ডেলিগেশন অফ ফাইন্যান্সিয়াল পাওয়ার (DOFP) কি ?

ডেলিগেশন অফ ফাইন্যান্সিয়াল পাওয়ার বা Delegation of Financial Power (DOFP) অর্থ হলো আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ।
আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বলতে আর্থিক বিষয়ে সরকারের প্রশাসনিক মন্ত্রনালয় বা বিভাগগুলিকে অর্পিত ক্ষমতা বোঝায়। পিপিআর-০৮ এর বিধি ২(৬) অনুযায়ি “আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ” অর্থ সরকারী ক্রয়কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে, সরকারকর্তৃক, সময় সময়, জারীকৃত আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশ বা উহার অধীন প্রদত্ত আর্থিক ক্ষমতা পুনঃঅর্পণ আদেশ।
অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আর্থিক ক্ষমতার অর্পণ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথমটি, রাজস্ব বাজেটের সাথে সম্পর্কিত এবং দ্বিতীয়টি উন্নয়ন বাজেটের সাথে সম্পর্কিত।
DOFP এর বিবর্তন
১৯৭৫ এর Rules of Business এর আলোকে (১৯৯৬ সালে সংশোধিত আকারে জারি করা হয়েছে) অর্থ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রেফারেন্স বাধ্যতামূলক। সে হিসাবে, মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি জাতীয় সংসদের অনুমোদনক্রমে অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দের মধ্যে এবং DoFP সীমা অনুযায়ি চুক্তি অনুমোদন করে স্বাধীন ভাবে ব্যয় করতে পারে।
এরপর সরকার উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের সমস্যাবলী দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা (ডেলিগেশন অব ফিন্যানসিয়েল পাওয়ারস) জারী করেছিল। অতঃপর ১৯৯৪ সালে এই অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা পর্যালোচনা পূর্বক তা সংশোধনের জন্য সুপারিশমালা প্রণয়নের নিমিত্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটির সুপারিশমালার ভিত্তিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/হেডস অব ডিপার্টমেন্টস/ প্রকল্প পরিচালকগণকে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিষয়ে পুনরায় এপ্রিল ১৯৯৪ সালে অর্থ বিভাগ দ্বারা “উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আর্থিক ক্ষমতা” এর অফিস আদেশ জারি করা হয়েছিল। তখন এতে তেত্রিশটি ক্ষেত্র বিবেচনা করে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষমতা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অর্পণ করা হয়েছিল।
আরও দেখুনঃ কেমন ছিল ১৯৯৪ সালের DoFP ?
রাজস্ব এবং উন্নয়ন উভয় ধরনের বাজেটের ব্যয়ের জন্য সর্বশেষ DoFP ১৬ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে [অর্থ বিভাগ অফিস স্মারক নং 07.00.0000.151.22.003.15.351(1)] জারী করা হয়েছিল। এরপর গত ২০১৮ সালে সর্বশেষ DoFP এর উপর কিছু সংশোধন করে সংশোধিত আদেশ জারী করা হয়েছে।
সর্বশেষ DoFP দেখতে ক্লিক করুন।
পরিশেষ
অর্পিত ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল (i) মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রয়োজনীয় বিবেচিত হিসাবে তার ক্ষমতা সংযুক্ত বিভাগে অর্পণ করতে পারবে, (ii) প্রতিটি আর্থিক বছরের শুরুতে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রকিউরমেন্ট এন্টিটি (HOPE) প্রধানের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে (iii) দেওয়ানী কাজ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে টাকার উপরে ব্যয় সীমা মেনে চলতে হবে।
সর্বশেষ DoFP তে বর্ণিত বিষয়সমূহের ব্যয় করার প্রয়োজন হলেই কেবল অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রয়োজন হবে এবং তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি এ রকম যে কোন বিষয়ে ব্যয় মঞ্জুরির জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহকে পূর্ণ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ (২০১২ পর্যন্ত সংশোধিত)-এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ, প্রচলিত বিধি-বিধান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জারীকৃত সরকারি আদেশ পালন সাপেক্ষে এই অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে অর্থ বিভাগকে অবহিত করে তাদের অধীনস্থ কর্তৃপক্ষ/কর্মকর্তাগণকে পুনঃঅর্পণ করতে পারবেন।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

টেকসই ক্রয় (Sustainable Procurement) এর কিছু সমকালীন ও বস্তুনিষ্ঠ উদাহরণ
টেকসই ক্রয় (Sustainable Procurement) হচ্ছে এমন একটি ক্রয় এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সামগ্রিক ভাবে ব্যয়ের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক

Bangladesh: Public Procurement Reform Stuck Even After the Ordinance Issued!
The Government of the People’s Republic of Bangladesh issued the “Public Procurement (Amendment) Ordinance, 2025” on May 4, 2025. Its

অধ্যাদেশ জারীর পরও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সংস্কার আটকে আছে কেন !
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গত ৪ঠা মে ২০২৫ ইং তারিখে “পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” জারী করা হয়েছে। এর মূল

একাধিক ঠিকাদারের দর সমান হলে Past Performance Matrix দিয়ে কিভাবে Ranking করবেন
পিপিআর-০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ি একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে দর সমান হলে কিভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারন হবে তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে