আত্মঘাতী নীতিতে কেন মেতে উঠল এনসিটিবি ?
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা হলো, বছরের প্রথম দিনই আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া। নিঃসন্দেহে এটি সর্বমহলেই ব্যাপকভাবে নন্দিত উদ্যোগ। অন্য দিকে পুস্তক ব্যবসায়ীদের বরাবরে আমাদের জন্য আরেকটি ইতিবাচক ও গর্ব করার মতো সংবাদ হচ্ছে, বই ছাপার কাজে চলতি বছর বিশ্বব্যাংক কিংবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের সহায়তা নেয়নি সরকার। ব্যাপারটিকে আরো বিস্তারিত পরিসরে বলতে হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০১৯ সালের জন্য) বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার জন্য দাতাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বই মুদ্রণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। বিশ্বব্যাংক বা কোনো দাতা সংস্থার চাপও ছিল না।
উল্লিখিত প্রসঙ্গটি যে কারণে খুবই উল্লেখযোগ্য ও বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে তা হলো, জাতীয় শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কৃষ্ণা প্রিন্টার্স ও স্বপ্না ট্রেডিং নামে দুটো কালো তালিকাভুক্ত ভারতীয় মুুদ্রণপ্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে নির্লজ্জ চালাকি ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নিজস্ব অর্থায়নে পুস্তক ছাপানো হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে না। অথচ এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্রসাহা সব ধরনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে উল্লিখিত দু’টি কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে পুনঃদরপত্র আহ্বান করেছেন বলে অভিযোগ করেছে দেশীয় মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ মালিক সমিতি। অভিযোগে তারা বলেন, পুনঃদরপত্র না করে প্রাথমিকের কার্যাদেশ দেয়া যেত, যদি দরপত্র পুনঃদরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা হতো। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হতো এবং বইও যথাসময়ে পাওয়া যেত। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে এমন দুই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, এ কাজে যাদের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই।
এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান যে জটিলতার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তা হলো পুনঃদরপত্রের কার্যাদেশ দেয়ার পর মুদ্রণকারীদের সাথে চুক্তি করতে আরো ২৮ দিন সময় দিতে হবে। ফলে অক্টোবরের মধ্যে বই ছাপিয়ে উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছানোর সরকারি সিদ্ধান্ত প্রায় অসম্ভব। এখন থেকে ২৮ দিন পর চুক্তি হলে বই সরবরাহ করতে তারা সময় পাবে আরো ৬০ দিনের মতো। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বই ভারত থেকে ছাপিয়ে দেশের উপজেলাপর্যায়ে পৌঁছে দেয়া অসম্ভব। এ অবস্থায় ১ জানুয়ারি ২০১৯ প্রাথমিকের কোনো শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হাতে পাচ্ছে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মতে, বই ছাপার জন্য এনসিটিবি যখন প্রথম দরপত্র আহ্বান করেছিল, তখন কোনো কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা ও টেন্ডারের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়েছিল। বাদ পড়াদের মধ্যে এখন কাজ পাওয়া দু’টি প্রতিষ্ঠানও ছিল। শুধু এ দু’টির কালো তালিকাভুক্ত অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই পুনঃদরপত্র আহ্বানের নাটক সাজিয়েছে এনসিটিবি। ইতোমধ্যে পুনঃদরপত্রে কাজ পাওয়া মুদ্রাকরদের নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। এতে এ দু’টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কৃষ্ণা প্রিন্টার্স ও স্বপ্না ট্রেডিং ১০টি লটে এক কোটি চার লাখ ৫৩ হাজারের বেশি বই ছাপার কাজ পেয়েছে। আর এতে শুধু প্রাথমিকের বই ছাপায় সরকারের অতিরিক্ত গচ্চা যাচ্ছে ১১১ কেটি টাকা। কৃষ্ণা প্রিন্টার্স এক লটে ৭১ লাখ ৫৭ হাজার ৪১৩ এবং স্বপ্না ট্রেডিং এক লটে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭২টি বই ছাপার কাজ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি ২০১৬ সালে বই ছাপার কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় তিন মাস দেরি করে ডিসেম্বরের বই মার্চ পর্যন্ত নিয়েছিল। এ জন্য এনসিটিবি এদের কালো তালিকাভুক্ত করেছিল।
মন্ত্রাণালয় ও এনসিটিবির বরাতে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক বইয়ের প্রতি ফর্মা দুই টাকা ২৫ পয়সা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। গত ডিসেম্বরের প্রাক্কলনের সাথে জুন মাসের কাগজ-কালিসহ আনুমানিক অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা দুই টাকা ৬৩ পয়সা থেকে দুই টাকা ৯৩ পয়সা পর্যন্ত ফর্মার দাম ধরে দরপত্র জমা দেন। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরো টেন্ডার নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এনসিটিবি প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি হওয়ায় পুনঃদরপত্র করার পক্ষে মত দেয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়। অক্টোবরের মধ্যে বই দিতে হলে দরপত্র বহাল রেখে ওয়ার্ক অর্ডার দিতে মত দেন এনসিটিবির এক সদস্য। একপর্যায়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কমিটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এরপর পুনঃদরপত্র আহ্বান করে আগের দামেই নোটিফিকেশন অব অর্ডার (এনও) দেয় এনসিটিবি। অর্থাৎ মুদ্রণকারীরা প্রথম দরপত্রে যে দর দিয়েছিল, প্রায় ওই দরেই পুনঃদরপত্রে কাজ দেয়া হয়েছে।
তারপরও পুনঃদরপত্র আহ্বান করে দু’টি অযোগ্য ও ব্যর্থ বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে কাজ অর্পণ করায় আমাদের মুদ্রণ মালিক সমিতি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও আহত হয়েছে। এটি দেশীয় শিল্পকে ধ্বংসের মহাষড়যন্ত্র বলে তারা উল্লেখ করেন।
নিউজটি পড়তে ক্লিক করুন।
এই লেখকের অন্যান্য লেখা
সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ‘বাংলা’ কতটুকু গূরুত্ব পাচ্ছে
অন্তত একটি জায়গায় বিতর্ক তুলনামূলক কম, তা হলো ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাসে বাঙালির তুলনা বিশ্ব-ইতিহাসে নেই।
UN Contract Types within the UN common system
Interested in UN jobs but not sure where you fit in? UN agencies offers various categories of employment requiring different
Variations and Performance Security
Variations and Performance Security are closely interconnected concepts that serve as the foundation of risk management and contract enforcement in
Variations in Construction Contracts
Variations in construction contracts are changes or adjustments to the original scope of work. These can occur due to unforeseen