Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাফুফের কেনাকাটায় মিস-প্রকিউরমেন্ট

Facebook
Twitter
LinkedIn

ফিফা ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাফুফের কেনাকাটা ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। FIFA Code of Ethics (FCE) এর মোট ৪টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ধারা ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ধারা ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) ও ধারা ২৮ (তহবিল তছরুপ ও অপব্যবহার)।

মূলতঃ দুই ধরনের অভিযোগ এখানে, তহবিল অব্যবস্থাপনা এবং কেনাকাটায় জালিয়াতি।

তহবিল অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্নীতি

ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ সদস্য অ্যাসোসিয়েশন (এ ক্ষেত্রে বাফুফে) যথাযথভাবে খরচ করছে কিনা, এ নিয়ে প্রতি বছর কেন্দ্রীয় পর্যালোচনা করে ফিফা।

ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থের অপব্যবহার হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ খরচের নির্দিষ্ট কিছু খাত আছে। এই অর্থ নির্দিষ্ট একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখাটা ফিফার নিয়মে বাধ্যতামূলক। লেনদেনও শুধু সেখান থেকেই করার নিয়ম। ফিফার তদন্তে এখানেই বড় দাগে তিনটি অনিয়ম দেখা গেছে। এর মধ্যে আছে ফিফার তহবিলের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নগদে উত্তোলন করা, ফিফা সম্পর্কিত প্রকল্প বা প্রোগ্রামে অন্য অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার এবং ফিফা তহবিলের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করা।

ফিফা নৈতিকতা বিষয়ক কমিটি লেনদেনে আর্থিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এটি যাচাইকৃত লেনদেনের ১৭.৭৩ শতাংশ।

এ ক্ষেত্রে কিছু উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন:

• নারী ফুটবলে ভ্রমণ ও বেতন বাবদ ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ ডলার খরচের কোনো সহায়ক কাগজপত্র দেখানো হয়নি।
• জাতীয় দলের কোচ ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে ৪৪ হাজার ১০০ ডলার বেতন দেওয়া হয়েছে নগদে। আবার বাফুফের ব্যাংক রেকর্ডে দেখা যায়, এই বেতন ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। যাতে মনে হতে পারে, এই বেতন দুইবার দেওয়া হয়েছে।
• ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রশাসনিক খরচ বাবদ ৩৫ হাজার ৫৭৩ ডলার খরচের কথা ২০১৬ সালেও উল্লেখ করা হয়। এখানেও দুইবার পরিশোধের ব্যাপার থাকতে পারে।
• বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৫ ডলার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। যেটা ফিফা ফরোয়ার্ড নীতিমালার অংশ নয়, ফিফার সঙ্গে সম্মতিক্রমেও হয়নি। তার ওপর, এই অর্থ বিতরণের পক্ষে যথাযথ প্রমাণও নেই, যার মধ্যে ৫৩ হাজার ৫৮৮ ডলার দেওয়া হয় নগদে।

 

গায়েবি নামের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি

বাফুফের চারটি খাত – ক্রীড়া সরঞ্জাম ক্রয়, ফুটবল কেনা, বিমানের টিকিট এবং ঘাস কাটা যন্ত্র কেনা বাবদ যথেষ্ট অনিয়ম পেয়েছে ফিফা। একই সঙ্গে দরপত্র আহ্বানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ক্রীড়া পরিধেয় সামগ্রী কেনা
২০২০ সালের জুনে আবাসিক ক্যাম্প ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচের জন্য কিছু ক্রীড়া পরিধেয় সামগ্রী ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি। এই কেনাকাটায় দরপত্র জমা দেয় স্পোর্টস লিংক, স্পোর্টস কর্নার ও রবিন এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। বিডিংয়ে মালামাল সরবরাহের কাজ পায় স্পোর্টস লিংক।

তদন্তে উঠে আসে, যে তিনটি প্রতিষ্ঠান বিড করেছিল, সব কটিই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। তিন বিডেই ‘কোটেশন’ শব্দটি ‘Qutations’ বানানে লেখা। কোনোটিতেই প্রতিষ্ঠানের সিল নেই। দুটি বিডের বক্তব্য শুরু হয়েছে একই কথা দিয়ে, ‘…পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে।’ যদিও তাদের কোনো অর্ডারই দেওয়া হয়নি।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি দরপত্রের ডিজাইন একই রকম। রবিন এন্টারপ্রাইজের দরপত্রে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি ভুয়া। স্পোর্টস কর্নার আর স্পোর্টস লিংক পাশাপাশি ঠিকানায় অবস্থিত। আবার স্পোর্টস লিংকের মালিক রবিনই সম্ভবত স্পোর্টস কর্নারের সাবেক মালিক। এ ছাড়া দরপত্র প্রস্তাব ও সরবরাহ নিশ্চিতের সময়েও ধারাবাহিকতা নেই।

যা থেকে ফিফার কমিটি সিদ্ধান্তে আসে যে তিনটি দরপত্রের উৎসই এক – তিনটি আলাদা কোম্পানির নয়।

ফুটবল ক্রয়
২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা দামে ৪০০টি ফুটবল কেনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এখানেও দরপ্রস্তাব দিয়েছিল তিনটি প্রতিষ্ঠান – মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এইচ ইউ জামান ট্রেডিং ও ওফেলিয়াস ক্লোজেট। দরপ্রস্তাবে জেতে ওফেলিয়াস।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, ওফেলিয়াস ক্লোজেটের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে তাদের অস্তিত্ব নেই। তারা নারীদের পোশাক বানায়। বাফুফেকে ফুটবল সরবরাহের প্রতিষ্ঠান নয় এটি। মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও এইচ ইউ জামান ট্রেডিংয়ের দরপ্রস্তাবে তাদের খুঁজে পাওয়ার মতো তথ্য নেই। কোনো সিল নেই দরপ্রস্তাবে।

নিরীক্ষায় উঠে আসে, ওফেলিয়াসের ফুটবল সরবরাহের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাদের কোনো আমদানি সনদও নেই। তবে এক বন্ধুর সনদ ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন সরবরাহকারী। প্রতিষ্ঠানটিকে চালান ছাড়াই অর্থ পরিশোধ করে বাফুফে। প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, এটি স্পষ্ট যে সব কটি দরপ্রস্তাবই বানানো। মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও এইচ ইউ জামান ট্রেডিংয়ের স্বাক্ষরসহ যে দরপত্র দেওয়া হয়েছে, সেটিও মূল কাগজ নয়, ফটোকপি।

বাফুফে যদিও দাবি করেছে যে এই পুরো প্রক্রিয়ায় তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু ফিফার তদন্তে উঠে আসে যে তিনটি দরপত্র আসলে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে একই ধাঁচে লেখা এবং এর পেছনে একটিই প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিমানের টিকিট ক্রয়
২০১৯ সালের নভেম্বরে ফ্লাইট টিকিট বাবদ আল মারওয়া ইন্টারন্যাশনালকে প্রায় সোয়া ২১ লাখ টাকা দেয় বাফুফে। খাত হিসেবে দেখানো হয় জাতীয় দলের ওমান সফর। এ ক্ষেত্রে দরপ্রস্তাব দেয় আর মারওয়া, পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস।

মজার বিষয় হলো, এক্ষেত্রেও তিনটি দরপত্রেই ‘rout’ শব্দের বানান ভুলভাবে লেখা হয়েছিল। আর তিনটি দরপত্র একই ধাঁচে, একই তারিখে এবং একই ফন্টে লেখা হয়েছিল। পূরবী জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমানের টিকিট কেনায় দরপ্রস্তাব দেওয়ার কথা নয় বলে উল্লেখ করে কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপ। পূরবী ও মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, তারা দরপ্রস্তাব দেয়নি। বাফুফের সঙ্গে কোনো কাজও করেনি।

পরে ফিফার তদন্তে উঠে আসে যে এই দরপত্রগুলো আসলে জাল এবং শুধুমাত্র ফিফাকে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল।

ঘাস কাটার যন্ত্র ক্রয়
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রায় দেড় লাখ টাকা ঘাস কাটার যন্ত্র কেনে বাফুফে। দুটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়। একটি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার, আরেকটি শোভা এন্টারপ্রাইজ। কাজটা পায় বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর সোহাগ কার্যাদেশ দেওয়ার দুই দিন পর শারমিন এন্টারপ্রাইজ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দেয়।

এখানে পাওয়া অনিয়মের মধ্যে আছে বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নামের বানানে ভুল। শোভা এন্টারপ্রাইজ আর শারমিন এন্টারপ্রাইজের দরপ্রস্তাব দেখতে এক রকম। শারমিন এন্টারপ্রাইজে যোগাযোগ করলে তারা নিজেদের শোভা এন্টারপ্রাইজ হিসেবে পরিচয় দেয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

এ বিষয়ে উপসংহার হচ্ছে, সব দরপত্রই একই জায়গা থেকে করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

FAQ

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তির মৃত্যু হলে কি হবে ?

প্রকিউরমেন্টে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রধানত দুই ধরণের – (১) ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা (২) কোম্পানি। এর বাইরেও আরও বিভিন্ন ধরণ আছে, যেমনঃ

Read More »
question, puzzle, funny-6701943.jpg
FAQ

ই-জিপিতে টেন্ডার এর সব ফর্ম ঠিক মত ফিল আপ করার পরও ফাইনাল সাবমিশন করা যাচ্ছে না। সমাধান কি ?

ই-জিপিতে টেন্ডার এর সব ফর্ম ঠিক মত ফিল আপ করার পরও নিচে লেখা দেখাচ্ছে Please fill all mandatory documents এবং

Read More »
FAQ

সরকারি ক্রয়ে কেন কোটা থাকবে ?

সরকারি ক্রয় কোটা সিস্টেম থাকায় ঠিকাদাররা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর ধারা ৩১(৩) অনুযায়ি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে

Read More »
সমসাময়িক

দরপত্রে কার্যকর প্রতিযোগিতা …. ১টি কেস স্টাডি

যানজট এড়িয়ে চলাচলের জন্য বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে বিশেষায়িত লেনে চলাচলের জন্য ১৩৭টি বাস কেনার প্রক্রিয়া

Read More »
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
গ্রাহক হোন

শুধুমাত্র Registered ব্যবহারকারিগন-ই সব ফিচার দেখতে ও পড়তে পারবেন। এক বছরের জন্য Registration করা যাবে। Registration করতে এখানে ক্লিক করুন

 

** সীমিত সময়ের জন্য Discount চলছে।

ফ্রী রেজিস্ট্রেশন

“প্রকিউরমেন্ট বিডি news”, “সমসাময়িক”, “সূ-চর্চা”, “প্রশিক্ষণ” অথবা “ঠিকাদারী ফোরাম” ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে ২টি নিজস্ব Post প্রেরণ করে এক বছরের জন্য Free রেজিষ্ট্রেশন করুণ। Post পাঠানোর জন্য “যোগাযোগ” পাতা ব্যবহার করুণ।

সূচীঃ PPR-08

Scroll to Top