয়েছেন, প্রায় ১৭% প্রত্যেকে ২৫,০০০ টাকার নীচে উপহার দিয়েছেন, ১৭% ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের ডিনার দেওয়ার জন্য এবং ৪% ক্ষেত্রে কর্মকর্তাকে ভ্রমণ বিষয়ক প্রণোদনা দিয়েছেন। “বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের মূল্যায়ন” শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারি গন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে ক্লিক করুন।
রিপোর্টটি ২,৯৬,৭৬০ টি ই-জিপি এবং ২০১২-১৯ সালের মধ্যে ১২,০০০ টি গতানুগতিক কাগজ-ভিত্তিক ক্রয়ের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্রয়কারি সংস্থা এবং ফোকাস গ্রুপ, ইত্যাদি সহ পাঁচটি জেলার অংশগ্রহনকারি দরপত্রদাতা বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা যায় কিছু দরদাতারা দাপ্তরিক প্রাক্কলন সম্পর্কে অবৈধভাবে আগাম তথ্য পায়, যা আসলে কঠোরভাবে গোপনীয় বিষয়। সাক্ষাত্কার প্রাপ্ত দরদাতারা দাবি করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে এই জাতীয় তথ্য অন্যায় উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে দুর্নীতির সম্ভাবনার সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে যে দরদাতাদের কাছ থেকে উপহার বা অন্যান্য অনুগ্রহ প্রাপ্তির জন্য যে সব সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল তার কোনও পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
২০১১ সালে প্রবর্তনের পর থেকে বেশিরভাগ ক্রয় ই-জিপির মাধ্যমে করা হয়েছে। সরকার দুর্নীতি ও অপব্যবহার দূরীকরণে প্রথাগত কাগজভিত্তিক ক্রয় ব্যবস্থার বদলে অনলাইন সিস্টেম চালু করেছিল। কিন্তু, ই-জিপি চালু হওয়া সত্ত্বেও সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়াটি এখনও স্বচ্ছতার প্রত্যাশিত পর্যায়ে অর্জন করতে পারেনি।
অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল বলেছেন “আমাদের সকলেরই মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। আমরা যদি অসৎ হয়ে থাকি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং দাপ্তরিক ব্যয় সম্পর্কিত অগ্রিম তথ্য সুবাধিভোগীদের জানিয়ে দেই তবে আইনের সংশোধন করেও এ জাতীয় অসততা বন্ধ করা যাবে না।”
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ জাতীয় দূর্ণীতি এবং বিশৃংখলা দূর করার জন্য সিপিটিইউ ই-চুক্তি ব্যবস্থাপনা (ই-সিএমএস) প্রবর্তনের চেষ্টা করছে।”এলজিইডিতে তিনটি এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে দুটি চুক্তির জন্য ই-সিএমএস পাইলট শুরু হয়েছে। সরকারী ক্রয় আইন ও বিধি পরিবর্তন আনতেও কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ওপেন টেন্ডারিং পদ্ধতিতে ১০% মূল্যসীমা অপসারণও অন্তর্ভুক্ত।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

প্রকিউরমেন্টে Asymmetric Information এর প্রভাব
প্রকিউরমেন্ট এবং সাপ্লাই চেইনে অ্যাসিমেট্রিক ইনফরমেশন (Asymmetric Information) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে তথ্যের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। এ

Asymmetric Information কি ?
অ্যাসিমেট্রিক ইনফরমেশন (Asymmetric Information) অর্থ হচ্ছে এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে একটি পক্ষ অন্য পক্ষের তুলনায় অধিক বা বা উন্নতমানের তথ্য

Moral hazard এর সাথে প্রকিউরমেন্টের কি সম্পর্ক ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে দেখুনঃ Moral Hazard কি ? সরকারি ক্রয়

Moral hazard কি ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard বা নৈতিক ঝুঁকি হল অর্থনীতি ও ফাইন্যান্সের একটা ধারণা যেটা এমন