২০২০ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ … পল মিলগ্রোম ও রবার্ট উইলসন। ১২ অক্টোবর রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস কর্তৃক এ পুরস্কারের ঘোষণা আসে। পুরস্কার কমিটির মতে এই দুই অর্থনীতিবিদের সবচেয়ে পরিচিত কাজ হলো, জটিল নিলামের জন্য নতুন রীতির প্রবর্তন করা। অর্থ্যাৎ, আর্থিক সম্পদের বাজারমূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিলাম তত্ত্বের উন্নয়ন ও নতুন নিলাম পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য তারা এই পুরস্কার জিতেছেন। তাঁরা মৌলিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকই, তবে পরবর্তীকালে সেই ফলাফল বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেছেন। তাঁদের উদ্ভাবন সমাজের প্রভূত উপকারে আসবে বলে নোবেল কমিটি মনে করে।
শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারি গন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে ক্লিক করুন।
বিভিন্ন জিনিস কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে অকশন বা নিলাম হয়। সবখানেই নিলাম আছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তা প্রভাব ফেলে। এই নিলাম সাধারণত বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কিসের ওপর নির্ভর করে, সেটা নিয়েই এই কাজ।
নিলাম নির্ভর করে নিলামের নিয়ম, নিলামের ফরম্যাট বা বিন্যাস, নিলামে ‘বিড’ করার পথ খোলা না বন্ধ এ সবের ওপরে। আরও অনেক বিষয় আছে, যেমন —
-
-
- কোনও পণ্যের নিলাম চলাকালীন কী ভাবে দরের ওঠা নির্ভর করে ?
- নিলামে অংশগ্রহণকারীদের আরচণই বা কেমন থাকে ?
- কোন পণ্য দরদাতাদের কী ভাবেই বা আকর্ষণ করে ?
- একজন অংশগ্রহণকারী কতবার ‘কল’ দিতে পারেন ?
- বিজেতাকে শেষ পর্যন্ত কতটাকা দিতে হয়, নিজের ‘বিড’ অনুযায়ী না দ্বিতীয় ‘বিডারে’র ঘোষণামূল্য মাফিক ?
- একই বস্তুর নিলামের ‘রেট’ কি ক্রেতাভেদে আলাদা আলাদা হবে, না একই থাকবে ?
-
যে-বস্তুর নিলাম চলছে, তার মূল্য সম্বন্ধে ‘বিডার’দের কার কী কী ধারণা, সেই ঘোর অনিশ্চয়তাটাও এখানে বিবেচ্য। সব মিলিয়ে মোটামুটি এ সব বিষয়ই সাধারণত অকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যাখ্যা করে। নিলামের গেম থিওরি তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই দুই অর্থনীতিবিদ সর্বোচ্চ দরপ্রত্যাশীদের সুবিধা করে দিতে চাননি, বরং যাঁরা সমাজের ভালো করতে চান, তেমন প্রকৃতির নিলামকারীদের হয়ে কাজ করেছেন। নিলাম কীভাবে কাজ করে এবং দরদাতারা কেন একটি নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করেন এই দুই অর্থনীতিবিদ শুধু তাই সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেনি তারা পণ্য-সেবা বিক্রির জন্য সম্পূর্ণ নতুন নিলাম পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছেন।
রবার্ট উইলসন অর্থনীতির গেম থিওরি এবং তার প্রায়োগিক জ্ঞানে বিশ্বনন্দিত একজন বিশেষজ্ঞ। তাঁর গবেষণার মধ্যে রয়েছে বাজার পরিকল্পনা, মূল্য নির্ধারণ, দর-কষাকষি, তথ্য অর্থনীতি, শিল্পসংগঠন, নিলাম পরিকল্পনা, জ্বালানি, প্রযুক্তিগত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে প্রতিযোগিতামূলক ডাকের পদ্ধতি নির্ধারণ। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তাঁর দ্য থিওরি অব সিন্ডিকেটস কয়েক প্রজন্ম ধরে ইকোনমিকস, ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিংয়ের শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে যাচ্ছে।
একটি সাধারণ দাম ধরে রবার্ট উইলসন নিলামের জন্য একটি তত্ত্বের উদ্ভাবন করেছেন। নিলামের শুরুতে যে দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষে তা প্রত্যেকের জন্য সমান হয়। তিনি আরও দেখিয়েছেন যে কেন বিডাররা কেন নিজেদের সাধ্যের থেকে নিলামে কম অর্থ হাঁকেন। কীভাবে তাঁরা বেশি অর্থ দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় থাকেন, সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছেন এই আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক।
অন্যদিকে, পল মিলগ্রোম একটি সাধারণ তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। যে নিলাম প্রক্রিয়ায় সাধারণ দামের পাশাপাশি বিডারদের মধ্যে দাম পরিবর্তন হয়। একাধিক নিলাম প্রথার পর্যালোচনা করে এই গবেষক জানিয়েছেন, নিলামের সময় বিডাররা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাম জেনে গেলে বিক্রেতারা বেশি লাভবান হন। রবার্ট উইলসনের মতো পল মিলগ্রোমও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৌলিক গবেষণা কীভাবে সমাজের উপকারে উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে তারই চমৎকার উদাহরণ এই নতুন নিলাম পদ্ধতি।
এই বছরের পুরস্কার জয়ী পল মিলগ্রোম ও রবার্ট উইলসন নিলাম তত্ত্বের যে উন্নতি ঘটিয়েছেন এবং নতুন যে নিলাম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাতে বিশ্বজুড়ে ক্রেতা, বিক্রেতা ও কর প্রদানকারীরা উপকৃত হয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে নতুন নোবেল বিজয়ীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা কেবল নিলাম বোঝার উপায় গভীরভাবে পরিবর্তন করেনি – কীভাবে জিনিস নিলাম হয় সেই রীতিরও পরিবর্তন করেছেন। বিভিন্ন দেশের সরকার এখন যেভাবে টেলিকমগুলোকে তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়ে থাকে, মিলগ্রম ও উইলসন প্রবর্তিত রীতিতে বিভিন্ন অঞ্চলে একই সঙ্গে নিলামের সুযোগ সৃষ্টি হলো।
যে তত্ত্ব নিয়ে নোবেল জিতেছেন, সেই নিলাম প্রক্রিয়ায় নিজে কবে অংশ নিয়েছেন, তা বলতে গিয়ে রীতিমতো ভাবতে বসেন উইলসন। পরে মজার ছলে জানান, একটি ই-কমার্স সাইট থেকে তাঁর স্ত্রী স্কি বুট কিনেছেন। সেটা একটা নিলাম হতে পারে।
যে নিলাম তত্ত্বের জন্য তাঁরা নোবেল পেয়েছেন তাঁর উদ্ভাবক হলেন, কানাডীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ভিকরে। নিলামের গতিশীলতা ব্যাখ্যা করার জন্য গেম থিওরি প্রথম ভিকরেই ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে অসম্পূর্ণ তথ্যের অধীনে প্রণোদনা তত্ত্বের জন্য নোবেল পান ভিকরে। ভিকরে রবার্ট বি উইলসন ও পল মিলগ্রমের শিক্ষক।
এই নিলাম নিয়ে এতোদিনে আলোচনা শুরু হলেও বাঙালি কিন্তু অনেক আগের থেকেই নিলামের আলোচনায় ছিল … সেই ১৯৪৬-৪৭ সালের দিককার জীবনানন্দ দাসের কবিতায় নিচের লাইনগুলি দেখলে তাই মনে হয় ……
‘অনেকেরই ঊর্ধ্বশ্বাসে যেতে হয়,
তবু নিলেমের ঘরবাড়ি আসবাব
অথবা যা নিলেমের নয়
সে-সব জিনিস
বহুকে বঞ্চিত ক’রে
দু-জন কি একজন কিনে নিতে পারে।’
3 thoughts on “শেষ পর্যন্ত “নিলামে উঠল” অর্থনীতিতে ২০২০ সালের নোবেল পুরষ্কার”
I absolutely love your website.. Great colors & theme. Ginny Kendrick Kimmi
I am thinking of visiting your website again Thanks
I like and follow your site, thanks