PPR-08 এর সর্বশেষ সংশোধনীতে অন্তর্ভূক্ত নির্ণায়কগুলোর উপর একটি বিশ্লেষণ …

অতি সম্প্রতি (১০ জুন, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ), সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট কর্তৃক পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-০৬ এর সংশোধনী অনুযায়ী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-০৮ এ বেশকিছু সংশোধনী যোগ হয়েছে। ফলে, সমদরের ক্ষেত্রে আগের ৮টি নির্ণায়কের পরিবর্তে নতুন ৩টি নির্ণায়ক যুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ি সমদরের ক্ষেত্রে, যিনি সর্বোচ্চ নাম্বার পাবেন তিনি হবেন যোগ্য দরদাতা।
এখন, সমদরের ক্ষেত্রে নতুন ৩টি নির্ণায়ক কি বিড়ম্বনা বাড়াবে না কমাবে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে।
তবে নিচের বিশ্লেষণ পূর্বক আশংকাগুলো ভাল ভাবে অনুধাবন করার জন্য এই ৩টি নির্ণায়কের মাধ্যমে কিভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচন করা হবে তা আগে উদাহরন সহ দেখলে সহজ হবে বলে মনে করছি। এই বিষয়ে একটি সুন্দর, সহজ এবং তথ্য ভিত্তিক উদাহরন দেখতে ক্লিক করুণ।
যে আশংকাগুলো করাই যায়
১। পিপিআর-০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনীতে সমদরের ক্ষেত্রে বিবেচ্য নির্ণায়ক সমূহ সংশোধনের মাধ্যমে আসলে অফিসিয়ালি একপ্রকার স্বীকার করেই নেয়া হল যে ই-জিপিতে দরপত্র আহবানের পরেও এবং দাপ্তরিক প্রাক্কলন গোপন থাকার পরেও একাধিক ঠিকাদারে দাখিলকৃত দর সমান হয়ে যাচ্ছে … এবং বিষয়টা কাকতালীয় নয় … প্রায়শঃ-ই হচ্ছে।
২। আবার ক্রয়কারীর ডিপার্টমেন্ট এর সেই চুক্তিসমূহ-ই শুধুমাত্র বিবেচ্য হবে যেগুলো অফিসিয়াল প্রাক্কলিত দরের ১.৭৫ ভাগের মধ্যে … … এই “১.৭৫ ভাগ” বিষয়টি এখানে কিসের ভিত্তিতে বিবেচনায় আনা হলো তা পরিষ্কার নয়।
৩। ৩টি নির্ণায়কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার জন্য দরদাতাদেরকে তাদের প্রায় বেশির ভাগ কাজের তথ্যই দিতে হবে, ফলে আগের মতোই দরপত্র মূল্যায়নে যে বেশি সময় যে লাগবে তা বোঝাই যাচ্ছে। আবারও এক বিশাল ডাটাবেজের প্রয়োজন হবে, আগের মতই সমস্যা রয়েই গেল।
৪। আসলে ছোট ছোট কাজের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশি সুবিধাজনক হবে বলে মনে হচ্ছে না। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে না তা হলফ করেই বলা যাবে না। কারন, বিগত ২ বছরে যে হারে বড় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট ছোট কাজ পেয়েছে … এখন এই ফর্মূলা অনুযায়ী ফল মিলবে কি না তা ভবিষ্যতেই বোঝা যাবে।
৫। যে সব ক্ষেত্রে ক্রয়কারী হচ্ছে পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদ … … সে সব ক্ষেত্রে এই ফর্মূলা প্রতিযোগিতাকে সীমিত করে ফেলবে বলে ধারনা করা যায়। পৌরসভা বা উপজেলা পরিষদের দরপত্রের ক্ষেত্রে ক্রয়কারীই একটি। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ (৮০%) নাম্বার যেহেতু শুধুমাত্র ক্রয়কারীর ডিপার্টমেন্ট এর চুক্তিসমূহের জন্য বিবেচ্য হবে সেহেতু ক্রয়কারী চাইলে দরপত্র আহবানের পূর্বেই মোটামুটি ধারনা করতে পারবে যে তার কোন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এমনিতেই ১০% হিসেবে দাখিলকৃত দর দেয়ার ক্ষেত্রে ক্রয়কারীর অধীন ইতিপূর্বেকার ঠিকাদাররা বেশি সুবিধাজন অবস্থানে থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়, এখন এই ফর্মূলার কারনে বাইরের নতুন ঠিকাদাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আসলে ছোট ছোট ডিপার্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে এই নতুন ফর্মূলা বিড়ম্বনা কমাবে কি না তা ভবিষ্যতেই পরিষ্কার হবে।
৬। নতুন সংশোধনীর ফলে বিধি ৯৮(৩১) ও ৯৮(৩২) প্রয়োগের আর সুযোগ নাই। যদিও বলা হয়েছে বিধি ৯৮(৩১) ও ৯৮(৩২) প্রয়োগের পূর্বে এই Evaluation & Rating Matrix ব্যবহার করতে হবে কিন্তু পারতপক্ষে score সমান হলে বা শুণ্য হলে সেক্ষেতে দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহবানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপরের আশংকাগুলো শুধুমাত্র তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য তুলে ধরা হল। এখন, সর্বশেষ সংশোধনীর সুফল বা কুফলের সঠিক পরিসংখ্যান সত্যিকার অর্থে ভবিষ্যত-ই ভাল বলতে পারবে। তবে, এর মাধ্যমে শুধুমাত্র টার্নওভারের মাধ্যমে দরদাতা নির্বাচিত হওয়ার পথ যে বন্ধ হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

Reverse Logistics: The Untapped Goldmine in Modern Procurement
In today’s competitive and environmentally conscious marketplace, the conversation around logistics is no longer just about moving goods from Point

চুক্তি অনুমোদনের সময় বাজেট বরাদ্দ আছে কি না তা জানা প্রয়োজন কেন ?
বাজেট হচ্ছে ক্রয়কারি দপ্তরের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। ক্রয়কারি দপ্তরে বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যয়ের সমন্বয় সাধন করতে হয় এবং সে মোতাবেক

সিএজি কার্যালয়ে অডিট সংক্রান্ত বিশেষ সেবা কার্যক্রম চলছে
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৫২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চার দিনব্যাপী (১২-১৫ মে, ২০২৫) সারা বাংলাদেশের সকল নিরীক্ষা ও

“Significantly low price)” নিয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ কী কী উল্লেখ আছে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত একটি অধ্যাদেশ হলো “পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫”। এই অধ্যাদেশটি
2 thoughts on “PPR-08 এর সর্বশেষ সংশোধনীতে অন্তর্ভূক্ত নির্ণায়কগুলোর উপর একটি বিশ্লেষণ …”
সদস্য হতে ইচ্ছুক তবে নিজস্ব বিকাশ নম্বর নেই অন্য নম্বর থেকে পাঠিয়ে শেষের নম্বর বললে চলবে কিনা?
অবশ্যই চলবে।
তবে সেক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব মোবাইল নাম্বার থেকে বিকাশ মোবাইল নাম্বার আর যে ইমেইল দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেছেন সে ইমেইল টা মেসেজ দিলেই হবে।
ধন্যবাদ।