বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন এবং ডলারের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ডলারের দামে পরিবর্তন এসেছে।
ডলারের ঊর্ধ্বগতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে দেশের বীমা বাজারে। বিশেষ করে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার, দৈনন্দিন জীবনের বাড়তি খরচ মেটাতে গিয়ে অনেকেই লাইফ বীমার প্রিমিয়াম ঠিকমতো দিতে পারছে না।
ডলারের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের বীমা খাতে। একটি প্রভাব হলো – এলসি খোলার পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এলসি না খুললে তো ইন্স্যুরেন্স হবে না। আরেকটি হলো নৌ বীমা ব্যবসা আকষ্মিকভাবে কমে গেছে। ফলে কোম্পানিগুলোর মেরিন ব্যবসাও কম হচ্ছে।
দেশের বাইরে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম ডলারে পরিশোধ করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কোম্পানিগুলো। মেরিন হাল ও এভিয়েশন হাল এর বীমা কভারেজ সাধারণত বড় অংকের হয়, যা বিদেশে পুনর্বীমা করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যবসা কিস্তিতে করা যায়। পুনর্বীমা কোম্পানি যদি রাজি হয় তাহলে ৪ বা ৬ কিস্তিতে এমনকি অনেক সময় ৮ কিস্তিতেও পুরো বছরের প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। এক্ষেত্রে পুনর্বীমা কোম্পানির নির্দিষ্ট হারে ডলারে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। আবার এই প্রিমিয়াম যখন পরিশোধ করা হয় তখনকার ডলারের রেট ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ৩ মাস পর পর প্রিমিয়ামের ইনস্টলমেন্ট দিলে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
Insurance নিয়ে আরও জানুনঃ সরকারি ক্রয়ে বেসরকারি কোম্পানির বীমা গ্রহনযোগ্য নয়
বীমা পলিসির আন্ডাররাইটিং করা হয় আগে এবং প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হয় পরে। এক্ষেত্রে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বিদেশে পাঠাতে বেশি দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। অথচ প্রিমিয়াম হার আগেরটাই থাকে। কান্ট্রি লিমিট ওভার হওয়ায় বীমার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। ফলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদেশে পুনর্বীমা প্রিমিয়াম পাঠাতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলোকে। বিশেষ করে যেসব পলিসির আন্ডাররাইটিং আরো আগেই হয়েছে, সেসব পলিসিতে এই লোকসানের মাত্রা বেশি।
তবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে বীমার মূল্যও কিছুটা বেড়েছে। যদিও এর যোগ-বিয়োগ করলে দেখা যাবে কোম্পানিগুলোর লোকসানই বেশি।