বর্তমানে ই-জিপি তে দরপত্রদাতারা কি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ……???

২০১৬ ও ২০১৭ অর্থবছরের শেষ ৩ মাসের (এপ্রিল-জুন) বেশ কিছু দরপত্র (Random selection method এ) যাচাই করে দেখা যায় টেন্ডারে ঠিকাদারদের অংশগ্রহনের হার কমে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রতিটি দরপত্রে যেখানে গড়ে প্রায় ৪টির বেশি দরপত্র বিক্রির বিপরীতে প্রায় ৩টির বেশি দরপত্র দাখিল হত, সেখানে ২০১৭ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে গড়ে প্রায় ৩টি ও ২টির কিছু বেশি তে (ছক-১)।

এই সংখ্যা পুরোটাই ই-জিপি থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে এবং উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দপ্তর বা মন্ত্রণালয় নির্বিশেষে প্রায় ২১৫টি দরপত্র থেকে পাওয়া। যে সকল প্যাকেজে সরকারী অর্থ ব্যয়ের সংকুলান রয়েছে শুধুমাত্র সে সকল কার্য চুক্তির তথ্য-ই বাছাই করে নেয়া হয়েছে। পুরো মডেলটাই একটা গানিতিক ধারনা পাবার জন্য ব্যবহার করা।
এখন কথা হচ্ছে, এই উল্লেখিত সময়ে অর্থাৎ ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ই-জিপি সিষ্টেমে নতুন প্রায় ৮-৯ হাজার দরপত্রদাতা রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। ব্যাংক এবং তাদের ব্রাঞ্চের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ইতোমধ্যেই ই-জিপিতে দরপত্র আহবান ১ লক্ষ পার হয়েছে। তাহলে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহবানের সকল নিয়ামক যদি অনুকুলেই থাকে তবে এই অংশগ্রহনের হার নিন্মগামী কেন ? জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন ……
(হয়তো বা) সমস্যাটা শুরু হয়েছে গত ২১ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে পিপিআর-০৮ এর সর্বশেষ সংশোধনী জারী হবার পর হতে (এটা একটা ব্যক্তিগত ধারনা মাত্র)। অনেকেই এটা আশংকা করেছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে আমার একটা লেখায় সেই বিপত্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম (বিস্তারিত)। তারপরও বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সংক্ষেপে কিছু বিষয় আবার তুলে ধরছিঃ
১। অংশগ্রহনকারী সকল দরপত্রদাতাকে দরপত্র দাখিলের সময় (Performance Matrix সংযুক্ত হবার কারনে) আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য দাখিল করতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ি সকল তথ্যের আলোকে দলিলাদি সংগ্রহ করা দরপত্রদাতাদের জন্য একটি শ্রমসাধ্য কাজ বলে ধরে নেয়া যায়।
২। দরপত্র দাতাদের কোনরূপ প্রশিক্ষন ব্যতিরেকেই এই আইন ও বিধি কার্যকর হয়েছে। ফলে দূর্বল ও ছোট ছোট দরপত্রদাতারা হয়তো বা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে এবং দিন দিন উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।
৩। দাপ্তরিক প্রাক্কলিনের গুরূত্ব দরপত্রদাতাদের কাছে অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং তা পেয়েছে বলে আশংকা করাই যায়। এতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে (যদিও থিওরিটিক্যালি হবার কথা নয়)। সবার আগ্রহ থাকবে (যে কোন ভাবে !!!) দাপ্তরিক প্রাক্কলন সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী একেবারে ১০% কম দরে দরপত্র দাখিল করা। এই পদ্ধতির ফলে প্রচ্ছন্ন ভাবে collusion কে উৎসাহিত করা হচ্ছে বললে কি ভূল বলা হবে ? (এ সংক্রান্ত একটি গদ্য রচনা কেউ চাইলে দেখতে পারেন।)
৪। সমদরে দরপত্র দাখিলের পরিমান নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যায়নের শেষ পর্যায়ে এসে আসলে একপ্রকারে টার্নওভার দিয়েই সর্বনিন্ম গ্রহনযোগ্য দরদাতা নির্ধারিত হচ্ছে। বিষয়টি ইতোমধ্যেই সবাই (!) উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ফলে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাস্তবে তা-ই দেখা যাচ্ছে।
আরও কারন থাকতে পারে, এই মূহূর্তে মনে করতে পারছি না বলে দূঃখিত। কোন সূহৃদ মহোদয়ের মনে পড়লে নিচের কমেন্টস এ লিখেন। সবাই দেখতে পাবেন।
যাই হোক, সমঝদার কে লিয়ে ইশারাই কাফি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব পদ্ধতি আমলে নিয়ে দরপত্র জমার হার ছিল ৮টির কাছাকাছি। এখন, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আহবানকৃত দরপত্রের ক্ষেত্রে তা নেমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ এ। বর্তমানে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে তা আর বুঝতে কার-ই বা বাকি আছে (তারপর-ও জেগে জেগে ঘুমাতে কোন বাধা নাই)।
এখন, একটু আগ বাড়িয়ে উপরের হেড লাইনটা কিছুটা সংযোজন বিয়োজন করে যদি বলি “বর্তমানে (ছোট বা মাঝারী টার্নওভারের) দরপত্রদাতারা কি অংশগ্রহনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ……???” তাহলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে !

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

একটি মাত্র টেন্ডার দাখিল হলে কি চুক্তি করা যাবে ?
দরপত্র বা টেন্ডার আহবানের পর তা জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত সময় দেয়া থাকে। টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা, ওয়েবসাইট, ইত্যাদিতে বহুল প্রচারিত

Documents Required for Importing Goods into Bangladesh for Procurement purposes
International procurement can be a complex process, especially when navigating the regulatory requirements of a country like Bangladesh. Proper documentation

AMAZON এর ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিপ্লব
আমাজন (Amazon) তাদের ক্রয় প্রক্রিয়ায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমাজন শূন্য কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করতে তার

Rated criteria
Rated criteria are used to evaluate the quality, sustainability, and innovativeness of the bids/ proposals. They have been used extensively