নতুন কোম্পানি কিভাবে খুলবেন ?

অনেকেই ভাবেন হয়তো নতুন কোম্পানি খুলতে অনেক আইনগত ও আর্থিক ঝুঁকি-ঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু ব্যাপারটি আদৌ তেমন নয়। দেশে প্রচলিত ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের বিধি-বিধান পরিপালন সাপেক্ষে একটি নতুন কোম্পানি খুলে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ আছে।
একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে ব্যবসা শুরু করতে হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস এন্ড ফার্মস – এ নতুন কোম্পানি নিবন্ধন করাতে হয়।
নিবন্ধন অফিসটির ঠিকানা টিসিবি ভবন (৭ম তলা), ১, কাওরান বাজার, ঢাকা। কোম্পানি আইন ও অন্যান্য বিধি অনুসারে এটি কোম্পানি, সমিতি ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে।
বিনিয়োগকারীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কোম্পানি ২ প্রকারঃ একক ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত (পার্টনারশিপ) কোম্পানি।
এজন্য কোম্পানি গঠনের আগে প্রাথমিক ধাপেই মাথায় রাখতে হবে কী ধরনের কোম্পানি গঠন করবেন। সেই পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু কার্য সম্পন্ন করতে হয়। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য পৃথক নিয়ম রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনে সুবিধা কি ?
পার্টনারশিপ কোম্পানি হলে পছন্দকৃত নামের শেষে মের্সাস থাকবে, প্রাইভেট কোম্পানির শেষে লিমিটেড এবং পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে পিএলসি লেখা থাকবে।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া:
আগেই বলা হয়েছে নূন্যতম ২ জন এবং অনধিক ৫০ জন মিলে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
(১) কোম্পানির নাম (নামের ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক)
(২) সংঘ বিধি ও সংঘ স্মারক।
(৩) শেয়ারহোল্ডারদের বিবরণী (যদি শেয়ারহোল্ডার একজন বাংলাদেশী হয় তবে জাতীয় পরিচয়পত্র)
(৪) পরিচালক বিবরণী (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সহ)
(৫) নিবন্ধিত ঠিকানা
(৬) স্বাক্ষরিত IX ফরম
(৭) বিদেশী শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালক পাসপোর্ট অনুলিপি।
কোম্পানি করার প্রথম ধাপ হচ্ছে নাম নির্বাচন। যে নাম নির্বাচন করলেন, আগে যাচাই করতে হবে যে সেই নামের কোনো কোম্পানি ইতিমধ্যে আছে কি না। যে নামে কোম্পানিটি করতে চাচ্ছেন, সেই নামে কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হয়ে থাকলে আপনাকে নতুন নাম খুঁজতে হবে। একই নামে একাধিক কোম্পানির নাম নিবন্ধন হতে না দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
পছন্দকৃত নামটি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে সার্চ দিতে হবে। ওই নামে ইতিমধ্যে কোনো কোম্পানির নিবন্ধন না হয়ে থাকলে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ না থাকলে কিংবা আইনগত জটিলতা না থাকলে আরজেএসসি কর্তৃপক্ষ নামের ছাড়পত্র বা নেম ক্লিয়ারেন্স দেবেন। অবশ্য এই নেম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আরজেএসসির ওয়েবসাইটে (www.roc.gov.bd) গিয়ে একাউন্ট খুলে আবেদন করতে হয়। নির্ধারিত ফি ৬০০ টাকার সাথে ১৫ শতাংশ মূসক ফি প্রদান করতে হয়। পরবর্তীতে ওই ওপেন হওয়া একাউন্ট লগ-ইন করে নামের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে।
এই ছাড়পত্র আরজেএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে। চাইলে ৬ মাস শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আরজেএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন সাপেক্ষে সময় বাড়ানো যায়।
কোম্পানি নিবন্ধন করতে আরজেএসসির ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হয়। কোম্পানির জন্য তৈরি করতে হয় সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি। কোম্পানির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে বর্ণনা থাকে এগুলোতে। ব্যবসার নাম, ব্যবসার ধরন, অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণও উল্লেখ থাকে।
কীভাবে কোম্পানি পরিচালক পর্ষদ নির্বাচিত হবে, কোম্পানির সাধারণ সভা এবং বিশেষ সভা কীভাবে কখন হবে, তারও উল্লেখ থাকবে এতে। কীভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোনো সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়ও থাকবে।
সবকিছু প্রস্তুত করেই আরজেএসসির ওয়েবসাইট থেকে কোম্পানির নিবন্ধনের আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে হবে এবং ওই আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। সঙ্গে সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধির মূল কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি, নামের ছাড়পত্রের সনদ, পরিচালকদের তালিকা, পরিচালকের সম্মতিপত্র দিতে হবে।
আরেজএসসিতে এগুলো জমা দেওয়ার পর যাচাই-বাছাই হবে। এরপর কোম্পানির নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য করে দেবে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট ফি ধার্য হয়ে থাকে সাধারণত। ব্যাংকে ফি জমা করার পর কাজ শেষ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। আরজেএসসির কর্মকর্তারা নথি পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে ডিজিটালভাবে স্বাক্ষর করবেন। এরপর নিবন্ধনপত্র (Certification of incorporation), সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি এবং ফরম ১২ ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবে আরজেএসসি। এগুলো পেয়ে যাওয়া মানেই কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়েছে।
এত দিন পাবলিক ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থাকলেও ২০২০ সালের সংশোধিত কোম্পানি আইন অনুযায়ি এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের জন্যও সুযোগ করা হয়েছে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আইনের বিধিবিধান পরিপালন করে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হতে পারে। আর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা হতে হয় ৭ জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।
আবেদনকারীকে সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্সও সংগ্রহ করতে হয়।
ব্যবসার ধরন বুঝে বি.এস.টি.আই. বা অন্যান্য সংস্থা থেকেও সনদের প্রয়োজন হতে পারে।
আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ কোম্পানি নিবন্ধনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

Moral hazard এর সাথে প্রকিউরমেন্টের কি সম্পর্ক ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard নিয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে দেখুনঃ Moral Hazard কি ? সরকারি ক্রয়

Moral hazard কি ?
মোরাল হ্যাজারড! এটা একটা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। Moral Hazard বা নৈতিক ঝুঁকি হল অর্থনীতি ও ফাইন্যান্সের একটা ধারণা যেটা এমন

দরপত্র দলিলের মূল্য কত হবে ? কিভাবে নির্ধারণ করবেন ?
ক্রয়কারী কর্তৃক দরপত্রদাতার নিকট সরবরাহের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিল হচ্ছে দরপত্র দলিল বা টেন্ডার ডকুমেন্ট (Tender document) বা টেন্ডার সিডিউল। বিজ্ঞাপন

Agency theory and its relevance in procurement
Agency theory, also known as principal-agent theory, is a theory that explains the relationship between a principal and an agent.