সরকারি ক্রয়ে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ (Tendering) পর্যায়ে দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একজন গ্রহণযোগ্য ঠিকাদার বা সরবরাহকারী নির্বাচন করা হয়। অতঃপর যথাযত প্রক্রিয়ায় চুক্তি সম্পাদনের পর চুক্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্রয় কার্য সমাপ্ত করা হয়। অর্থাৎ, ১টি ক্রয় সমাপ্ত করার জন্য ২টি পর্যায় সম্পন্ন করতে হয়ঃ দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ (Tendering) এবং চুক্তি ব্যবস্থাপনা (Contract Management)।
এই ক্রয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কারনে দরপত্রদাতা বা সরবরাহকারী বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ডিবার করা প্রয়োজন হতে পারে।
এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুনঃ কি কি কারনে একটি প্রতিষ্ঠানকে ডিবার করা যায় ?
সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিতে অনেক পদ্ধতিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, অংশগ্রহনকারীদের যোগ্যতার পর্যালোচনা, চুক্তি ব্যবস্থাপনা, ইত্যাদি যে কোন পর্যায়ে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদারের Non-Performance এর অর্থ হল যে ক্রয়টি পণ্য ও পরিষেবার যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, খেলাপি ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে চুক্তির আওতায় বিভিন্ন প্রতিকার নিতে হয়। বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ তেও প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে।
বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ধারা ৬৪ অনুযায়ি কোন বিধান লংঘন করলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ডিবার (Debar) বা সংশ্লিষ্ট ক্রয় কার্যক্রমে বা ভবিষ্যতে অন্য কোন ক্রয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা যাবে। সে অনুযায়ি দরপত্র মূল্যায়ন চলাকালীন সময়ে দরপত্রদাতা ইতোমধ্যেই ডিবার থাকলে এরজন্য দাখিলকৃত দরপত্র মূল্যায়নে বাদ যাবে। অর্থাৎ সেই দরপত্রটি আর NOA এর জন্য সুপারিশকৃত হবে না।
এ বিষয়ে আরও দেখুনঃ NOA ইস্যু’র পর ডিবার হলে কি করবেন ?
আইন ভঙ্গ করা, কাজ না করা অথবা poor perform করা ঠিকাদারদের ভবিষ্যত প্রকিউরমেন্টে অংশগ্রহণ করা থেকে বাদ দেওয়া ঝুঁকি কমানোর, সরকারি তহবিল রক্ষার এবং Value for Money অর্জনের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। বেশিরভাগ সরকারি ক্রয় আইনে দুর্নীতি, প্রতারণা, চক্রান্ত বা জবরদস্তিমূলক কার্যে জড়িত হওয়া, খারাপ পারফরম্যান্স বা চুক্তির মৌলিক শর্ত ভঙ্গের জন্য ঠিকাদারদের বাদ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে এসব প্রতিকার ভবিষ্যতের ক্রয় সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
বিভিন্ন দেশের প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম পর্যালোচনা করে দেখা যায় poor perform করা ঠিকাদার/সরবরাহকারি/পরামর্শকদের মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন পন্থা রয়েছে, কিছু পন্থা “প্রতিরক্ষামূলক (Protective)” বাকিগুলি “শাস্তিমূলক (Punitive)”। অনেক ক্ষেত্রে আবার উভয়-ই প্রয়োগ হয়ে থাকে। আবার, বিভিন্ন ক্রয় আইনে এসব ক্ষেত্রে শাস্তি বা সুরক্ষা প্রয়োগের পদ্ধতির কিছুটা ভিন্নতা-ও রয়েছে।
অন্যান্য দেশের সরকারি ক্রয়ে ডিবারের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা আছে জানতে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ অনুযায়ী দরপত্রে অংশগ্রহন না করতে পারার শাস্তি বা অন্যান্য দরপত্র মূল্যায়নেও বাদ দেয়ার মাধ্যমে যোগ্য দরপত্রদাতাদের সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দুটো ব্যবস্থাই রাখা আছে। যে ক্রয়কারি ডিবার ঘোষণার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করছেন তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দরপত্র মূল্যায়নকারী কর্মকর্তাগণের বা অন্যান্য ক্রয়কারির এখানে আলাদা ভাবে কোন কিছু বিবেচনার কিছু নেই। তবে পৃথিবীর অনেক দেশের সরকারি ক্রয়ে এ ধরনের ক্ষেত্রে আলদা করণীয় উল্লেখ আছে। যেমন নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের ক্রয় আইনে কিছুটা ভিন্ন সুবিধা আছে।
Case Study: New Zealand & United Kingdom
নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যতে সরকারি ক্রয়ে দরপত্র মূল্যায়নের সময় গ্রহণযোগ্য ঠিকাদার বা সরবরাহকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দরপত্র মূল্যায়নকারী কর্মকর্তাগণ তাদের নিজস্ব কিছু বিশেষ ক্ষমতা (Discretion) ও বিচক্ষণতা প্রয়োগ করতে পারেন। এই বিশেষ ক্ষমতা তারা কেস বাই কেস ভিত্তিতে প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দরপত্র মূল্যায়নকারী কর্মকর্তাগণ প্রয়োজনে Past Performance এর ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী দরপত্রদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে পারেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দরপত্রদাতাদের প্রমাণ করতে হয় যে তাদের Past Performance খারাপ থাকলেও বর্তমানে তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক।
Past Performance এর ধারণা থেকে প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন যে একজন ঠিকাদারের পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করার ক্ষমতা তার অতীত কর্মক্ষমতা দ্বারা আংশিকভাবে অনুমান করা যেতে পারে। ক্রয় কার্যে চুক্তি পরবর্তী ঝুকি হ্রাস করার জন্য ঠিকাদারদের অতীতের সন্তোষজনক রেকর্ড অনেক গূরুত্বপূর্ণ। এজন্য Past Performance এর উপর ভিত্তি করে “ডিবারমেন্ট (debarment)” (অযোগ্যতা, স্থগিতাদেশ বা কালো তালিকা, ইত্যাদি ভাবেও উল্লেখ করা হয়) ব্যবহার করে দরপত্রে অংশগ্রহন করা থেকেই বিরত রাখা এবং দরপত্র মূল্যায়ন পর্যায়েই অংশগ্রহনকারী দরপত্রদাতাকে বাদ দেয়া (exclusions) এর মাধ্যমে ক্রয়কারিগন তুলনামূলক কম ঝুকিপূর্ণ এবং Reliable ঠিকাদার বাছার করার মাধ্যমে সরকারি তহবিলকে সাম্ভাব্য ঝুকির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।
কিন্তু Past Performance এর উপর ভিত্তি করে “প্রতিরোধ” এবং “শাস্তি” প্রদানমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যত দরপত্রে অংশগ্রহন করা থেকে বিরত রাখা অনেক সময় ভুল বার্তা দিতে পারে। Past Performance এ ব্যর্থতা অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হতে পারে এবং এগুলো case by case আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। একটি উচ্চ-মূল্যের জটিল নির্মাণ চুক্তি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ এই নয় যে ঠিকাদার কম-মূল্যের চুক্তি সম্পাদন করতে অক্ষম হবে বা ঠিকাদার নির্মাণ কাজের জন্য পূর্ববর্তী পরিষেবাগুলি সম্পাদন করতে অক্ষম হবে।