ধরা পড়ল বিআরটিএর টেন্ডার জালিয়াতি
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনে জালিয়াতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু যাদের হাতে জালিয়াতি রোধের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে,খোদ তারাই জড়িয়ে পড়েছেন জালিয়াতিতে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তার এহেন অসদুপায় সম্প্রতি ধরা পড়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। এরই ধারাবাহিকতায় এ হীন কাজে জড়িত বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে,গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের জন্য নেওয়া উদ্যোগের নাম ‘সাপ্লাই ইন্সটলেশন অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ভীইকল ওনারশিপ ট্রান্সফার ম্যানেজমেন্ট’। এ জন্য গত ৭ জুন দরপত্র আহ্বান করে বিআরটিএ। ই-জিপির মাধ্যমে আহ্বান করা দরপত্রটি গত ৯ জুলাই খোলা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এই মর্মে অভিযোগ করে যে,দরপত্রে অংশগ্রহণের যোগ্যতা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে পিপিআরের কিছু ধারা-উপধারার ব্যত্যয় ঘটেছে। এর পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নথি ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। সেই তদন্ত কমিটি জানিয়েছে,অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। কমিটি সুপারিশ করেছে,দরপত্রটি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে মন্ত্রণালয় থেকে বিআরটিএকে বলা হয়েছে,দরপত্র প্রক্রিয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণামূলক (মেলাফাইড এবং ইনটেনশনাল) ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার কাজে যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে এবং তা অবহিত করতে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে,অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,দরপত্র নোটিশে সরবরাহকারীর অভিজ্ঞতার উদারহরণ হিসেবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট,ন্যাশনাল আইডি কার্ড,ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইলেকট্রনিক ভীইকল,রেজিস্ট্রেশন ইনস্যুরেন্স ইত্যাদিতে কাজের অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়েছে। পিপিআর ২০০৮-এর ১৫ (২) বিধি অনুসরণ না করেই এভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই বিধিতে দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। নিষেধ করা হয়েছে প্রতিযোগিতা সীমিত না করতে। অথচ দরপত্রে অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হয় যা বিস্ময়কর।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বিষয়টি যাচাই করে দেখা যায়Ñ নির্দিষ্ট দরদাতা টাইগার আইটি লিমিটেডের অভিজ্ঞতার শর্তের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স,ডিজিটাল নম্বরপ্লেট,ফিটনেস সনদসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,‘এ দরপত্রে সর্বশেষ ৫ বছরে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট দরদাতাদের ই-জিপি সিস্টেমে প্রদত্ত স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্স যাচাই করে নির্দিষ্ট দরদাতা টাইগার আইটির অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।’ তদন্ত কমিটির কাছে আরও মনে হয়েছে,কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্তগুলো এতটা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে,সেসব শর্ত শুধু টাইগার আইটিই পূরণ করতে পারে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এসব শর্ত পূরণের বা কাজের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন কমিটি কর্তৃক মূল্যায়নে ১ম ও ২য় প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপনসিভ করে ৩য় প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই কমিটির কাছে মনে হয়েছে ‘দরপত্রটি মেলাফাইড এবং ইনটেনশনাল;যা বাতিলযোগ্য’। প্রসঙ্গত ৪টি প্রতিষ্ঠান ডকুমেন্ট কেনে এবং এর মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ক্লাউডওয়ার সিস্টেম, আইবিসি-প্রাইমেক্স সফটওয়ার (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং টাইগার আইটি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তর/সংস্থার প্রকল্পে দরপত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনে কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেখিয়েছে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে। এর ব্যাখ্যায় ক্রয়কারী (প্রকিউরিং এনটিটি) বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস কমিটিকে বলেছিলেন,অর্থনৈতিক কোড-৪৮৫৪ অনুযায়ী চেয়ারম্যান দরপত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এটি একেবারেই আইনানুগ হয়নি বলে মনে করে কমিটি। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরের স্মারকে ৪ (খ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অতএব,দেখানো অর্থনৈতিক কোড অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান উদ্দেশ্যমূলক।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিতে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার,উপপ্রধান মো. সেলিম এবং সিনিয়র প্রোগ্রামার কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান,গাড়ির মালিকানা বদলি সংক্রান্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। তবে দরপত্র প্রস্তুতকালে দুয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া সবার ভূমিকা ছিল কাগুজে। দাপ্তরিক সই সবার থাকলেও মূলত এ কাজে সহায়তা করেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রসঙ্গে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) ৩ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন,দরপত্রে চাওয়া অভিজ্ঞতা একাধিক কোম্পানির আছে। একটি মাত্র কোম্পানির এ কাজের অভিজ্ঞতার তথ্যটি সঠিক নয়।
নিউজটি পড়তে ক্লিক করুন।
এই লেখকের অন্যান্য লেখা
সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ‘বাংলা’ কতটুকু গূরুত্ব পাচ্ছে
অন্তত একটি জায়গায় বিতর্ক তুলনামূলক কম, তা হলো ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাসে বাঙালির তুলনা বিশ্ব-ইতিহাসে নেই।
UN Contract Types within the UN common system
Interested in UN jobs but not sure where you fit in? UN agencies offers various categories of employment requiring different
Variations and Performance Security
Variations and Performance Security are closely interconnected concepts that serve as the foundation of risk management and contract enforcement in
Variations in Construction Contracts
Variations in construction contracts are changes or adjustments to the original scope of work. These can occur due to unforeseen