Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আউটসোর্সিং …… সেবার আড়ালে ‘নতুন আদম ব্যবসা’

Facebook
Twitter
LinkedIn

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ আজকাল সরকারি দপ্তরে একটি জনপ্রিয় ধারণা ও চর্চা। ওপরের পর্যায়ের সব কর্মকর্তার চাকরি বেতন, ভাতা, উপরি, পেনশন—সব ঠিক থাকলেও শুধু নিম্নতম পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখে তা আউটসোর্স করা হয়। তাতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হয় এবং দক্ষতা বাড়ে বলে বড় একটি প্রচার আছে। অর্থাৎ কোনো কোনো বিশেষ সেবার জন্য প্রাইভেট কোম্পানি থেকে চুক্তিতে সেবাকর্মী নেওয়া হয়। তার জন্য বেতন বাদে কোনো ভাতা, ইনস্যুরেন্স পেনশন—কিছু দিতে হয় না। থাকে না কোনো প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব। সে কোম্পানি সরকার থেকে চুক্তিমতো টাকা পায় এবং তারাই ওই কর্মীদের বেতন দিয়ে থাকে। অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এ পদ্ধতিতে আজকাল সেবা গ্রহণ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আউটসোর্সিং নিয়োগের আড়ালে শোষণ-বঞ্চনা চলছে।

আউটসোর্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।

এ ব্যবস্থার অন্তরালে একটি অমানবিক শোষণ এবং শ্রম আইন ভঙ্গের মহোৎসব চলছে। যেমন, অফিস পাহারা দেওয়ার জন্য সিকিউরিটি কোম্পানির সঙ্গে একটি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা একটি চুক্তি করল। চুক্তি অনুযায়ী, সেবা গ্রহণকারী সংস্থা সিকিউরিটি কোম্পানিকে কর্মীর বেতন-ভাতা বাবদ অর্থ পরিশোধ করেন। সমস্যা হচ্ছে, সেবাকর্মীরা সে চুক্তি অনুযায়ী মধ্যস্বত্বভোগী সংস্থার কাছ সঠিক পারিশ্রমিক পায় না। ধরা যাক, ৩০ জন গার্ডের প্রতিজনের জন্য প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতাসহ বছরে ১৪ মাসের বেতন বাবদ কোম্পানিকে বিল ৮৪ লাখ টাকা, কিন্তু কর্মীরা পায় মাসে ৮ হাজার টাকা। আবার ৮ ঘণ্টার শিফট ধরে প্রতি শিফটে ১০ জন করে তিন শিফটের জন্য ৩০ জন দরকার। প্রাইভেট কোম্পানির প্রতি শিফট ১২ ঘণ্টার। অজান্তে ১০ জন গায়েব। মূল ১৪ মাসের বেতন থেকে প্রতি মাসে জনপ্রতি ১২ হাজার টাকা মেরে দিচ্ছে। এভাবে ৮৪ লাখ টাকার বিল থেকে ৫৬ লাখ টাকা কোম্পানি আত্মসাৎ করে, শুধু ২৯ লাখ টাকা কর্মীদের দিয়ে থাকে। বিষয়টি বোঝানোর জন্য এটি একটি কল্পিত উদাহরণ মাত্র। যাদের সন্দেহ হবে, তারা বিষয়টির বাস্তব অবস্থা খতিয়ে দেখুন।

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে ক্লিক করুন

বিষয়টি সরকার এবং দেশে নানা প্রকল্পের অর্থায়নকারী সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউনিসেফ, ইউকে এইড প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। তেমনিভাবে সরকারের ক্লায়েন্ট সংস্থা এলজিইডি, ডিপিএইচই, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গৃহায়ণ অধিদপ্তর প্রভৃতি দেখার বিষয়। এসব সংস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশেষায়িত পেশাগত সেবা গ্রহণ এবং প্রকল্পের নানা লজিস্টিক সেবার জন্য তথাকথিত একধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আউটসোর্সিং সেবা প্রদানকারী ফার্ম নিয়োগ করে থাকে। এই ফার্মগুলোও একইভাবে পেশাদার উপদেষ্টা থেকে শুরু করে ড্রাইভার, অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দারোয়ান – সবার জন্য মূল চুক্তিতে ধার্যকৃত বেতন দেয় না। তারা মূল অর্থায়নকারী সংস্থার চুক্তির বাইরে প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে পৃথক চুক্তি করে, যা খুবই গোপনীয় থাকে। এমনকি একই কাজের জন্য পাঁচজন থাকলে পাঁচজনের পাঁচ অঙ্কের বেতন হতে পারে। এভাবে আউটসোর্সিং সেবা প্রদানকারী ফার্মগুলো অনেকক্ষেত্রেই যোগসাজশে প্রকল্পের নির্ধারিত বেতনের সিংহভাগ আত্মসাৎ করে থাকে।

এভাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দারোয়ান, মালি, ড্রাইভার প্রভৃতি নিম্নস্তরের সেবাকর্মীদের বিষয়ে একটি অমানবিক শোষণ প্রক্রিয়াকে সর্বত্র প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের সঠিকভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না, যাতে তারা শ্রম আইনে মামলা করতে না পারে। তাদের কর্মঘণ্টা, ছুটি, উৎসব ভাতা ইত্যাদি অত্যন্ত অস্পষ্ট।

এজেন্সিকে ২৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে বেতন-ভাতার টাকাটা পুরোপুরি যাতে শ্রমিক পায়, তার পাকা বন্দোবস্ত করে আউটসোর্স ব্যবস্থাকে আইনানুগ ও মানবিক করা প্রয়োজন। কোনো সেবা সহায়তা দানকারী সংস্থা কর্মীর বেতন থেকে টাকা কর্তন করে যাতে অতি মুনাফা না করতে পারে, এ ব্যাপারে সরকারের শ্রম দপ্তরের একটা নজরদারি থাকতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিমা ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য শ্রম আইনের আওতায় প্রতিকার পাওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখার যাবতীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত।

দেশে লোকবল জোগানদার কিছু ভুঁইফোড় সংস্থার মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আজকাল একটি ‘নতুন আদম ব্যবসা’ হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে কাজ করছে। এখানে একটি বড় ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি পাকাপোক্তভাবে আসন করে নিচ্ছে। সরকারকে ছোট করার কৌশল হিসেবে একসময় নানা উন্নয়ন সহযোগীরা বিষয়টি গ্রহণের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু এ ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং তার মাধ্যমে একপক্ষের মধ্যযুগীয় মুনাফাবৃত্তি এবং অপর পক্ষের পেটে লাথি দেওয়ার বিষয়টি নীরবে হজম করা যায় না।

Source: প্রথম আলো

5 thoughts on “আউটসোর্সিং …… সেবার আড়ালে ‘নতুন আদম ব্যবসা’”

  1. Avatar
    মো: মাসুম রেজা

    আসলে আমার মতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিটা আমাদের মতো দেশের জন্য নয়, যে দেশে জনবল কম সেদেশের সরকার চাইলে অন্য দেশ থেকে জনবল নিয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশেতো প্রচুর পরিমাণ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। তাদেরকে এমন দাশ প্রথার মতো করে ব্যবহার করার দরকার কি? সরকারের কাছে আমার আকুল মিনতি দয়াকরে আমাদের মতো স্বাধীন দেশের জনগনকে দাশ-দাশী বানীয়ে রেখেন না।

    আউটসোর্সিং এর পরিবর্তে অন্য একটি নাম ব্যবহার কারা যেতে পারে। সেটা অতিরিক্ত জনবল (Additional Staff) যা সরকার নিয়োন্ত্রণ করবে। কোন প্রকল্প নতুন করে আসলে তাদের জন্য অতিরিক্ত জনবল দিয়ে কাজ করাতে হবে এবং সরকারের সকল সুবিধাদী তাদেরকে দিতে হবে।

    1. আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

      আউটসোর্সিং একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি। বাংলাদেশে এর ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেই এতো আলোচনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

সংবাদপত্রের পাতা থেকে

সরকারি কেনাকাটায় ১০% মার্জিন বাতিলের উদ্যোগ

কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিযোগীতা বাড়ানো, নতুন দরদাতাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা ছাড়াও বিশ্বব্য‍াংকের চলমান বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির শর্ত

Read More »
সূ-চর্চা

গেম থিওরির আদর্শ মডেল ও বিভিন্ন ধরণের গেমঃ প্রকিউরমেন্টের সাথে যার আছে নিবিড় সম্পর্ক

গেম থিওরিকে বাংলায় বলা যায় ক্রীড়াতত্ত্ব। গেম থিওরি কোথায় ব্যবহৃত হয় ? আসলে প্রশ্ন হবে কোথায় ব্যবহার হয় না। গেম

Read More »
ক্রয়কারি ফোরাম

পাবলিক প্রকিউরমেন্টে গেম থিউরি’র ভূমিকা ও প্রয়োগ

গেম থিওরি (Game Theory) কে বাংলায় বলা যায় ক্রীড়াতত্ত্ব। গেম থিওরি নিয়ে সহজ বাংলায় বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন। এই গেম

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top