সাসটেইনেবল পাবলিক প্রকিউরমেন্ট পলিসি বা টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালার প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এজন্য ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে ‘টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি (SPP) ২০২৩’ জারি করা হয়েছে। এতে সরকারি ক্রয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক বিবেচনাসহ আরো কিছু মৌলিক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, বদ্বীপ পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০৪১, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দও। এতে সরকারি ক্রয়ে ব্যয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সরকারি ক্রয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসডিজির ১২.৭ নম্বর লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ক্রয়ে টেকসই পদ্ধতির প্রবর্তন। এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি প্রণয়ন করা হলো।
টেকসই সরকারি ক্রয় (SPP) কি দেখতে ক্লিক করুন।
এই নীতিমালায় মোট ৭টি সাধারণ বিধান আছে। এটা জারীর পর বাস্তবায়ন শুরু হলে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে নানা পরিবতন ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এখন আমরা যেভাবে দরপত্র মূল্যায়ন করি বা পণ্য ও সেবা ক্রয় করি, সেখানে আমূল পরিবর্তন আসবে। এ নীতিমালার আলোকে এখন সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনীও আনা হবে। সেই সঙ্গে ই-জিপি গাইডলাইনেও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে মর্মে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এখন ‘টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি (SPP) ২০২৩’ থাকার কারণে এখন আর দরপত্রের স্পেসিফিকেশন আগের মতো সাদামাটা তৈরি করা যাবে না। স্পেসিফিকেশন তৈরির সময়ই থাকতে হবে পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে যেন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব না পড়ে। এতে পণ্যের দাম হয়তো একটু বেশি দিয়ে কিনতে হবে; কিন্তু সেটি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই করতে হবে। এজন্য উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, ক্রয়কারী সংস্থা এবং অর্থ বরাদ্দকারীর মধ্যে একটি চেইন তৈরি করতে হবে। কেননা যারা পণ্য দেবেন, তাদের পণ্যও টেসকই হতে হবে। অর্থাৎ পরিবেশ ও সমাজবান্ধব হতে হবে। এক্ষেত্রে কিনতে গেলে দামটাও বেশি দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-সরকারি কেনাকাটা যদি টেকসই না হয়, তাহলে উন্নয়নও টেকসই হবে না।
বিদ্যমান আইনি কাঠামো অনুযায়ি সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু ‘মান’ যাচাইয়ের মাধ্যমে সর্বনিম্ন মূল্য চুক্তি অনুসরণ করা হয়। সর্বনিম্ন মূল্য চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে পণ্যগুলোর সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত নাও করতে পারে। এতে প্রথাগত ক্রয় এবং ক্রয়ের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবেচনা করা হয় না। সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে এখনো টেকসই ক্রয়ের বিভিন্ন দিক (সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও পরিচালন) বিবেচিত হয়নি। টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি অনুযায়ি ‘Whole Life Cycle Cost (WLCC)’ বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী সুবিধাজনক দরপত্র নির্বাচন করা হলে তা সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে।
টেকসই সরকারি ক্রয় (SPP) এর কিছু উদাহরণ দেখতে ক্লিক করুন।
এর আগে, অক্টোবর ২০২৩ তারিখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) টেকসই সরকারি ক্রয় নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তখন সিপিটিইউ থেকে জানানো হয়েছিল, নীতিমালায় টেকসই ক্রয় নীতিমালাটি এমনভাকে করা হচ্ছে যাতে সরকারি কেনাকাটা পরিবেশবান্ধব হয়। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কিছু যাতে কেনা না হয়। সরকারি অর্থে যা কেনা হবে তা যেন সামাজিক,আর্থিক এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই হয়।
সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বিলিয়ন টাকা ব্যয় করে, যা দেশের মোট বার্ষিক বাজেটের ৪০ শতাংশের সমপরিমাণ। কিন্তু সরকারি কেনাকাটা পদ্ধতিতে এখনো টেকসই ক্রয়ের বিভিন্ন দিক বিবেচিত হয়নি। তাই এই নতুন নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
Sustainable Public Procurement (SPP) Policy, 2023 দেখতে ক্লিক করুন
“টেকসই সরকারি ক্রয় নীতি, ২০২৩” এর উল্লেখযোগ্য বিষয় দেখতে ক্লিক করুন।