A case study in Roads & Highway Department
‘Greater Transparency’ এবং ‘Faster Evaluation’ এই স্লোগান নিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় শুরু হয়েছে Bidders Database Management System (BDMS) নামক সফটওয়ার ব্যবহার করে দরপত্র মুল্যায়ন ও রিপোর্ট প্রস্তুতের কাজ। এটি দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির জন্য একটি Tool হিসেবে কাজ করছে।
দরপত্রদাতাদের তথ্যসম্বলিত এই অনলাইন ডাটাবেজ প্রস্তুতের ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছে ‘Spectrum Engineering Consortium Ltd’ নামক সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পিপিআরপি-২ প্রকল্পের আওতায় গত ১৮ মে ২০১৬ তারিখে দরদাতাদের ডাটাবেজ প্রস্তুতের জন্য উক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১০ই জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে এক সার্কুলারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দরপত্রসমূহে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদারগনকে BDMS ডাটাবেজে রেজিষ্ট্রেশন করে তথ্যাদি প্রদানের জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে ২০০ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে এই ডাটাবেজ পাইলটিং করা হয়েছে। এজন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্রধান কার্যালয় এবং মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন জোনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। ওয়ার্কশপের মাধ্যমে প্রদত্ত প্রশিক্ষণের প্রেক্ষিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমুহ ডাটাবেজ সিস্টেমে তাদের তথ্যাদি অন্তর্ভূক্ত করার কাজ শুরু করে। উল্লেখ্য যে ডাটাবেজ সিস্টেমে তথ্যাদি প্রদান একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সেই অনুযায়ী ঠিকাদারগণ তাদের তথ্যাদি প্রদান অব্যাহত রাখছেন। উক্ত ডাটাবেজ এর মাধ্যমে দরদাতাগণের তথ্যাদি অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমেই যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে দপ্তর নির্বিশেষে সকল ঠিকাদারদের জন্য এই ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং হালনাগাদ করনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগন ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Spectrum Ltd এ নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
BDMS সফটওয়ারটি নিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Spectrum Ltd বিভিন্ন সময়ে এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ অন্যান্য দপ্তরে এর উপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করে তাদের মতামত গ্রহন করেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে জুলাই ২০১৭ থেকেই ই-জিপি প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়নের একটি Tool হিসাবে উক্ত ডাটাবেজ ব্যবহার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং গতিশীলতা আনায়নের পাশাপাশি ঠিকাদারগণও BDMS ডাটাবেজের মাধ্যমে নিম্নোক্ত সুবিধাগুলো পাবেন :-
- দরপত্রে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত সকল তথ্য ও নথিপত্র সংরক্ষণ,
- ইতোপূর্বে সম্পাদিত কার্যের অভিজ্ঞতার হিসাব,
- চলমান ও অসম্পূর্ণ কাজের মূল্যমান হিসাব,
- দরপত্রে অংশগ্রহনে টেন্ডার ক্যাপাসিটি হিসাব,
- বার্ষিক টার্ণওভার হিসাব, ইত্যাদি।
উক্ত ডাটাবেজ-এ সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিলাদি দরপত্রদাতাগণ নিজেরাই প্রদান করবেন। সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারিগন তাদের স্ব স্ব ইস্যুকৃত অভিজ্ঞতার সনদসমূহ বা টার্ণওভার এর প্রমানস্বরুপ দাখিলকৃত পেমেন্ট সার্টিফিকেটসমূহ যাচাই করে অনালাইনেই “ভেরিফাইড” হিসাবে চিহ্নিত করতে পারবেন। কোনো ঠিকাদারের একটি সনদ ডাটাবেজ সিস্টেমে একবার যাচাইপূর্বক “ভেরিফাইড” হিসাবে চিহ্নিত হলে পরবর্তীতে তা সরাসরি মূল্যায়নে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে অর্থাৎ একটি সনদ বিভিন্ন মূল্যায়নকারী কর্তৃক পুনঃ পুনঃ যাচাই করার প্রয়োজন হবে না।
BDMS ডাটাবেজ-এ সংযুক্ত “মূল্যায়ন ছকে” query system এর মাধ্যমে দরপত্র দলিলে বর্ণিত মূল্যায়নের নির্ণায়কসমূহের বিপরীতে ঠিকাদারগণের General experience, Specific experience, turnover, tender capacity (নমুনা ছবি-২ এবং ৩) ইত্যাদি অটোমেটিক ক্যালকুলেশন হয়ে রিপোর্ট আকারে দেখাবে। সেখান থেকে তা প্রয়োজনমত সেভ বা প্রিন্ট করা যাবে। এসব কারণে দরপত্র মুল্যায়নে সময় কমবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া, দরপত্র দলিলে উল্লেখিত Qualification Criteria এর বিপরীতে নিজেদের সামর্থ এই সিস্টেমের মাধ্যমে দরপত্রদাতাগন নিজেরাও পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। এতে দরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এ বিষয়ে Spectrum Ltd এর প্রজেক্ট ম্যানেজার জনাব সরোয়ার মোর্শেদ এর সাথে বিস্তারিত আলোচনা হল। তার কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলামঃ
প্রকিউরমেন্টবিডি.কমঃ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ছাড়া অন্য সরকারী দপ্তর কি এই ডাটাবেজ ব্যবহার করতে পারবে ?
সরোয়ার মোর্শেদঃ Bidders Database Management System (BDMS) এর User Management Module টির নকশা এবং রূপরেখা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জন্যই প্রাথমিক ভাবে করা হয়েছে। তবে এটি একটি Web Based Software যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোন authorized user যেকোন সময় যেকোন স্থান হতে ব্যবহার করতে পারবে। এটি ব্যবহারের জন্য এই সফটওয়ারটির Admin কর্তৃক তৈরিকৃত user হতে হবে। বর্তমানে এই Admin প্যানেল থেকে কেবলমাত্র সওজ অধিদপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট user দের ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা আছে। কাজেই এই মূহূর্তে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা দপ্তর এই ডাটাবেজ ব্যবহার করতে না পারলেও ভবিষ্যতে Admin প্যানেল এ কিছু সংশোধনের মাধ্যমে তা অন্য দপ্তর বা user দের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।
প্রকিউরমেন্টবিডি.কমঃ বর্তমান ই-জিপি সিস্টেমের সাথে কি এই ডাটাবেজ integrate করা সম্ভব ?
সরোয়ার মোর্শেদঃ ই-জিপি সিস্টেম সিপিটিইউ এর সার্ভারে এ Host আছে। অন্যদিকে বিডার ডাটাবেজ সিস্টেম সওজ অধিদপ্তরের সার্ভারে Host আছে। বিডার ডাটাবেজ সিস্টেমের নকশা, স্থাপত্য প্রকৌশল, প্রযুক্তি, নির্মাণ কাঠামো ইত্যাদি ই-জিপি সিস্টেম থেকে অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্নতর। তবে দরপত্র মূল্যায়নের রিপোর্ট প্রস্তুত্রে ক্ষেত্রে দুটি সিস্টেমেরই কিছু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এখন, Integration এর জন্য দুটি সিস্টেমকে বিস্তারিতভাবে Assessment করা প্রয়োজন এবং এই Assessment এর উপর ভিত্তি করে একটি কারিগরি সমাধান বের করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রকিউরমেন্টবিডি.কমঃ এই সফটওয়ারটি নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি ?
সরোয়ার মোর্শেদঃ আমরা সফটওয়ারটির বিভিন্ন ফিচার পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ইত্যাদি সরকারী প্রতিষ্ঠানে একাধিক প্রজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্হাপন করি। এর মাধ্যমে আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হল এই সফটওয়ারটি এসব সরকারী প্রতিষ্ঠান যারা পিপিআর অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে কাজ এবং পণ্য প্রায়ই ক্রয় করে থাকে তাদের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ সহজ করার জন্য অনেক প্রয়োজন।
আমরা ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানের user requirement, সময়কাল, সংশ্লিষ্ট বিডার প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও উপাত্ত এবং আর্থিক সংশ্লেষের ভিত্তিতে সফটওয়ারটির বাস্তবায়ন করতে চাই। সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযত সহযোগীতায় এই সফটওয়ারটিকে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ সিস্টেম হিসাবে স্থাপন করা সম্ভব। এই ডাটাবেজ ব্যবহারের ফলে দরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং এতে দরপত্রদাতা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান উভয়ই উপকৃত হবে বলে আমরা মনে করছি।
বর্তমানে আমরা সফটওয়ারটির প্রধান উদ্দেশ্য “দরপত্রের স্বচ্ছ এবং দ্রুত মূল্যায়ন” বিবেচনা করে এটির যথাযত উন্নয়নের মাধ্যমে আরও বেশী ব্যবহার উপযোগী, ফলপ্রসু এবং অধিকতর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের কাজে নিয়োজিত আছি।
পরিশেষঃ সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১১ তারিখে ই-জিপি পোর্টালটি উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমানে (২৮ জুলাই ২০১৭ইং অনুযায়ী) প্রায় ১১২২ টি সরকারী সংস্থার আওতায় ৪৮৫২ সংখ্যক ক্রয়কারী দপ্তরে ই-জিপি মাধ্যম ব্যবহার করে দরপত্র আহবান ও চুক্তি স্বাক্ষর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি দরপত্রদাতা সিস্টেমে রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন এবং প্রায় এক লক্ষের বেশি দরপত্র এই অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে আহবান করা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে ই-জিপি ব্যবহার করে দরপত্র কার্যক্রমে অনেক গতি আসলেও এতে কিছু কিছু যায়গায় স্বাচ্ছন্দতার অভাব ছিল বলে অনেকের ধারনা যেমন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রায় বেশিরভাগই বলতে গেলে এখনও ম্যানুয়াল ভাবে করতে হচ্ছে। ই-জিপি ব্যবহারকারীরা প্রথম থেকেই এ বিষয়টাতে নজর দেয়ার জন্য সিপিটিইউ বরাবর দাবী করে আসছিলেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দরপত্র মুল্যায়নে সময় হ্রাস এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করার যে স্লোগান নিয়ে এই নতুন ডাটাবেজ সিস্টেমটি উদ্যোগ নিয়েছে তা বাংলাদেশে অনলাইন প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমকে আরও একধাপ এগিয়ে দিবে তা হলফ করেই বলা যায়। আশা করা যায় সিপিটিইউ সহ সকল ব্যবহারকারি এই ইনোভেটিভ উদ্যোগটিকে স্বাগত জানাবে।