Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সহজ ধাঁধা

Facebook
Twitter
LinkedIn

উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সহজ ধাঁধা

সরকারী ক্রয় কার্যক্রমে ঠিকাদার বাছাই করার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাধ্যমে অধিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে থেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সার্বিক বিবেচনায় সবচেয়ে যোগ্য ঠিকাদার, সরবরাহকারী বা কনসালটেন্ট খুঁজে বের করা হয়। এখন, বিষয়টি সহজ সরল ভাবে বলা গেলেও এর প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু ? মুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনায় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির ভেতর শক্তি টা কোথায় ? এই সহজ ধাঁধার উত্তর জানার জন্য গোড়ার বিষয়গুলো একটু দেখে নেয়া যেতে পারে।

১) পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এর মূলনীতি কি ?

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬: ২০০৬ সনের ২৪নং আইনে বলা হয়েছে সরকারী তহবিলের অর্থ দ্বারা কোন পণ্য, কার্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিষগুলো লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল –

১। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা,
২। ক্রয়কার্যে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সকল ব্যক্তির প্রতি সম-আচরণ,
৩। অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা,
৪। অনুসরণীয় পদ্ধতি নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করা”।

UNCITRAL (United Nations Commission on International Trade Law): Model Law on public procurement ২০১১ কে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এর উপর একটি আদর্শ আইন বলা হয়। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে UNCITRAL কে জাতিসংঘের core legal body হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এর মূলনীতি হল:

(a) Maximizing economy and efficiency in procurement;
(b) Fostering and encouraging participation in procurement proceedings by suppliers and contractors regardless of nationality, thereby promoting international trade;
(c) Promoting competition among suppliers and contractors for the supply of the subject matter of the procurement;
(e) Promoting the integrity of, and fairness and public confidence in, the procurement process;
(f) Achieving transparency in the procedures relating to procurement.

এছাড়া The World bank, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মূলনীতির বিষয়বস্তু-ও প্রায় কাছাকাছি।

২) উন্মুক্ত দরপত্র ও এর প্রয়োগ

উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন গ্রহনযোগ্য আইন, বিধি, নীতি বা চর্চা নিচে উল্লেখ করা হলঃ

WTO (Wold Trade Organization) এর GPA: Revised Agreement on Government Procurement অনুযায়ীঃ “Open tendering means a procurement method whereby all interested suppliers may submit a tender;”

UNCITRAL: UNCITRAL Model Law on public procurement অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রকেই সাধারণ মেথড হিসেবে উল্লেখ হয়েছে।

The World bank: Bank Policy, “Procurement in IPF and Other Operational Procurement Matters” (Catalogue Number OPSVP5.05-POL.144, Issued on June 28th 2016) এর Core Procurement Principles এ Fairness এর সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে:

“Open competitive procurement is the Bank’s preferred procurement approach, whenever possible, to maximize fairness of opportunity to bid. Whenever possible, the Bank requires that eligible individuals and firms be given the same opportunities to compete for Bank-financed activities”.

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৬১(১) অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে অথবা মূল্য-সীমার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য ক্রয় পদ্ধতির কোন একটি পদ্ধতির ব্যবহার অধিকতর যুক্তিযুক্ত না হলে, পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা, কার্য বা ভৌত সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রে বিবেচ্য পদ্ধতি হিসাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করিতে হবে।

কাজেই সরকারী ক্রয়ে সর্বজন গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ব্যবহারে কোন দ্বিমত নেই। তবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগের পূর্বে procurement market সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

৩) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ব্যবহারে সুবিধাঃ

১। সর্বাধিক স্বচ্ছতা,
২। সবার অংশগ্রহন করার (আইনগত) অধিকার থাকে,
৩। অধিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে,
৪। ক্রেতার জন্য অধিক মূল্যছাড়,
৫। নতুন নতুন সরবরাহকারী/ঠিকাদার পাওয়া যায়,
৬। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ (নতুন নতুন সরবরাহকারী/ঠিকাদার পাওয়া যায়),
৭। সরবরাহকারী/ঠিকাদারদের capacity এবং quality বাড়াতে সাহায্য করে,

৪) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ব্যবহারে সমস্যাবলীঃ

১। বিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী,
২। কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বা অপরিচিত সরবরাহকারী/ঠিকাদার সিলেক্ট হয়ে যেতে পারে,
৩। প্রাক্কলন ও ডকুমেন্ট প্রস্তুত এবং মূল্যায়ন করতে অধিক সময় লাগে,
৪। প্রাক্কলিক মূল্যের থেকে অনেক বেশি বা অনেক কম দরপত্র মূল্য দেখানোর প্রবণতা,
৫। Unrealistic অথবা অতিমাত্রায় প্রতিযোগিতা (aggressive competition),
৬। ইনোভেশন কে অনুৎসাহিত করে,

৫) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ দূর করণে করণীয়ঃ

উপরোক্ত সমস্যাবলীর মধ্যে ৪ নং এবং ৫ নং ২টি বাদে বাকী গুলো সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারীর দরপত্র তৈরী ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেকাংশে দূর করা সম্ভব।

এখন ৪ নং এবং ৫ নং সমস্যা ২টি নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। সমস্যা দুটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। অতিমাত্রায় প্রতিযোগিতার কারণে অনেক কম মূল্যে এবং Unrealistic বা অবাস্তব প্রতিযোগিতার কারণে অধিক মূল্যে দরপত্র দাখিল হতে পারে।

অনেক কম মূল্যে দরপত্র দাখিলের কারণসমূহঃ

# Bid Traps (The pressure for lowest price)

উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি-ই সবচেয়ে efficient way to secure value for money কারণ দরপত্রদাতারা জানে যে এখানে অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা এমন একটা খেলা যেখানে জয়ের জন্য একবার-ই সুযোগ পাওয়া যাবে এবং এর একমাত্র উপায় হচ্ছে সর্বনিন্ম দর দাখিল করা। এর ফলে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে একটা প্রেশার কাজ করে যা তাদেরকে তাদের মুনাফার মার্জিন নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা পালন করে। এটাই উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সৌন্দর্য। তবে এই প্রতিযোগিতা অনেক সময় aggressive হয়ে যায়। তখন এই সৌন্দর্য্য কুৎসিতে প্রতিযোগিতায় পরিনত হয়।

# দরপত্রে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা

থাম রূল অনুযায়ী দরপত্রে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা যত বাড়বে দরপত্র মূল্য ততো কমার সম্ভাবনা বাড়বে। এখন কোন নির্দিষ্ট কাজ বা পণ্যের জন্য দেশের প্রকিউরমেন্ট মার্কেটের সাইজ অনুযায়ী যদি ঠিকাদার বা সরবরাহকারীর সংখ্যা বেশি থাকে তাহলে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

# ইনোভেটিভ এবং supply chain

প্রতিষ্টানগুলো যদি দরপত্রের scope এর মধ্য থেকেই কোন ইনোভেটিভ আইডয়ার মাধ্যমে কাজ করে অথবা যে সকল পণ্য ব্যবহার করে কাজটি করতে হবে তা যদি তার নিজস্ব supply chain এর মধ্যেই থাকে তাহলে তার জন্য কম রেটে কাজ করা সম্ভব।

# দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও বেকারত্ব

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থায় যদি অন্য কোথাও invest করার সুযোগ কম থাকে তাহলে সবাই ঠিকাদারী কাজের দিকেই ঝুকে পরে সমগ্র প্রকিউরমেন্ট মার্কেটকে অস্থির করে তুলবে। এছাড়াও যদি বেকারত্বের হার বেশি থাকলে মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য এবং সামাজিক মর্যদা পাবার জন্য এই ব্যবসায় ঝুকে পরবে।

# ভবিষ্যতে মূল্য হ্রাসের আশংকা

বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাপণায় দূর্বলতা থাকলে সেই সুযোগে ঠিকাদাররা ভবিষ্যত পণ্য সরবরাহ এবং এর দাম সম্বন্ধে ঝুকি নিতে পারে। ফলে তারা দরপত্রে কম মূল্য উদ্ধৃত করার মাধ্যমে lowest bidder হওয়ার চেষ্টা করে থাকে।

# প্রাক্কলনে ভূল বা দূর্বলতা

ক্রয়কারী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রাক্কলনে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পণ্য, পণ্য সরবরাহের তথ্য, কাজের স্থান-কাল ইত্যাদে সংক্রান বিষয়ে ভূল বা দূর্বলতা থাকতে পারে। যার ফলে প্রস্তুতকৃত প্রাক্কলন অতি মূল্যায়িত হয়ে থাকতে পারে। ঠিকাদারর বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই সব দূর্বলতা বিবেচনা করে দরপত্রে কম মূল্য উদ্ধৃত করে lowest bidder হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

# চুক্তি ব্যবস্থাপনায় দূর্বলতা

১। Revise contract এর মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া,
২। নিন্মমানের কাজ করা,
৩। কাজ শেষ না করেই চুক্তি বাতিল করা অথবা কিছু কিছু কাজ না করেই কাজ শেষ করা
৪। পণের দাম কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা
৫। বাজেট ছাড়ের culture

# দরপত্রে ভূল তথ্য প্রদান

দরপত্র দলিলে Personnel Capacity হিসেবে যা চাওয়া হয় (Engineers, and other key staff with qualifications and experience) ঠিকাদার অনেক সময় তা কাগজে কলমে উল্লেখ করলেও বাস্তবে তা থাকে না। ফলে সেই প্রতিষ্ঠান অনেক কম দরে দরপত্র দাখিল করতে পারে।

# দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগে দূর্বলতা

# Environmental factors

# Labor law

অনেক বেশি মূল্যে দরপত্র দাখিলের কারণসমূহঃ

# Bid rigging:

# দরপত্রদাতাদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে দর নিয়ন্ত্রণ করা।

# চূক্তি পরবর্তী risk সমূহ contractor এর কাছে রাখা:

Contractual risk management এর থিউরি হচ্ছে যে পক্ষ ভাল risk manage করতে পারে risk গুলো তার দিকেই রাখা। এখন ক্রয়কারী যদি এই বিষয়টা ঠিক-ঠাক ভাবে দরপত্র দলিলে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয় তাহলে দরপত্রে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদাররা risk premium বেশি ধরে মূল্য নির্ধারণ করবে।

# দরপত্রে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা:

– মার্কেটে মুক্ত প্রবেশে যদি কোন বাধা থাকে
– বড় বড় কাজ (high value contracts) এর ক্ষেত্রে মার্কেটে অধিক পরমান যোগ্য প্রতিষ্ঠান নাও থাকতে পারে।

# ভবিষ্যতে মূল্য বাড়ার আশংকা:

# প্রাক্কলনে ভূল বা দূর্বলতা:

এখন, অতি কম মূল্য বা অধিক মূল্যে দরপত্র দাখিলের উভয়-ই ক্রয়কারীর জন্য সমস্যা। তবে অধিক মূল্যের দরপত্রের ক্ষেত্রে দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করে কাজ বাস্তবায়ন করা সহজ, কিন্তু বেশি কম মূল্যে দরপত্রের ক্ষেত্রে তা অনেক কঠিন, কারন

ক) Re-tender এর ফল কি হবে তা জানা সম্ভব নয়,
খ) অডিট সামাল দেয়ার একটা ভয় কাজ করে
গ) বিভিন্ন stack holder দের কাছে জবাবদিহি করতে হয়,

এসব বিবেচনায় বেশি কম মূল্যে দরপত্রের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৬) অনেক কম মূল্যে দরপত্র দাখিলের ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে

ক্রয়কারীর ক্ষেত্রেঃ

– Non-performance by contractor
– মনিটরিং এবং ম্যানেজমেন্ট খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা
– Post tender variations, পূন-দরপত্রের আশংকা ইত্যাদি সহ খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা
– কাজের মান খারাপ হওয়ার মাধ্যমে পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষন খরচ বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা
– বিরোধ বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে legal খরচ বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা

ঠিকাদারের ক্ষেত্রেঃ

– প্রতিষ্টানের টার্নওভার কম হয়,
– পূঁজি হারিয়ে long term এ ব্যবসা বন্ধ হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি
– Non-performance reaction by procuring entity, ইত্যাদি।

৭) Abnormal low rate এর ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়

ক্রয়কার্য বা পলিসি তৈরীর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রয়োজন –

A) অনেক কম বা abnormally low tender বলতে কি বোঝায় ? এটা কি সঙ্গায়িত করা আছে ?

পিপিএ-০৬ এবং পিপিআর-০৮ এ এ বিষয়টি স্বষ্ট করা হয় নি।

UNCITRAL Model Law 2011 এর Glossary তে বলা হয়েছেঃ

“Submission which price in combination with other constituent elements of the submission is so abnormally low in relation to the subject matter of the procurement that it raises concerns with the procuring entity as to the ability of the supplier or contractor that presented it to perform the procurement contract.”

আসলে কতটুকু কম মূল্যকে abnormally low বলা হবে এটা এই ব্যাখ্যা থেকেও স্পষ্ট হওয়া কঠিন।

UNCITRAL Model Law ২০১৪ হওয়ার আগে একটি কমিশন করা হয়েছিল যারা ২০১১ এর আইনটির উপর তাদের মতামত ও বিভিন্ন প্রস্তাবনা তৈরী করেছিলেন। সেখানে abnormally low এর একটি সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল যদি কোন দরপত্রে ৫টির বেশি দরপত্র দাখিল হয় এবং সবচেয়ে নিন্মদরে দাখিলকৃত দরপত্রটি যদি average price থেকে ৫০% কম দরে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিন্মদরে দাখিলকৃত দরপত্রের চেয়ে ২০% নিন্মদর হয় তবে সেই দরপত্রটি abnormally low হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। যদিও পরবর্তীতে এই প্রস্তাবটি ছাড়াই ২০১১ এর আইনটি সংশোধন হয়েছিল।

B) প্রাক্কলিক মূল্যের অনেক কম দরপত্র মূল্যের দরপত্রের ক্ষেত্রে আইন ও বিধি তে কি ব্যবস্থা আছে ?

পিপিআর-০৮ বিধি ৯৭(২৩): দরপত্রদাতা যদি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য হইতে ঊল্লেখযোগ্যভাবে কম মূল্য উদ্ধৃত করিয়া কোন দরপত্র দাখিল করে, তাহা হইলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য পুন:পরীক্ষা করাসহ উক্ত কম মূল্য উদ্ধৃত করার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানপূর্বক উক্ত দরপত্র গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে বিবেচনা করিবে, যদি-

(ক) ইহা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় যে, দরপত্রদাতা অনভিজ্ঞ ও দরপত্রমূল্য সঠিক ভাবে উদ্ধৃত করিতে সক্ষম হয় নাই; বা

(খ) দরপত্রদাতা কম মূল্য উদ্ধৃত করার সমর্থনে যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ প্রদর্শন করিতে না পারে।

পিপিআর-০৮ (২৪): যদি দরপত্রদাতা সংশ্লিষ্ট দরপত্র সংক্রান্ত কার্য-সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোন সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার কারণে কম মূল্য উদ্ধৃত করিয়া থাকে, তাহা হইলে উক্ত দরপত্র গ্রহণযোগ্য বলিয়া বিবেচনা করা যাইবে এবং তদানুসারে উক্ত দরপত্র মূল্যায়ন করিতে হইবে।

উদাহরণ ১।- প্রস্তাবিত কার্য সম্পাদন এলাকার কাছে দরপত্রদাতা কর্তৃক সদ্য সমাপ্ত অন্য কোন কাজের জন্য নিয়োজিত লোকবল ও যন্ত্রপাতি থাকা;

উদাহরণ ২।- ব্যবসায় মন্দার সময় দরপত্রদাতার কর্মী বাহিনীকে নিয়োজিত রাখার জন্য কোন বিশেষ স্বার্থ থাকা।

UNCITRAL Model Law on public procurement এবং European Directives 2014 তে কার্যতঃ উপরোক্ত process এর কথাই বলা হয়েছে।

C) শুধু মাত্র কম দরপত্র মূল্য দেখানোর জন্য-ই কি দরপত্র বাতিল করা উচিৎ ?

পিপিএ-০৬ (চতুর্থ সংশোধন ব্যতীত) এবং পিপিআর-০৮ (২৪) অনুযায়ী না। কিন্তু বিষয়টি মূল্যায়ন কমিটির জন্য প্রমান করা অনেক কঠিন এবং প্রায় অসাধ্য। এজন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি মূল্যায়নের সময় দরপত্র বাতিল না করে কার্য-সম্পাদন জামানত বৃদ্ধির সুপারিশ সহ অনুমোদনের প্রস্তাব করে।

– EU Directive 2014/24/eu এর Article 69 অনুযায়ী না
– UNCITRAL Model Law on public procurement এর Article 20 অনুযায়ী না

৮) ৩টি কেস স্টাডিঃ সুইডিস কোর্টের অবজারভেশন

এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ওপেন মার্কেট ভাল উদাহরণ হতে পারে। সেখানে অনেক সময় domestic বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহন নামমাত্র মূল্যে করে থাকে। এটা তাদের যাত্রী আকর্ষণের একটা strategy। আবার অনেকে এই ভাড়াটা পণ্য পরিবহনের সাথে সমন্বয় করে থাকে। এভাবে বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে যে বিমানগুলো হয়তো loss এ যাত্রী পরিবহন করছে কিন্তু পারত পক্ষে তা নয়। এভাবেই বিভিন্ন বিমান সংস্থা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনায় টিকে আছে।

abnormally low submissions নিয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কোর্ট অব জাস্টিস এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সুপ্রীম কোর্টে অনেক রায় আছে। কোর্ট অব জাস্টিস হল ইইউ এর সর্বোচ্চ আদালত। এক্ষেত্রে সুইডিস কোর্টের ৩ টি মামলার উদাহরণ দেয়া যায়, দরপত্রগুলো হলঃ

১। ১৯৯৪ সালে মিউনিসিপাল অফ হাবি এর সার্ভিস সেন্টার পুনঃনির্মান কাজ,
২। ১৯৯৪ সালে Jönköping এবং Halland এর মধ্যে আঞ্চলিক রেলওয়ে সার্ভিস চালুকরণ, ও
৩। ১৯৯৯ সালে ওরেব্রো কাউন্সিল কর্তৃক লোন্ড্রি সার্ভিস।

৩টি ক্ষেত্রেই আহবানকৃত দরপত্রে সর্বনিন্ম দরদাতাত্রয়কে অতিমাত্রায় কম দরে দরপত্র দাখিল করায় মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক দরপত্র বাতিল করা হয়।

১ম উদাহরণটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারী সর্বনিন্ম দরদাতাকে কোনরূপ ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়েই দরপত্র বাতিল করে। কিন্তু মামলার রায়ে সুপ্রীম কোর্ট তা বাতিল করে দেয়।

২য় উদাহরণটির ক্ষেত্রে মামলার রায়ে সুইডিস আইন, ইউরোপীয় ডিরেক্টিভস এবং Competition Act (1993:20) অনুযায়ী তখন সুপ্রীম কোর্টের রায় ২টি অবজারভেশনে বলা হয়েছিলঃ

A procuring entity shall accept either:

১। The bid that is the economically most advantageous, or
২। The lowest bid.

৩য় উদাহরণটির ক্ষেত্রে মামলার পরিচালনার সময় committee for public procurement (NOU) এর প্রধান কৌসুলি Hans Sylvén এর মন্তব্য ছিল নিন্মরূপ যা পরে কোর্ট তার অবজারভেশনে গ্রহন করেছিলঃ

“As a buyer you may not kick out a supplier due to the price being too low. If I believe that the technical ability and quality is fulfilled, the bid must be taken into consideration… There are also firms that calculate with losses and dump prices in order to enter the market. This is not prohibited either.”

৯) বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ

গত ০৩/০৫/১৬ ইং তারিখে জাতীয় সংসদে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর আধিকতর সংশোধনকল্পে একটি বিল উত্থাপিত হয়, পরবর্তীতে গত ০১/০৮/১৬ ইং তারিখে বিলটি আইনে রূপান্তরিত হয়। এটি PPA-06 এর চতুর্থ সংশোধন যাতে মোট ১৪ টি সংশোধন আনা হয়। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আইনের ৩১ নং ধারা সংশোধন যার সাথে আরো ২টি উপ-ধারা যোগ করে বলা হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আভ্যন্তরিন সরকারি কেনাকাটায় কার্যের ক্ষেত্রে কোনো দরদাতা দরপত্রের দাপ্তরিক প্রাক্কলনের ১০ ভাগ কম বা বেশি মূল্য দরপত্রে উল্লেখ করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে।

জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপিত হবার সময় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি কেনাকাটায় প্রাক্কলিক মূল্যের থেকে অনেক বেশি বা অনেক কম দরপত্র মূল্য দেখানোর প্রবণতারোধ করাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন, বিষয়টিকে আরো গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

১০) চতুর্থ সংশোধনীর পটভূমিঃ

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রমতে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন ও সংযোজন করতে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৫ইং) মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের নির্দেশিত বিষয় ছাড়াও অন্য কোনো সংশোধন বা পরিমার্জনের প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করে আইএমইডির সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট তথা সিপিটিইউ। এরপর মোট ৪২টি সংশোধনী বিবেচনায় নেওয়া হয়। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে পরিকল্পনামন্ত্রী। এতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অভিমত দেন। সিপিটিইউ নিজেরাও কিছু সংশোধনী আনে। এরপর গত বছরের (২০১৫ইং) ১৮ নভেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

১১) কিছু দেশীয় কেস স্টাডিঃ

ক। এলজিইডিঃ এলজিইডিতে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০ এর উপর দরপত্র আহবান করা হয়। গত এক বছরে (২০১৫-১৬ অর্থবছরে) কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয়ে যে সকল বড় বড় দরপত্র আহবান করা হয়েছিল তার অনেকগুলোই ছিল ১০% এর চেয়ে নিন্মদর। আবার হাতিয়া, স্বন্দীপের মত দূর্গম এলাকায় অনেক উন্মুক্ত দরপত্রে প্রায়ই ঊর্ধ্বদরে দরপত্র দাখিল হয়ে থাকে। সড়ক রক্ষণাবেক্ষন ও মেরামত কর্মসূচীর আওতায় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের জন্ম আহবানকৃত অনেক দরপত্রেই অধিক নিন্মদর পরিলক্ষিত হয়। এর সব ক্ষেত্রেই কি কম দরে দাখিল কৃত দরপত্রগুলো abnormally low submission।

খ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরঃ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চতূর্থ সংশোধনী জারী হবার পূর্ব হতেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে দাপ্তরিক প্রাক্কলনের ১৫ ভাগ কম বা বেশি মূল্য দরপত্রে উল্লেখ করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে মর্মে নির্দেশনার মাধ্যমে দরপত্র মূল্যায়ন করছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকক্ষেত্রেই বেশিরভাগ দরপত্রদাতাদের দাখিলকৃত দর প্রায় ১৫% নিন্মদরের কাছাকাছি এসে একেবারে দশমিকের পর তিন ঘর পর্যন্ত এক হয়ে যাচ্ছে। এখন ই-জিপি তে আহবানকৃত দরপত্রের ক্ষেত্রে এরকম হলে আবার সিষ্টেমে লটারী অপশন চলে আসে। ফলে মূল্যায়ন কমিটিকে লটারীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

গ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডঃ সিসি ব্লক দ্বারা নদীর তীর সংরক্ষন কাজ কয়েক বছর আগেও প্রায় ২০%-২৫% কমে দরপত্র দাখিল হত। বর্তমানে নদীর তীর সংরক্ষন কাজের গূণ ও পরিমান মনিটরিং এর জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হবার পর দেখা যাচ্ছে যে সেই একই ধরণের কাজের জন্য প্রায় ১০%-১৫% ঊর্ধ্বদরে দরপত্র দাখিল হচ্ছে।

ঘ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর (DoICT): DoICT কর্তৃক অধিক মূল্যমানের প্যাকেজে আহবানকৃত অনেকগুলো দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয়ের জন্য প্রায় সবগুলো দরপত্র-ই ১০%-১৫% এর চেয়েও কম দরে দাখিল হচ্ছে। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটি এবং স্পেসিফিকেশন যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক সর্বনিন্ম দরদাতার দর গ্রহনযোগ্য প্রতীয়মান হয়েছে।

১২) উন্নয়ন সহযোগিরা কি ভাবছেঃ

চতুর্থ সংশোধনী সংসদে পাশ করার সময় বলা হয়েছে উক্ত সংশোধনী নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অভিমত দিয়েছেন। এখন, উন্নয়ন সহযোগিরা এই বিষয়ে কি মতামত দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হয় নাই। যতদূর জানা যায় তারা এই বিষয়ে নিতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।

১৩) আন্তর্জাতিক রীতি নীতি ও বাংলাদেশঃ

আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন দিন দিন সক্ষমতা অর্জন করছে। অন্যান্য দেশের বাজারে যেমন বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান গুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে তেমনি এদেশের ভিতরেও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্টান সমূহ দৃষ্টি দিচ্ছে। বাংলাদেশ ১৯৯৫ সাল থেকে WTO এর সদস্য। এর সদস্য হিসেবে তাকে WTO এর সদস্যভুক্ত অন্য দেশের মার্কেটে প্রবেশ করতে গেলে চুক্তি করার ক্ষেত্রে “Rules of Origin” মেনে চলতে হবেঃ

“The Rules of Origin Agreement requires WTO members to ensure that their rules of origin are transparent; that they do not have restricting, distorting or disruptive effects on international trade; that they are administered in a consistent, uniform, impartial and reasonable manner; and that they are based on a positive standard (in other words, they should state what does confer origin rather than what does not).”

জিপিএ এর public procurement অংশের Article IX এ বলা হয়েছেঃ

“A Party, including its procuring entities, shall not adopt or apply any registration system or qualification procedure with the purpose or the effect of creating unnecessary obstacles to the participation of suppliers of another Party in its procurement.”

Tendering Procedures এ উল্লেখ আছেঃ

“Each Party shall ensure that the tendering procedures of its entities are applied in a non-discriminatory manner.”

তাহলে দ্বিপাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য বা invest এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি নীতি মানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর-ও সক্ষমতা বাড়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

১৪) ৪র্থ সংশোধনীর ফলে মূল্যায়ন কমিটি কাজ বাড়বে না কমবে ?

৪র্থ সংশোধনী অনুযায়ী মূল্যায়নের সময় আইনের ৩১ এর (৩) ধারা মতে মূল্যায়ন কমিটির কাজ কমে যাবে। ১০% এর বেশি নিন্ম বা ঊর্দ্ধ দরে দরপত্র জমা হলে সরাসরি তা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু (৪) ধারা অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটির কাজ বেড়ে যাবে এবং ধারণা করা যায় এতে মূল্যায়ন সময় বেশি লাগবে। এখন সংশ্লিষ্ট বিধি জারী হলে হয়তো বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির ক্ষেত্রে যেহেতু অফিসিয়াল প্রাক্কলন দরপত্রদাতাদের নিকট গোপন থাকবে সেহেতু দরপত্র দাতা এবং সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারী দপ্তর সহ অর্গানাইজেশনে collusion practice বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ এই প্রাক্কলন গোপন রাখা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করা বাস্তবে কঠিন। ফলে যে সকল দরপত্রদাতার সাথে অফিসগুলোর সখ্যতা বেশি থাকবে তারা বেশি সুবিধা পাবে বলে আশংকা না করার কোন কারণ নাই।

এছাড়া ৩১ এর (৩) ধারা অনুযায়ী একই দরে দরপত্র দাখিল হলেও লটারী করা যাবে না। আবার সমদরে দরপত্র দাখিলের পরিমান বেড়ে যাবে। তখন মূল্যায়ন কমিটি বিষয়টি কিভাবে মোকাবেলা করবে তা স্পষ্ট নয়। পিপিআর-০৮ এর বিধি ৯৮ (৩১) ও (৩২) অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হলে তাদের অবস্থা কি হবে ভেবে অস্থির না হয়ে উপায় নাই। এখন সংশ্লিষ্ট বিধি জারি হলে বিষয়গুলো কিভাবে focus করা হয় তা দেখার বিষয়।

১৫) বিকল্প ব্যবস্থা কি হতে পারে ?

পুরো বিষয়টি নিয়ে দীর্ধমেয়াদি পরিকল্পনায় কাজ করলে একটা টেকসই সুরাহা হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, যেমনঃ

ক। দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ

অ) অতিরিক্ত প্রিমিয়াম ধার্য করা,
আ) অতিরিক্ত performance security নেয়া,
ই) Post-performance অডিট
ঈ) আলাদা মনিটরিং
উ) দরপত্রে উল্লেখিত দরপত্রদাতার personnel হিসেবে উল্লেখিত জনবলকে সাইটে নিয়োজিত রাখার বিষয়ে কঠোর হওয়া, ইত্যাদি

খ। Capacity development

অ) প্রশিক্ষন, কর্মশালা আয়োজন, ইত্যাদি
আ) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক ও অন্যান্য জনবলের প্রশিক্ষন প্রদান,

গ। Capacity development

অ) প্রশিক্ষন, কর্মশালা আয়োজন, ইত্যাদি
আ) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক ও অন্যান্য জনবলের প্রশিক্ষন প্রদান,

ঘ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা

অ) প্রিন্টিং মিডিয়া, ইলেকট্রনিং মিডিয়া ইত্যাদিকে ব্যবহার করে সবাইকে সচেতন করা,
আ) শ্রম আইন, পরিবেশ আইন, সড়ক নিরাপত্তা আইন, ইত্যাদি মানার বিষয়ে সবাইকে সজাগ করা,

ঙ। প্রকিউরমেন্ট মার্কেট নিয়ে মাঝে মাঝে গবেষণা করে বিভিন্ন ইনোভেটিভ সমাধান বের করা,

চ। পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট

অ) বেকারত্ব দূর করণে উদ্যোগ নেয়া,
আ) সর্বপরি আইনের শাসন বজায় রাখা,

১৬) পরিশেষঃ

*** অর্থনীতির সূত্র বলছে profit margin ছাড়া firm গুলো short term এ সাসটেইন করলেও long term এর তারা তাদের পূঁজি হারিয়ে মার্কেট থেকে বিতারিত হয়ে যাবে। এখন আমাদের দেশে অর্থনীতির এই সহজ সূত্রটার প্রমানে কি কোন গবেষণা আছে ? যে সকল প্রতিষ্ঠান বা স্বত্তাধিকারী abnormally low tender submission করেন তাদের কি historical data কখনো analysis করে দেখা হয়েছে ?

*** abnormally low submissions এর ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় বেশি দরপত্র দাখিল হয় এবং বেশির ভাগ দরপত্রদাতাই কম দরে দরপত্র দাখিল করেন। সবার মধ্যেই এই tendency এর কারণটি-ও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। এটা কি প্রোজেক্ট এর ধরণ, ফান্ডিং ব্যবস্থা, সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারী দপ্তরের procurement culture ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে নাকি পুরো বিষয়টি-ই সাইকোলজিকাল গেম ?

*** এছাড়া, কার্য, পণ্য এবং সেবার ক্ষেত্রে abnormally low submissions এর ধরণ এক না-ও হতে পারে। কার্যের ক্ষেত্রে যা কম মূল্য, পণ্যের ক্ষেত্রেও তা কি এক রকম হবে ? এটা কি চট করে বলে দেয়ার বিষয় ?

*** পিপিআর-০৮ বিধি ৯৭(২৪) অনুযায়ী দরপত্রদাতার সুবিধাজনক অবস্থা বিবেচনা করে এক্ষেত্রেও দরপত্র গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা যাবে। বর্তমান সংশোধনীর সাথে এই বিধিটি সাংঘর্ষিক।

*** এখন দেখা যাচ্ছে abnormally low submissions এর ক্ষেত্রে প্রকিউরমেন্ট এর কোন আদর্শ আইন (পিপিআর-০৮ এর ৪র্থ সংশোধনীর আগে) বা বিধিতে সরাসরি বাতিলের ব্যবস্থা রাখা হয় নাই। প্রকিউরমেন্ট এর জটিল বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝতে হলে এর ৩টি অঙ্গকেই সমান গূরূত্ব দিতে হবেঃ ১। আইন, ২। অর্থনীতি এবং ৩। ব্যবস্থাপনা। শুধুমাত্র একটি দিয়ে আরেকটিকে ব্যালেন্স করার নীতি প্রকিউরমেন্ট পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অন্তত সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে উন্মুক্ত দরপত্রের ক্ষেত্রে তো নয়-ই। এখন, কোন সমস্যাকে সামগ্রিক ভাবে না দেখে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনাগত দিক চিন্তা করে আইনি সুরক্ষা দেয়া হলে তা অর্থনীতির ভাগশেষ-কে ক্রেতা, বিক্রেতা না জনগন, কার দিকে যাবে তা ভবিষ্যত-ই বলবে। সর্ব গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি হিসিবে হলেও অন্তত উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিকে কোন শিকলে না বেঁধে সম্পুর্ণ উন্মুক্ত রাখা হলে সামগ্রিক ক্রয়নীতির উজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

তারিখঃ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

References

1. প্রাক্কলিত দরের ১০% হেরফেরে দরপত্র বাতিল, সংসদে বিল পাস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
2. সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়া সংশোধন হচ্ছে, আমাদের সময়,
3. United Nations Commission on International Trade Law 2011
4. Revised Agreement on Government Procurement
5. European Directives 2014
6. পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬
7. পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

FAQ

বিদেশি ফার্মের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার পরিচালনার নতুন নীতিমালা

বিদেশি অংশীদারি যৌথ মালিকানার কোম্পানির ব্যবসা (JVCA) পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক (International) অথবা অভ্যন্তরিন (National) দরপত্রে জয়েন্ট

Read More »
ক্রয়কারি ফোরাম

e-GP সাইটে ভুতুরে কান্ড !!! ডকুমেন্ট ডাউনলোড হচ্ছে না

e-GP সাইটে ভুতুরে কান্ড !!! দরপত্র মূল্যায়নের সময় ঠিকাদারদের অনেক ডকুমেন্ট ডাউনলোড করা যাচ্ছে না। ইজিপিতে সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে

Read More »
সমসাময়িক

ঢাকা উড়াল সড়ক প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল কেন

সরকারি–বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় প্রকল্পের একটি ঢাকা উড়াল সড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) প্রকল্প। বাংলাদেশ ছাড়া থাইল্যান্ড ও চীনভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান

Read More »
সংবাদপত্রের পাতা থেকে

বিরোধের নিষ্পত্তি, ঢাকা উড়াল সড়কের কাজ আবারও চালু হলো

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় প্রকল্পের একটি ঢাকা উড়াল সড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) প্রকল্প। বাংলাদেশ ছাড়া থাইল্যান্ড ও চীনভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top